271663

ঘটা করে পালিত হয় বউ চুরির উৎসব, পরস্ত্রী নিয়ে পালানোই এখানে রীতি

পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে পালিত হয় বিভিন্ন রীতি। যার অনেক কিছুই আমাদের কাছে একেবারেই স্বাভাবিক নয়। আমাদের কাছে যা অস্বাভাবিক সেগুলোই বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ঘটা করে পালন হয়।

বিশেষ করে আফ্রিকার দেশগুলোতে যেসব উপাজাতিরা রয়েছে। তাদের মধ্যেই এমন উদ্ভটসব রীতিনীতি পালনের সংস্কৃতি। তেমনই এক উৎসব বউ চুরি। খানিকটা অবাক হলেও এটি সত্যি। এই চুরিতে নেই কোনো শাস্তি। কেউ আপনাকে অপরাধীর কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে বিচারও করবে না।

অন্যের বউ নিয়ে পালানোই এই উৎসবের উদ্দেশ্য

অন্যের বউ নিয়ে পালানোই এই উৎসবের উদ্দেশ্য

শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে পালন করে আসছে পশ্চিম আফ্রিকার দেশ নাইজারের যাযাবর পশুপালক উপজাতি ওডাআবে। যেখানে অন্যের বউকে চুরি করে থাকে পুরুষরা। তাই এই উৎসবের নাম ‘বউ চুরির উৎসব’। প্রতিবছর সেপ্টেম্বর মাস এলেই দেশটির বিভিন্ন মরুদ্যানে উৎসবটি পালিনের তোড়জোড় শুরু হয়ে যায়। টানা সাতদিন ধরে চলা এই উৎসব। উৎসবে অন্যের বউকে চুরি করার চেষ্টা করে পুরুষরা। এতে অংশ নেয় তাদের স্ত্রীরাও। পাশাপাশি চলে খাওয়া-দাওয়া ও নাচ গান। তবে উৎসবের দিনক্ষণ ও স্থান আগে থেকে ঠিক করা থাকে না। উৎসবের কিছুদিন আগে তা ঘোষণা করা হয়।

শত শত বছর ধরে সেপ্টেম্বর মাসে তারা পালন করে আসছে গেরেওল উৎসব। এই উৎসবের জন্য নারীরা একেবারে মুখিয়ে থাকেন। উৎসবে নিজেদের পছন্দমতো পুরুষ সঙ্গী বাছাই করে নেন তারা। এই উৎসবের সবচেয়ে আকর্ষণীয় অনুষ্ঠান হলো- ইয়াকে প্রতিযোগিতা। এটি হলো পুরুষের প্রজনন নৃত্য প্রতিযোগিতা। ময়ূর যেমন সঙ্গিনীকে আকৃষ্ট করতে প্রজন্ন নৃত্য করে তেমনি ওডাআবে উপজাতি পুরুষরাও নৃত্য পরিবেশন করে।

পুরুষেরা নিজের সৌন্দর্য প্রদর্শন করে এখানে

পুরুষেরা নিজের সৌন্দর্য প্রদর্শন করে এখানে

মূলত এই উৎসবের মাধ্যমে ওডাআবে সমাজের নারী-পুরুষরা একে অন্যের সঙ্গে সম্পর্ক ভাঙ্গার সুযোগ পান। বিভিন্ন ধর্মে এসব বিষয়ে আইনি ও সামাজিক জটিলতা থাকলেও ওই উপজাতির ক্ষেত্রে কোনো রাখঢাক নেই। এছাড়া ওডাআবে উপজাতির মেয়েরা বিয়ের আগে যার সঙ্গে ইচ্ছে সম্পর্কে যেতে পারে। আবার বিয়ের পরও তারা যত খুশি স্বামী রাখতে পারেন।

গোষ্ঠীপতি শাসিত ওই সমাজে মেয়েরা বিয়ের আগে যে কোনো পুরুষের সঙ্গে সম্পর্কে জড়াতে পারে। এমনকি বিয়ের পরেও রাখতে পারে একাধিক স্বামী। এটিই তাদের জন্য সমাজ স্বীকৃত ও স্বাভাবিক ব্যাপার। প্রাচীনকাল থেকেই এখানকার সমাজে অবাধ যৌনতার সুযোগ পান নারী পুরুষ সবাই। বিয়ের আগেই উপজাতি নারীরা যে কারো সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করতে পারেন। চাইলে সেই পুরুষকে বিয়ে  করতেও পারেন না চাইলে  অন্য কাউকে বিয়ে করতে পারবেন। এমনকি বিয়ের পরও যতখুশি স্বামী রাখতে পারবেন এখানকার নারীরা।

