182118

কৃষ্ণচূড়ার দেশে সৌন্দর্য বর্ধন করবে বনসাই! ফেসবুকে বিস্ময়

অনির্বাণ বড়ুয়া: “মাননীয় মেয়র, গতকাল উত্তরা থেকে এয়ারপোর্ট রোড দিয়ে যেতে হাতের বাঁ দিকে দেখলাম বনসাই লাগানো, ছোট একটা অনুরোধ করতে চাইছি তা হলো, এই পথের দুইধারে কৃষ্ণচুড়া গাছ লাগিয়ে দিলে কেমন হবে ভেবে দেখবেন, বনসাইয়ের নিবিড় যত্ন দরকার হয় কৃষ্ণচূড়ার তা হয়না, এপ্রিল মে মাসে পথের দুইধারে লাল কমলা থোক থোক হয়ে ফুঁটে থাকবে, জাপানিদের চেরি দেখতে কত শত পর্যটক ছুটে যায়, আমাদের কৃষ্ণচূড়া দেখতেও কি আসবেনা তখন! ভেবে দেখবেন প্লিজ, ধন্যবাদ” কথাগুলো বিনু মাহবুবা নামে একজন ফেসবুক ব্যবহারকারীর।

বিমানবন্দর সড়কে ভিন দেশ আমদানিকৃত বনসাই স্থাপন দেখে এরকম অনুরোধ ও ক্ষোভে ভেসে গেছে ফেসবুক। প্রশ্ন উঠেছে বনসাই আমাদের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি ধারন করে কি না। ফেসবুক ব্যবহারকারীদের মত কৃষ্ণচূড়ার মতো গাছ থাকতে কেন লাগান হচ্ছে এই বামন গাছে? কেন কেড়ে নেওয়া হচ্ছে ছায়া?

আরিফ মাহমুদ লিখেছেন, “এস্তোনিয়ার মিঃ লুই কান ১৯৭৪ সালে মারা না গিয়ে জীবিত থাকলে আজকে ঢাকা শহরের বনসাই নামক বামুন বৃক্ষে ফাঁসি দিয়ে মারা যেতেন। পৃথিবীতে যত রকমের গাছ আছে তাদের মধ্যে যে বৃক্ষের প্রেমে লুই কান পাগল হয়েছিলেন-সেই গাছ হলো-বাংলার রক্তলাল কৃষ্ণচূড়া। সংসদ ভবনের সামনে মানিক মিয়া এ্যভিনিউর লাল কৃষ্ণচূড়া দেখলে লুই কানকে আজো মনে পড়ে। লেখক হুমায়ুন আহমেদের আশা ছিলো বাংলার প্রতি উঠোনে একটা কৃষ্নচূড়া গাছ থাকুক। আর ধান সবুজের পুরো বাংলাদেশ লাল কৃষ্ণচূড়া বুকে নিয়ে পুরো দেশটাই একটা লাল-সবুজ পতাকা হয়ে ওঠুক।”

সৌন্দর্য বর্ধনের এমন কাজকে তিনি কৌতুক করে বলেন, “ঢাকা শহরের সৌন্দর্য্য বর্ধনে বনসাই গাছ দেখলে সমস্ত চুল কেটে মাথার পেছনে টিকি রাখা জমিদার পোলার কথাই মনে পড়ে।”

বিষয়টি মনে কষ্ট দিয়েছে সকল শ্রেণিপেশার মানুষকে। শিক্ষক ও গবেষক আলি রিয়াজ নিজের ফেসবুকে বিষয়টি নিয়ে লিখেছেন। তিনি লিখেন, “ঢাকার বিমান বন্দরের রাস্তার ধারে বনসাই গাছ লাগানো হয়েছে এই খবরে আমি বিস্মিত হইনি। আমার-আপনার কাছে-ধারে, আমাদের চারিদিকে, সমাজের স্তরে স্তরে যে বনসাই সেগুলো আমাদের চোখে পড়ে না, ফলে চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখানোর ব্যবস্থা হয়েছে – তাতেও যদি নাগরিকদের সম্বিত ফেরে। কারা বনসাই চিনতে পারছেন না? মানুষের ক্ষুদ্রতা দেখতে হলে কেবল কথা শুনলেই হবে, আর কিছু লাগবে না। কী বলা হচ্ছে, কী ভাষায় বলা হচ্ছে তা যেমন আপনাকে বনসাই চিনিয়ে দেবে তেমনি চিনিয়ে দেবে কী বলা হচ্ছে না তাও। আর যদি কার্যকলাপ অনুসরণ করেন তবে তো কথাই নেই। কখনো কখনো মনে হয় মানুষদের মধ্যে বনসাই হবার এক প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে। বিনয়ে নয়, স্বার্থের তাগিদে; অনুপার্জিত বিত্তের জন্যে, অতিসামান্য কিছু প্রাপ্তির জন্যে। এই সমাজে চোখের সামনে ‘আসল বনসাই’ না থাকাটাই তো অবাস্তব।”

