175928

ভারত-ফিলিস্তিন সম্পর্কের সুরে ভাটা?

সুলতানা সাকি: [আল জাজিরায় প্রকাশিত মায়া প্রভুর প্রতিবেদন থেকে অনুলিখন করেছেন সুলতানা সাকি]
‘ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট প্রয়াত প্রেসিডেন্ট ইয়াসির আরাফাত ও ভারতের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী ছিলেন ভাই-বোনের মতো। ভারত-ফিলিস্তিন সম্পর্কেও এর গভীর ছাপ ছিল। ভারত বেশ জোরালো ভাবেই ফিলিস্তিনের প্রতি সমর্থন দিয়ে আসছিল। তবে গত কয়েক বছরে তা কমে আসছে।’ দিল্লির জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়া (জেএমআই) বিশ্ববিদ্যালয়ে শান্তি ও সংঘর্ষ বিষয়ে অধ্যয়নরত ফিলিস্তিনি শিক্ষার্থী মাফাজ আহমেদ ইউসুফ (২৭) এভাবেই ভারত-ফিলিস্তিন সম্পর্ক নিয়ে তার পর্যবেক্ষণের কথা জানান। ইসরায়েলের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক দিন দিন যত ঘনিষ্ঠ হচ্ছে, ফিলিস্তিনিদের মধ্যে উদ্বেগ ততটা বাড়ছে বলেও মনে করেন মাফাজ।

ফিলিস্তিনের প্রতি ভারতের সহমর্মিতার উজ্জ¦ল নিদর্শন বহন করছে জামিয়া মিলিয়া বিশ্ববিদ্যালয় খোদ। ফিলিস্তিনি বংশোদ্ভুত মার্কিন প-িত এডওয়ার্ড সাইদ হল ও ইয়াসির আরাফাত হল নামের দুটি অডিটরিয়াম আছে সেখানে। ২০১৩ সালে গাজা থেকে এই বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে আসেন মাফাজ। তিনি বলেন, ‘অধিকাংশ ভারতীয়র কাছে ফিলিস্তিন মানেই ইয়াসির আরাফাত (২০০৪ সালে মারা গেছেন)। এখন কেউ আব্বাসকে (ফিলিস্তিনের বর্তমান প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস) আরাফাতের মতো চেনে না। আমার মনে হয় ভারতীয় সংবাদ মাধ্যমগুলো এসব বিষয়ে (ফিলিস্তিন ইস্যুতে) আগের মতো পাত্তা দেয় না।’ ‘৭০ ও ‘৮০ এর দশকে ভারতের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে চার থেকে পাচ হাজারের মতো ফিলিস্তিনি শিক্ষার্থী লেখাপড়া করতো। তবে এখন এই সংখ্যা কয়েকশতে নেমে এসেছে বলে ফিলিস্তিনি শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন।

ইয়াসির আরাফাত ১৯৮২ সালে ভারত সফর করেন। ভারত ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতিদানকারী প্রথম অ-আরব দেশ। ফিলিস্তিনের অভিবাসীদের প্রতি একাত্মতা প্রকাশ করে সেই সময় দুই দেশের পতাকা চিহ্নিত ডাকটিকিটও ছাড়া হয়। ইসরায়েলকে ‘সা¤্রাজ্যবাদী’ শক্তি হিসেবে উল্লেখ কওে ভারত দেশটির সঙ্গে সম্পর্ক এড়িয়ে যায়। ভারতের ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের সঙ্গে ফিলিস্তিনের ইসরায়েলি আগ্রাসনবিরোধী আন্দোলনের মিল খুজে পায় ভারত। তবে সময়ের ব্যবধানে বিশ্বব্যবস্থারও পরিবর্তন ঘটেছে। তার সূত্র ধরে ভারত-ইসরায়েল সম্পর্কেও ঘনিষ্ঠতার আমেজ তৈরি হয়েছে।

২০১৩ সালে ভারত ছিল ইসরায়েলি অস্ত্রের প্রধান ক্রেতা। আর বর্তমানে একটি হিন্দু জাতীয়তাবাদী দলের নেতৃত্বে ভারত-ইসিরায়েল সম্পর্ক র্আও কাছাকাছি চলে এসেছে। আগামী ২৫ জুলাই ভারত-ইসরায়েল দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কেও ২৫ বছর পূর্তি হচ্ছে। আর এ উপলক্ষে ভারতীয় কোনো সরকারপ্রধান হিসেবে প্রথমবারের মতো ইসরায়েল সফরের পরিকল্পনা রয়েছে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর। তবে ওই সফরে তিনি ফিলিস্তিনের দিকে যাবেন না বলেও ঠিক করা হয়েছে।

ভারতে নিযুুক্ত ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রদূত আদনান আবু আলহাইজা অবশ্য ইতিবাচক ধারণা প্রকাশ করেন। তিনি ভারত-ফিলিস্তিন সম্পর্ককে ’অপরিবর্তিত’ ও ’নিটোল’ বলে উল্লেখ করেন। ২০১৫ সালে ইসরায়েল ও ফিলিস্তিন উভয় দেশেই ভারতের রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জীর সফর, ফিলিস্তিন ও ভারতের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে বিনিময় কার্যক্রম, ফিলিস্তিনের প্রতি ভারতের সহায়তা-অনুদানগুলো দুই দেশের ‘সুসম্পর্কের নিদর্শন’ প্রকাশ করে বলে উল্লেখ করেন তিনি।

আলহাইজা বলেন, ’ভারত-ইসরায়েল সম্পর্ক একটি দ্বিপক্ষীয় বিষয় এবং ভারত-ফিলিস্তিন সম্পর্কের ওপর এর কোনো প্রভাব পড়েনি।’

পাঠকের মতামত

Comments are closed.