263756

করোনা মহামারী: কী হবে স্টার্টআপগুলোর

একটি মহামারী বরাবরই বিশ্বজুড়ে যে পরিবর্তনটা এনে থাকে তা মূলত ‘কেওস ইন এভরিথিং’ থিওরি দ্বারা বুঝানো যেতে পারে। করোনা ভাইরাসের এই মহামারী পৃথিবীর ইতিহাসে যে পরিবর্তনগুলো আনবে সেটা বুঝতে গেলে প্রথমে আমাদেরকে বুঝতে হবে এই মহামারীর ঠিক আগের পরিস্থিতিটা কেমন ছিল।

প্রথমত, তৃতীয় শিল্প বিপ্লব বা ডিজিটাল বিপ্লবের লেজ ধরে ওয়ার্ল্ড ইকনোমিক ফোরামের পরবর্তী শিল্প বিপ্লব নিয়ে যে বিতর্কিত ভবিষ্যতবাণীটি দিয়েছে তা সৃজনশীল মাথাগুলোকে সৃষ্টিশীল ‘ইনভেনশন’-এর থেকে বেশী ব্যবসায়ীক বা সাধারণ মানুষের জীবনে ভ্যালু এড করে এমন ‘ইনোভেশন’-এর দিক ঝুঁকিয়ে দিয়েছে। যার ফলে বিশ্বজুড়ে স্টার্টআপ কালচার বা উদ্যোক্তাদের একটি ‘বাবল’ তৈরি করে ফেলেছে। ফলাফল, সারাবিশ্বেই এমনকি সিলিকন ভ্যালিতেও ফান্ড শুকিয়ে এসেছে। বড় বড় অনেক ইনভেস্টমেন্ট ফার্মগুলোর মতে অধিকাংশ স্টার্টআপেরই এই অর্থবছর শেষ করার মত ক্যাশ নেই। সুতরাং এ থেকেই আন্দাজ করা যায় যে, এই ‘স্টার্টআপ বা উদ্যোক্তাদের বাবল’ ফেটে যাওয়াটা শুধুমাত্র সময়ের অপেক্ষা এবং এটা যখনই হবে তখন বিশ্বজুড়ে ‘রেডি জব’ সরবরাহ করার যে যুদ্ধ কমবেশি সব দেশই করে আসছিল তাকে আরো কঠিন পরিস্থিতিতে নিয়ে যাবে। বর্তমান মহামারীর কারণে এই বাবলের বিস্ফোরণের সময়টা হয়তো যেখানে ২০২৫ বা ২০৩০ হবার কথা ছিল সেটা হয়তো ২০২১ এর মধ্যেই আমরা দেখতে পাবো।

করোনা মহামারী: কী হবে স্টার্টআপগুলোর

করোনা মহামারী: কী হবে স্টার্টআপগুলোর

দ্বিতীয়ত, একটি স্টার্টআপ এর যাত্রাটা এমনিতেই অনেক বেশি কঠিন এবং রিস্কি। যে কোনো মূহুর্তে ব্যবসা বন্ধ হয়ে যেতে পারে। এমনকি ক্যাশের পর্যাপ্ত যোগান না থাকলে চালানোই প্রায় অসম্ভব হয়ে পরে। পুরো বিশ্বজুড়েই একটি অর্থনৈতিক সংকট কমবেশি সকল বিশেষজ্ঞরাই আন্দাজ করেছেন যা ২০০৮ সালের থেকেও অনেক বড় এবং খারাপ পরিস্থিতিতে ফেলবে। তাছাড়া এই মহামারীর শেষটা কিন্তু আমরা কেউই এখনও সঠিকভাবে বলতে কিংবা চিন্তা করতে পারছি না। এই লক-ডাউন পরিস্থিতি কতদূর চলবে তাও ঠিক ভাবে বলা কঠিন। ই-কমার্স, গেমস, সোশ্যাল মিডিয়ার মত স্টার্টআপগুলো এখন একটা বুমিং পরিস্থিতি পার করছে। কিন্তু এগুলো, সংখ্যায় অনেক কম এবং আমাদের দেশে তা একেবারেই নগণ্য। তা ছাড়াও যেই ই-কমার্সগুলো এখন Demand এর ভিত্তিতে নতুন নিয়োগ এবং ম্যানপাওয়ারের ‘বিশৃঙ্খল’ পরিস্থিতি পার করছে, সবকিছু স্বাভাবিক হলে তারাও একই ‘বাবল’ বিস্ফোরণের মত সিচুয়েশন ফেস করবে।

বেশীরভাগ স্টার্টআপই সার্ভিস বা পণ্য দিতে পারছে না বলে বন্ধ হয়ে বসে আছে। যারা ঘুরে দাঁড়ানোর সুযোগ পাবে না এটাই বলা যেতে পারে। যা আবারও সেই একই বেকারত্ব সমস্যার মধ্যে ফেলবে পুরো বিশ্বকে।

বাংলাদেশের পরিস্থিতি কিছু ছোট ছোট কারণে একটু বেশীই খারাপ হতে যাচ্ছে। যেমন: ভিসিপিইএবি ইতোমধ্যে জানিয়েছে যে প্রায় ৩০০ স্টার্টআপ ৪৫০ কোটি টাকার ক্ষতির সম্মুখীন হতে চলেছে। কিন্তু সমস্যাটা আমাদের ‘বেসিক’ এ।