ছাত্র ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি বাকী বিল্লাহর বিষয়টি অবিশ্বাস্য মনে হচ্ছে। তিনি এক স্ট্যাটাসে লিখেন, “সত্যি সত্যিই আমি বিশ্বাস করি না যে ঢাকার রাস্তার ডিভাইডারে চীন থেকে আমদানি করা বনসাই লাগানো হয়েছে। এই যে পুরো ধানমণ্ডি অঞ্চলে রোড ডিভাইডার বাগানবিলাসে ছেয়ে আছে-কী যে সুন্দর লাগে। বাগানবিলাস লাগাতে কোনো খরচ নেই, একখানা ডাল লাগিয়ে দিলেই হলো। আমি কোনোমতেই মানছি না যে কারো মাথায় আসতে পারে- কোটি কোটি টাকা খরচ করে রোড ডিভাইডারে ন্যাড়া বনসাই বসালে সৌন্দর্য বর্ধন হয়। আমার বিশ্বাস বনসাইয়ের ব্যাপারটা পুরোটাই গুজব এবং যেসব ছবিগুলো ফেসবুকে দেখা যাচ্ছে, তা আগাগোড়াই ফটোশপ।”

বেশ কয়েকদিন থেকে সৌন্দর্য বর্ধনের নামে বিমানবন্দর সড়কের সব গাছ কেটে ফেলা হয়। সেখানে লাগানো হচ্ছে ব্যায়বহুল বনসাই। বিষয়টি নিয়ে লিখেছেন রাজু নুরুল। তিনি লিখেন, “কয়েকদিন আগে খুব দু:খ নিয়ে লিখেছিলাম, এয়ারপোর্ট রোডের সমস্ত গাছ কেটে ফেলা হচ্ছে। লিখেছিলাম, এই যে সামনে বর্ষা আসছে, এয়ারপোর্ট রোডের দৃষ্টিনন্দন সৌন্দর্য আর দেখা হবে না। ভেবেছিলাম, এই গাছগুলো কেটে ফেলা হচ্ছে রাস্তা প্রশস্ত করার প্রয়োজনে। মেনেও নিয়েছিলাম। সারাক্ষণইই এই শহরের রাস্তায় জ্যাম লেগেই থাকে। প্রশস্ত করলে যদি খানিকটা মুক্তি মেলে!

কিন্তু আসল ঘটনা অন্য। এসব গাছ কেটে ফেলা হয়েছে রাস্তা প্রশস্ত করার জন্যে নয়; বরং দেশীয় গাছের স্থলে বিদেশী বনসাই লাগাবার জন্যে। কি ভয়ানক কথা!

এয়ারপোর্ট রোডের দুপাশে ঝাঁকে ঝাঁকে কৃষ্ণচূড়া, রাধাচূড়া, নাম না জানা আরও কত লাল নীল ফুল ফুটে থাকতো। সবই আমাদের দেশীয় ফুল। নানা ঋতুতে রাস্তাটার রঙ নানা রকম ধারণ করতো!

তার পরিবর্তে এখন লাখ টাকার বিদেশী বনসাই? বাংলাদেশী সংস্কৃতির সাথে যার কোন যোগ নাই? নিজেদের সংস্কৃতি বাদ দিয়ে বিদেশী বনসাই দিয়ে বিদেশীদেরকে খুশি করার এই চিন্তা কার মাথা থেকে এলো?

এই শহরটা মরা শহর। এখানে সবুজ নেই। প্রাণ ভরে দম নেবার উপায় নেই। যে কয়েকটা গাছ ছিল, সেসবও কেটে ফেলা হচ্ছে? তার জায়গায় স্থান করে নিছে পাতাহীন, ছায়াহীন বনসাই?”

পাঠকের মতামত

Comments are closed.