উৎসবের কয়েকমাস আগে থেকেই চলে তাদের প্রস্তুতি

উৎসবের কয়েকমাস আগে থেকেই চলে তাদের প্রস্তুতি

পশ্চিম আফ্রিকার নাইজার অঞ্চলে যাযাবর পশুপালক উপজাতি ওডাআবে বাস করে। এরা ছোট ছোট পরিবার নিয়ে এক একটি দল গঠন করে। তারপর প্রতিটি দলে বিভক্ত হয়ে সারাবছর মরুভূমির বিভিন্ন অঞ্চলে ঘুরে বেড়ায়। এরপর সেপ্টেম্বর মাস আসলে হাজার হাজার নারী-পুরুষ এক জায়গায় একত্রিত হয়ে পালন করে ‘বউ চুরি উৎসব’। এটা তাদের মধ্যে এক ধরনের প্রতিযোগিতাও।

উপজাতিটির নারী ও পুরুষ তাদের শারীরিক সৌন্দর্য্য নিয়ে খুবই গর্ববোধ করে। এমনকি উৎসবের কয়েকমাস আগে থেকেই পুরুষরা প্রতিযোগিতার জন্য নিজেদের তৈরি করা শুরু করে। নিজের সৌন্দর্য নিয়ে এই উপজাতির নারী ও পুরুষরা ভীষণ গর্বিত। তারা মনে করে, পৃথিবীর সবচেয়ে সুদর্শন পুরুষ তারাই। ওডাআবে পুরুষরা বিশ্বাস করে, তাদের সৌন্দর্য্য লুকিয়ে থাকে তাদের চোখের ধবধবে সাদাভাব, টিকোলো নাক আর ঝকঝকে সাদা দাঁতে। প্রতিযোগিতার আগে ঘণ্টার পর ঘণ্টা ধরে তারা তাদের চোখ, নাক আর দাঁতের সৌন্দর্য্য বাড়ানোর চেষ্টা করে।তাই রূপচর্চার জন্য তারা সবসময় একটি আয়নাও সঙ্গে রাখে।

নারীদের আকৃষ্ট করতে নৃত্য পরিবেশন করে পুরুষেরা

নারীদের আকৃষ্ট করতে নৃত্য পরিবেশন করে পুরুষেরা

লম্বা ও সুঠাম চেহারার ওডাআবে পুরুষেরা প্রতিযোগিতা শুরুর আগে প্রায় ৬ ঘণ্টা ধরে সাজগোজ করে। লাল মাটি দিয়ে তৈরি করা রঙ মুখে মেখে নেয়। নিজেদের তৈরি করা আইলাইনার লাগিয়ে নেয় চোখকে সাদা দেখানোর জন্য । ঠোঁটে লিপস্টিকও ব্যবহার করে দাঁতকে ঝকঝকে সাদা দেখাতে। রোমানদের মতো খাড়া নাকগুলোর তীক্ষ্ণতা আরো বাড়ানো হয় , নাকের ওপর সাদা কিংবা হলুদ রেখা টেনে নেয় তারা। মাথার চুলে বিনুনি করে , সেই বিনুনিতে পুঁতি ও কড়ি গাঁথা হয়। নিজেকে আরো লম্বা দেখাতে মাথার চুলে উটপাখির পালক গাঁধে পুরুষেরা ।

এমন যত্ন করে পুরুষেরা নিজেকে সাজায় , দেখে মনে হয় কোনো সুন্দরী প্রতিযোগিতায় নামতে যাচ্ছে তারা। এই সব কিছুর মূল উদ্দেশ্য থাকে পরস্ত্রীর নজর কাড়া । মজার ব্যাপার হল , সাজগোজের পর প্রত্যেক পুরুষকে একইরকম দেখতে লাগে । কালো , হলুদ ও সাদা রঙ মাখা একই ধরনের সরু মুখ আর বড় বড় চোখ। আলাদা করে বোঝার উপায়ই থাকে না যে, পুরুষটি কোন দলের । তাই ইয়াকে প্রতিযোগিতার ময়দানে পরস্পরকে টেক্কা মারতে হয় নৃত্যে ফুটিয়ে তোলা যৌন আবেদন দিয়ে।

নারীরাও তাদের পছন্দমতো পুরুষ সঙ্গী খুঁজে নেয়

নারীরাও তাদের পছন্দমতো পুরুষ সঙ্গী খুঁজে নেয়

এই প্রতিযোগিতায় বিচারকের ভূমিকা পালন করে উপজাতির সেরা তিন সুন্দরী। তাদের অবশ্যই বিবাহিতা হতে হবে। প্রতিযোগিতার শেষে তাদের চোখে সেরা পুরুষ বেছে নেয় বিচারকেরা। বিচারকদের রায়ে যৌন আবেদনের দিক থেকে সেরা তিন পুরুষ, সমবেত পরস্ত্রীদের মধ্যে থেকে বেছে নিতে পারে তার পছন্দ সই নারী । এমনকি বেছে নিতে পারে বিচারকদের মধ্যে থেকে কাউকেও। ওডাআবে সমাজ এই অবিশ্বাস্য  কাণ্ডটিকে বৈধ বলে স্বীকৃতি দেয়।

