270769

টাকার নোটের সচিত্র ইতিহাস

টাকা হল বাংলাদেশের মুদ্রা। বাংলাদেশের জন্ম ১৯৭১ সালে হলেও এর শুরুটা ছিল ১৯৪৭ সালে পূর্ব পাকিস্তান হিসেবে। তখন দেশে পাকিস্তান রুপির প্রচলন ছিল, যেটিকে কাগজে–কলমে টাকাও বলা হতো।

মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানিদের বিরুদ্ধে বাঙালি জাতীয়তাবাদীরা বেসরকারিভাবে পাকিস্তানি টাকার একপাশে ‘বাংলা দেশ’ এবং অপর পাশে ‘Bangla Desh’লেখা রাবার স্ট্যাম্প ব্যবহার করতেন।

১৯৭১ সালের ৮ জুন পাকিস্তান সরকার এই রাবার স্ট্যাম্পযুক্ত টাকাকে অবৈধ এবং মূল্যহীন ঘোষণা করে। এরপর ১৯৭৩ সালের ৩ মার্চ পর্যন্ত অবশ্য এই টাকা সারাদেশে চালুছিল। বাংলাদেশ ১৯৭১ সালের ১৬ই ডিসেম্বর স্বাধীনতা লাভের পর নতুন মুদ্রা প্রচলনের ঘোষণা দেয়া হয়।

সে সময় পাকিস্তানি ১, ৫ এবং ১০ রূপি ব্যবহৃত হয় যা পরের দিকে সরকার বাতিল করে দেয়। পরবর্তীতে ১৯৭২ সালের ৪ঠা মার্চ প্রথম নোট চালু হয়। প্রথমে ১, ৫, ১০ এবং ১০০ টাকার নোট ছাপা হয়। তবে চলুন বাংলাদেশ এখন পর্যন্ত যতগুলো নোট এবং কয়েন বাজারে ছাড়া হয়েছে তার সচিত্র ইতিহাস তুলে ধরা হল। আজ থাকছে প্রথম পর্ব-

 এক টাকা

বাংলাদেশ স্বাধীনতা লাভের পর কিছু দিন পাকিস্তানি ১ রুপি প্রচলিত ছিল।

বাংলাদেশ স্বাধীনতা লাভের পরের পাকিস্তানি ১ রুপি

বাংলাদেশ স্বাধীনতা লাভের পরের পাকিস্তানি ১ রুপি

পরবর্তীতে ১৯৭২ সালের ৪ঠা মার্চ বাংলাদেশী ১ টাকার নোট ইস্যু হয়। স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম ১ টাকার কাগজের মুদ্রা। এতে দেশের মানচিত্রের মধ্যে বিন্দুর মাধ্যমে দেখানো হয়েছে রাজধানী ঢাকার অবস্থান।

স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম ১ টাকার কাগজের মুদ্রা

স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম ১ টাকার কাগজের মুদ্রা

১৯৭৩ সালের ২রা মার্চ প্রথম বাংলাদেশের জাতীয় প্রতীক সম্বলিত ১ টাকার নোট ইস্যু হয়। যার সামনে মুঠো ভর্তি ধানের শীষ ও পিছনে শাপলা প্রতীক রয়েছে। এর রং ছিল কমলা ও নীল। এই নোটটি ডিসেম্বর ১৯৭৩ সাল পর্যন্ত চালু ছিল, বর্তমানে অপ্রচলিত এগুলো।

বাংলাদেশের জাতীয় প্রতীক সম্বলিত ১ টাকার নোট

বাংলাদেশের জাতীয় প্রতীক সম্বলিত ১ টাকার নোট

এরপর ১৯৭৩ সালের ১৮ ডিসেম্বর পুনরায় আরেকটি ১ টাকার নোট ইস্যু হয়। যার সামনে এক নারীর ধান ভানার চিত্র ও পেছনে মুঠো ভর্তি ধানের শীষ ও জাতীয় ফুল শাপলার ছবি রয়েছে। এর রং ছিল কমলা ও নীল। এই নোটটি ১৯৭৯ সাল পর্যন্ত চালু ছিল। তবে বর্তমানে অপ্রচলিত।

আরেকটি ১ টাকার নোট

আরেকটি ১ টাকার নোট

পরবর্তীতে ১৯৭৯ সালের ৩রা সেপ্টেম্বর “রয়েল বেঙ্গল টাইগার”-এর জলছাপ সম্বলিত ১ টাকার নোট ইস্যু হয়। এরপর আর কোনো ১ টাকার কাগুজে নোট ইস্যু হয়নি।

এই নোটের পর আর কোনো ১ টাকার নোট ইস্যু হয়নি

এই নোটের পর আর কোনো ১ টাকার নোট ইস্যু হয়নি

মাঝে ১৯৭৫ সালে “নিকেল-কপার” দ্বারা তৈরী ১ টাকার কয়েন ইস্যু হয়েছিল। এরপর ১৯৯৩ সালের ৯ই মে পুনরায় ১ টাকার কয়েন ইস্যু হয়। পরবর্তীতে এর আকৃতি এবং রঙ ৩ বার পরিবর্তন করা হয়।

বিভিন্ন সময়ে ইস্যুকৃত ১ টাকার কয়েন। 

বিভিন্ন সময়ে ইস্যুকৃত ১ টাকার কয়েন।

দুই টাকা 

১৯৮৮ সালের ২৯ই ডিসেম্বর দ্বিতীয় “সরকারী নোট” ২ টাকা ইস্যু হয়। এরপর আর কোন ২ টাকার কাগুজে নোট ইস্যু হয়নি।

২ টাকার নোট

২ টাকার নোট

পরবর্তীতে ২০০৪ সালে “স্টীল”-এর তৈরী ২ টাকার কয়েন ইস্যু হয়

২ টাকার কয়েন

২ টাকার কয়েন

পাঁচ টাকা

১৯৭২ সালের ৪ঠা মার্চ প্রথম ৫ টাকার নোট ইস্যু হয়। পরবর্তীতে ১৯৭৩ সালের ১লা সেপ্টেম্বর এবং ১৯৭৪ সালে “বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান”-এর ছবি সম্বলিত আরো দু’টি নোট ইস্যু হয়।

পাঁচ টাকার নোট

পাঁচ টাকার নোট

১৯৭৬ সালের ১১ই অক্টোবর “তারা মসজিদ”-এর ছবি সম্বলিত নোট ইস্যু হয়।১৯৭৮ সালের ২রা মে “তারা মসজিদ”-এর পরিবর্তে “কুসুম বাগ মসজিদের মেহরাব”-এর ছবি সম্বলিত নোট ইস্যু হয়।

তারা মসজিদ”- এর ছবি সম্বলিত পাঁচ টাকার নোট

তারা মসজিদ”- এর ছবি সম্বলিত পাঁচ টাকার নোট

২০০৬ সালের ৮ই অক্টোবর, ১৯৭৮ সালের নোটটি ইস্যু হয়। পার্থক্য হল নোটটিতে ৩মিমি চওড়া নিরাপত্তা সূতা ব্যবহার করা হয়। মাঝে ১৯৯৩ সালের ১লা অক্টোবর ৫ টাকার কয়েন ইস্যু হয়।

পাঁচ টাকার কয়েন

পাঁচ টাকার কয়েন

দেশের আরও নোটের সচিত্র ইতিহাস জানতে ডেইলি বাংলাদেশের সঙ্গেই থাকুন। পরবর্তী পর্বগুলোতে থাকছে দেশের বাকি নোটগুলোর ইতিহাস।

পাঠকের মতামত

Comments are closed.