আমাদের জাতীয় ইকোসিস্টেম শক্ত নয়। আমরা খুচরা ভাবে ইকোসিস্টেমের অল্পকিছু ‘কম্পোনেন্ট’ নিয়ে মাত্র কাজ শুরু করেছি যেগুলো এমন পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য যথেষ্ট নয়। জাতীয় পর্যায়ে স্টার্টআপদের কোনো ডাটাবেজ বা মনিটরিং এর ব্যবস্থা নেই। যার ফলে, এমন অনেক স্টার্টআপই বিশেষকরে, প্রি-মার্কেট স্টেজে যারা ছিল তারা চিরকালের জন্য বন্ধ হয়ে যাবে এবং সেগুলোর নামও আমরা কখনও জানতে পারবো না।

ঘরে বসে অফিসের মিটিং কিংবা আলোচনা করে কখনই ব্যবসা চালানো সম্ভব হবে না। সবথেকে বড় সমস্যা হচ্ছে যে, উদ্যোক্তাদের জন্য ঘরে বসে দক্ষতে উন্নয়নের কোনো সুযোগ নেই। নেই উদ্যোক্তাদের কোনো জাতীয় পর্যায়ের তালিকাও। তাই সরকারিভাবে যদি কোনো প্রকার প্রণোদনা প্রদানের সুযোগ থেকেও থাকে তার সুবিধা কারা ভোগ করবে তা নিয়ে যথেষ্ট প্রশ্ন রয়েছে।

যদি আমরা শুরু থেকেই তত্ত্বীয়ভাবে ইকোসিস্টেমের সকল ‘কম্পোনেন্ট’ নিয়ে সমানভাবে সর্ব শক্তি দিয়ে এগিয়ে যেতে পারতাম, যদি শুরু থেকেই শুধুমাত্র স্রোতে গা ভাসাবার মত কালচারটি প্রমোট না করে, ‘জ্ঞান ভিত্তিক তরুণ সমাজ’ গড়বার উদ্যোগ নিয়ে আগে আমাদের মানুষগুলোকে প্রস্তুত করতে পারতাম, তাহলে বিশ্বের অনেক দেশের মতই এই ধরনের মহামারীর পরিস্থিতিতে পার্থক্য তৈরি করতে সক্ষমতা এমন কিছু স্টার্টআপ হয়তো আমরাও আমাদের দেশে দেখতে পেতাম যারা জাতীয় পর্যায়ে ইকোসিস্টেমটাকে ধরে রাখতে পারতো।

সম্ভবত এই সপ্তাহ থেকেই পুরো বিশ্বে কর্মী ছাটাই শুরু হয়ে যাবে। লক ডাউনের অর্থনৈতিক প্রভাব যে ২০০৮ এর থেকে অনেক বেশী বিচ্ছিরি হতে চলেছে তা বুঝতে দেরী নেই। কত কোটি মানুষ চাকুরী হারাতে চলেছে, পথে বসতে চলেছে, পরিবারের উপার্জনে ব্যর্থ হয়ে আত্মহত্যা করতে চলেছে তার ঠিক নেই।

আজ ত্রাণ সামগ্রী নিয়ে সবাই ব্যস্ত। কে চুরি করলো? কে কতগুলো দিল? কে দিতে গিয়ে কি ভুল করলো? এসব সমালোচনার অভাব নেই। আমার প্রশ্ন, কতদিন চালিয়ে যেতে পারবেন আপনারা এই ত্রাণ দেয়া নেয়া?

প্রযুক্তি নির্ভর বিশ্বের ক্যাপিটালিস্টরা ছাড়া মাস খানেকের মধ্যেই একটা সময় অর্থাভাবে কমবেশি সবাই পড়বো। ‘সরকার আছে, সব দোষ সরকারের, সব দায়িত্ব সরকারের’ এমন একটা মানসিকতা আমাদের সবারই আছে। অবশ্য সরকারি টেন্ডার বা সাপ্লাই এর কাজ এর সিকিভাগ পেলেই এসব সমালোচনা কিছু মানুষের টাইমলাইনে আর দেখা যায় না। সেসব কথা না হয় বাদ দিলাম। কিন্তু আসন্ন এই অর্থনৈতিক সংকট নিয়ে কি ভাবছেন? আপনার চাকুরী গেলে সেটা ফিরিয়ে দেবার দায়িত্বটা কিন্তু সরকারের না।

এমনকি ভাইরাসের সংক্রমণ বন্ধ হয়ে যাবার পরও আপনার এবং আপনার পরিবারের পেট চালানোটাও যদি সরকারকে করতে হয় তবে দেশ যে দেউলিয়া হয়ে যাবে সেই ভয়টাও থেকেই যায়। ফেসবুকে লিখার সময় নিজেদেরকে মন্ত্রী এমপি তথা সরকারের বস হিসেবে একমাত্র এই দেশের মানুষজনই ভাবে। তাদের কাছেই না হয় প্রশ্নটা করলাম, আসন্ন অর্থনৈতিক সংকট মোকাবিলায় আপনার মতে সমাধান কি?

সূত্র : ঢাকা টাইমস

পাঠকের মতামত

Comments are closed.