বোরকায় অনীহা ইউরোপে
নূসরাত জাহান: ইউরোপে যে কোনো অফিস কর্তৃপক্ষ কর্মস্থলে তাদের নারী কর্মীদের বোরকা পড়ো বন্ধ করতে পারবে। এতে কারো প্রতি অন্যায় করা হচ্ছে, বৈষম্যমূলক আচরণ করা হচ্ছে তা মনে করছেন অনেকে। খোদ ইউরোটীয় ইউনিয়নের (ইইউ)শীর্ষ আদালতে এ রায় দিয়েছিলেন। তবে আদালতের এ রায়ের কারণে মুসলিম নারীদের অধিকার লঙ্ঘন করা হচ্ছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
ইউরোপের অনেক দেশেই বোরকা, হিজাব বা নেকাব পরা নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। অস্ট্রিয়া ও জার্মানির ব্রাভিয়ায় সম্প্রতি বোরকা পরা নিষিদ্ধ করেছে। এরপরই ইইউ-এর আদালত এমন রায় দেওয়ায় বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠনের বিরুদ্ধে মুখ খুলেছে। এই রায়কে হতাশাজনক বলে অভিহিত করেছে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল।
আদালতের বক্তব্য, বিশেষ কোনো ধর্ম, দর্শন বা রাজনৈতিক মতের প্রতীক বলে মনে করা হয় এমন পোশাক পরা নিষেধাজ্ঞা জারি করলে সেটাকে বৈষম্য বলা যাবে না। তবে সেটা ওই নির্দিষ্ট সংস্থার পোশাকবিধিতে থাকতে হবে। ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সব কর্মীর জন্যই তা কার্যকর হতে হবে।
২০০৬ সালের একটি মামলা এই রায়ের পেছনে কাজ করেছে। বেলজিয়ামের একটি নিরাপত্তা সংস্থা জিফোরএস অফিসে কাজ করতেন সামিরা আচবিতা নামে এক মুসলিম তরুণী। চাকরির শুরুতে দিনি হিজাব পরতেন না। তিনবছর বাদে ২০০৬ সালে তিনি হিজাব পরে অফিসে আসার অনুমতি চান। তবে জিফোরএস কর্তৃপক্ষ সামিরার আবেদন নাকচ করে দেন। পরে ওই তরুণী আদালতের দারস্থ হন। ওই মামলাটি ইইউ আদালতে হস্তান্ত করা হয়।
সেই মামলার রায়ে ইইউ আদালত জানিয়েছেন, ওই তরুণী যখন কাজের যোগ দিয়েছিলেন তখন থেকেই ধর্মীয় পোশাকে অলিখিত নিষেধাজ্ঞা ছিল। কিছু দিনের মধ্যেই সেই পোশাকবিধির সংস্কার করে ধর্মীয় পোশাক নিষিদ্ধ করে সংস্থাটি। ফলে এই সিদ্ধান্তকে কোনোভাবেই বৈষম্যমূলক বলা যায় না।
এই মামলার রায় দেওয়ার সময় ২০০৮ সালের আরেকটি মামলার কথা বলেন আদালত। যেখানে এক ক্রেতা আপত্তি তোলায় একজন ফরাসি ইঞ্জিনিয়ারকে বোরকা পরে আসতে নিষেধ করেছিল ওই অফিস। ২০০৮ সালে ওই নারী যখন চাকরি নিয়েছিলেন তখন পোশাকের ব্যাপারে তাদের কোনও নিয়ম ছিল না। তারপরও তাকে নিয়োগের সময় ওই অফিস জানিয়েছিল, তার বোরকা পরা নিয়ে ক্লায়েন্টরা আপত্তি তুলতে পারেন। তখন তাকে এটা ছাড়তে হবে। এরপর ওই নারী ইঞ্জিনিয়ারও অভিযোগ করেন আদালতে।
সেই ঘটনা টেনেও ইইউ আদালত বলেছেন, সামিরার কর্মক্ষেত্রে আগে কোনো পোশাকবিধি ছিল না। তবে শুধু একজন ক্লায়েন্টের আপত্তি নিয়ে বোরকা পরা নিয়ে আপত্তি করার বিষয়টি বিচার্য বিষয়। সূত্র: গার্ডিয়ান।