প্রস্তুতি সমাপ্ত হওয়ার পর শুরু হয় এই অদ্ভুত প্রতিযোগিতা। আশেপাশে ভীড় করে থাকা পরস্ত্রীদের উত্তেজনা তুঙ্গে ওঠে। বাদ্যযন্ত্রের উদ্দাম তালে তাল মিলিয়ে দলবেঁধে পুরুষেরা ইয়াকে নাচতে শুরু করে বৃত্তাকারে। নৃত্যরত অবস্থাতেই বিভিন্নরকমের যৌনভঙ্গি প্রদর্শন করে। ইয়াকে নৃত্যের মাধ্যমে প্রত্যেক ওডআবে পুরুষ মাঠের চারপাশে ভীড় করে থাকা পরস্ত্রীদের বোঝাতে চেষ্টা করে যৌনসঙ্গী হিসেবে সেই শ্রেয়। এই নৃত্যের সময় পুরুষরা ইচ্ছে করে তাদের দাঁত বের করে রাখে। যাতে তাদের অত্যন্ত আক্রমণাত্মক ও আগ্রাসী দেখায়।

পুরুষেরা নিজেদের সাজাতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন মাস ছয়েক আগে থেকেই

পুরুষেরা নিজেদের সাজাতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন মাস ছয়েক আগে থেকেই

ঘন্টা খানেকের মধ্যে শেষ হয় প্রতিযোগিতা। তিন বিজয়ী পুরুষ ভিড়ের মধ্যে থেকে বেছে নেয় তাদের পছন্দের নারীদের। কিন্তু তিনজন পুরুষ না হয় পছন্দের নারী পেলেন , কিন্তু বাকিরা! না বাকি প্রতিযোগীরা প্রতিযোগিতায় জিততে না পেরে একটুও হতাশ হন না। কারণ এই  প্রতিযোগিতার পরেই শুরু হয় আসল বউ চুরি উৎসব। প্রতিযোগিতা চলাকালীন নৃত্যরত ওডআবে পুরুষেরা তাদের চারপাশে ভিড় করে থাকা নারীদের দিকে অর্থপূর্ণ যৌন ইঙ্গিত করেন। পুরুষদের ইঙ্গিতে সবার অলক্ষে সাড়া দেন বিভিন্ন নারীরা। তাদের মধ্যে থেকে পছন্দের সঙ্গিনীকে নজরে রাখে ওডাআবে পুরুষেরা।

প্রতিযোগিতার শেষ হওয়ার পর , ভিড়ের সুযোগ নিয়ে পছন্দ করা পরস্ত্রীর কাঁধে টোকা মারে পুরুষ। সেই ডাকে সাড়া দেয় নারীও। এরপর পরপুরুষের সঙ্গে মেলায় হারিয়ে যায়। প্রতিযোগিতায় যোগ দেয়া সব পুরুষকেই একই রকম দেখতে লাগে বলে বউ চোর পুরুষ সহজে ধরা পড়ে না। এই উৎসবে কেউ যদি ধরা না পড়ে , সফলভাবে পরের বউকে চুরি করে নিতে পারে এবং তাহলে সেই ‘ বউ চোর ‘ পুরুষটি হবে নারীটির দ্বিতীয় স্বামী । একেবারে সমাজ স্বীকৃত স্বামী। বউ চুরি উৎসবের সুযোগে , দেখতে খারাপ স্বামীর সুন্দরী স্ত্রী বা দাম্পত্য জীবনে অসুখী দ্বীরা স্বামীকে নিৰ্দ্ধিধায় পাল্টে নেয়।

ঘটা করে পালন করা হয় এই উৎসব

ঘটা করে পালন করা হয় এই উৎসব

রাতের অন্ধকারে মরুভূমির বালিতে বা মরুদ্যানের ঝোপের ভেতর চলে নতুন জুটিদের উদ্দাম প্রেম। কেউ বাধা দেয় কেউ বিরক্ত করেনা । ভোর হওয়ার আগেই নতুন স্বামীতে তৃপ্ত নারীরা, নিজেদের স্বামী ও সংসার ফেলে পালিয়ে যায়। পরপুরুষদের হাত ধরে। নারীদের ফেলে যাওয়া ছেলেমেয়েদের লালন পালন করে বউয়ের বাবা, মা ও গোষ্ঠী। কিছুদিন মা চাপড়াবার পর বউ পালানোর শপথ নেয়, আগামী বছরের গেরেওল উৎসবে পরের বউকে চুরি করবেই করবে। তার বউ চুরির প্রতিশোধ সে নেবেই নেবে। তাই সেপ্টেম্বর মাস আসার অনেক আগে থেকেই বউ পালানোর ব্যস্ত হয়ে পড়ে রুপচর্চা আর ‘ ইয়াকে ‘ নৃত্য নিয়ে।

পাঠকের মতামত

Comments are closed.