176345

যত গরম তত বিক্রি

“ও ভাই, ও মামা, ও খালারা আসেন, এই যে এখানে ঠান্ডা লেুবর শরবত আছে, এই গরমে ক্লান্তি দূর করতে লেবুর শরবত খাইয়্যা যান, বেলের শরবত খাইয়্যা যান। এই তাজা লেবুর শরবত খাইলে প্রাণ ঠান্ডা অইয়া যাইবো, বেলের শরবত খাইলে ক্লান্তি দূর হইবো” ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বহিঃর্বিভাগ গেটের অদূরে এমনিভাবে চিৎকার করে ডাকছিলেন এক মধ্যবয়সী শরবত বিক্রেতা। শরবত বিক্রেতা খোকনের এমন ডাকে অল্প সময়ের মধ্যেই চারিদিকে ভীড় জমে যায়। কেউ একজন বেলের শরবতের দাম ১০ টাকা দিতে চাইলে , হাতের ইশারায় রাজি হয়ে শরবতের গ্লাসটা ক্রেতার দিকে বাড়িয়ে দিলো মধ্যবয়সী লোকটা।


খোকন আবার ওঠে, “বেলের শরবত ১৫ টাকা, লেবুর শরবত ৫ টাকা গ্লাস।

মধ্যবয়সী খোকনের কথা শুনে অনেকেই পিছুটান দেয়, আবার দাম-দরে না মিললে কেউ কেউ কেউ চলেও যায়। কিন্তু পরের মুহূর্তেই ভ্যানওয়ালা, রিকশাওয়ালা, ব্যবসায়ী, চাকরিজীবি, গৃহিণী, পথচারী, রোগীর লোকসহ বিভিন্ন পেশার মানুষ শরবতের দোকানে র সামনে ভিড় জমায় এবং লেবুর শরবত/ বেলের শরবত কিনতে শুরু করেন।

কেউ এক গ্লাস কেউবা দুই গ্লাস কেউবা আবার কয়েক গ্লাস বোতলে নিয়ে যাচ্ছেন শরবত।

খোকন বলেন, এখন আর শরবত বিক্রি নিয়ে সারাদিন টেনশন করতে হয় না। এখন গরমের সময় তাই অল্প সময়ের মধ্যেই বেশী বিক্রি হয়। গরমের সময়ে মাল বিক্রি নিয়ে চিন্তা করতে হয় না। যত বেশি গরম পড়ছে, তত বেশি বেচা-বিক্রি হচ্ছে।

খোকনের শরবতের দোকানে ভিড় দেখা গেলেও একই চিত্র পুরো রাজধানী জুড়েই। শুধু লেবু বা বেলের শরবত নয়, রোদের তাপদাহে অতিষ্ঠ নগরবাসীর কাছে আখের রস, ডাব, লেবু, বেল, তরমুজ, আনারস, বেদানা, কমলা, মাল্টাসহ বিভিন্ন রসালো ফলের কদর আগের তুলনায় বহুলাংশে বেড়ে গেছে। রাজধানীর মিরপুর, শাহাবাগ, নিউমার্কেট, পন্টন, মহাখালী, বাড্ডা, উত্তরা, বিমানবন্দর, কুড়িল, তেজগাও সহ বিভিন্ন এলাকার ঘুরে ঘুরে দেখা যায়- বড় ফলের দোকান থেকে ফুটপাতসহ সর্বত্রই দেদারছে বিক্রি হচ্ছে এসব রসালো ফল, আখের রস এবং বিভিন্ন ফলের জুস ।

রাজধানী বিভিন্ন এলাকায় ছোট বড় তরমুজ বাজারভেদে সর্বনিম্ন ১৩০ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ৪০০ টাকা, প্রতি হালি আনারস ৮০ টাকা থেকে ১৮০ টাকা, কমলার হালি ৪০ টাকা থেকে ১২০ টাকা, সাইজ হিসাবে ডাবের মূল্য ৩০ থেকে ৫০ টাকা ও প্রতি হালি লেবু ১২ টাকা থেকে ৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

অধিকাংশ সাধারণ মানুষের ভরসা ফুটপাতের দোকানে ফলের ছোট্ট টুকরাতে। লাইন ধরে লেবু, আখ, পেঁপে, বেলের শরবত খেয়ে ক্ষণিকের জন্য হলেও তৃপ্তির ঢেকুর তোলেন। এছাড়া টাকা-পয়সাওয়ালা বিত্তবানরা বাজার থেকে ফল কিনে, বাসায় নিয়ে মেশিনে ফলের জুস তৈরি করে খেয়ে থাকেন।

অফিসের কাজ শেষে বাসায় ফেরার পথে মধ্যবাড্ডা থেকে লেবু কিনছিলেন পোস্ট অফিস রোডের বাসিন্দা হাবিবুর রহমান । প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, খুব গরম পড়ছে, এই গরমে মাথাটা ভন ভন করে ঘুরছে,বাসায় গিয়ে প্রথমে দুই গ্লাস লেবুর শরবত খাবো। তাই লেবু কিনেছি।

ঢাকা মেডিকেল কলেজের সামনে বেলের শরবত খাচ্ছিলেন রিকশাচালক জাহেদ আলী। পরপর দুই গ্লাস খাওয়ার পরে হাসি মুখে বলেন, গরমে প্যাসেঞ্জার লইয়া একটা ক্ষেপ মারলেই বুকটার ভিতরে ধড়ফড় শুরু হয়ে যায়। মুখ শুকিয়ে যায়। মনে হয় জিহ্বাটা যেন বাইর অইয়া যাইতাছে। তাই বেলের শরবত খাইয়া একটু শক্তি বাড়াইতাছি। যাতে আরামে রিক্সা চালাইতে পারি।

চাহিদার বিবেচনায় দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে এসব রসালো ফল আনা হচ্ছে বলে জানান ফল ব্যবসায়ীরা। রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে উঠেছে গরমের রসালো ফল তরমুজ। রাজধানীর আনাচে কানাছে বিভিন্ন দোকানে বিক্রি হচ্ছে এই ফল। সুস্বাদু রসালো এই ফলের স্বাদ পেতে অনেকেই এসব দোকানে ভিড় জমাচ্ছেন।

গুলশানের তরমুজ বিক্রেতা মনির বলেন, প্রচণ্ড গরমের কারণে তরমুজের চাহিদা বেড়েছে কয়েকগুণ। বিক্রি হচ্ছে বেশ ভালো । এভাবে গরম থাকলে তরমুজের চাহিদা আরও বাড়বে। এখন ১০০ টাকার নিচে তরমুজ নেই। বড় তরমুজ ২০০ থেকে ৩৫০ টাকায় পর্যন্ত বিক্রি করছি।

স্বাভাবিকের তুলনায় তরমুজের দাম অনেক বেশি বলে অভিযোগ করে চন্দ্রা নামে একজন ক্রেতা জানান, তুলনা মূলকভাবে তরমুজের দাম বেশি। ১৯০ টাকায় একটি তরমুজ কিনেছি। আকারে খুব বেশি বড় বলা যাবে না। সে তুলনায় দামটা বেশি।
এমন অভিযোগ স্বীকার করে মনির বলেন, আসলে বর্তমানে তরমুজের দাম বেশি। উচ্চ পাইকারি মূল্য এবং বহন খরচসহ অন্যান্য খরচের কারণেই বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে।

চৈত্রের প্রথম সপ্তাহের শুরু থেকেই রাজধানীসহ সারাদেশে বয়ে চলছে তীব্র তাপদাহ। আবহাওয়া অধিদফতরের তথ্যানুসারে, এ তাপদাহ আরো কয়েকদিনে বাড়তে পারে।
এদিকে, দিনভর কাঠফাঁটা রোদ ও অসহনীয় গরমে নগরীর প্রতিটি দোকানে নানা মূল্যের অভিজাত শ্রেণির বাহারী আইসক্রিমসহ ঠাণ্ডা পানীয় বিক্রির ধুম পড়ছে। একটু খানি স্বস্তি পেতে নিজের সাধ্যমত মূল্য দিয়ে ঠাণ্ডা পানীয় পান করছেন নগরবাসী।

কুড়িল বিশ্বরোডের আখের রস বিক্রেতা হাসান, মহাখলীর লেবু বিক্রেতা আমির, শান্তি নগরের বেল বিক্রেতা হানিফ, মৌচাকের ফল বিক্রেতা সাইদ, ডাব বিক্রেতা হারুন খলিফা এবং মগবাজারের ফলের রস বিক্রেতা শাজাহানের সঙ্গে কথা বললে জানা যায়- যত বেশী গরম বাড়ছে, তত বেশী বিক্রিও বাড়ছে তাদের।

পাঠকের মতামত

Comments are closed.