174997

রোমানদের এ বিষয়গুলো জানলে গা গুলাবেই

আজমল হোসেনঃ প্রাচীন রোম নামটি শুনলেই আমাদের কল্পনায় একটি পৌরাণিক স্থানের ছবি। ভেসে ওঠে গ্ল্যাডিয়েটর এবং বেন-হুরের ভূমি রোম। যেখানে সোনার বর্ম পরে পুরুষরা রথে চেপে যুদ্ধে যেত আর সম্রাটরা তাদের আসনে হেলান দিয়ে আঙ্গুর খেতেন।
তবে রোমের আসল চিত্রটা ফ্যাকাশে ছিল। আধুনিক স্বাস্থ্যবিজ্ঞান ও চিকিৎসাব্যবস্থার আগে তৎকালীন রোমের দৈনন্দিন জীবন খুবই দুর্বিষহ ছিল। সেসময় রোমানরা যা করতো তা জানলে আপনার গা গুলিয়ে উঠবেই।

১। মূত্র দিয়ে মুখ ধোয়া
প্রাচীন রোমে খুব জমজমাট একটি ব্যবসা ছিল মূত্র ব্যবসা, এজন্য সেসময় সরকার যেখানে মূত্র বেচা কেনা হতো সেসব স্থানে বিশেষ করের ব্যবস্থা করে। সেখানে এমন কিছু লোক ছিলেন যারা তাদের পুরোটা জীবন ব্যয় করেছেন মূত্র সংগ্রহের কাজে। অনেকে মানুষের বাসায় বাসায় একটি বড় ড্রাম নিয়ে যেতেন আর সবাইকে অনুরোধ করতেন তারা যেন এটিতে মূত্র ত্যাগ করেন।
আপনি ভাবতেও পারবেন না তারা এই মূত্র দিয়ে কি করতো। যেমন ধরুন, মূত্র দিয়ে কাপড় ধোয়ার কাজ করত। একটি বড় পাত্রে মূত্র নিয়ে তাতে কাপড় ভিজিয়ে একজন অভাবী মানুষকে দিয়ে সেই কাপড় ধোয়ানো হতো।
তবে মূত্র দিয়ে নিজের দাঁত পরিষ্কার করার কাছে এটি কিছুই না। অনেক স্থানে মানুষ মাউথওয়াশের মতো মূত্র ব্যবহার করত। তারা দাবী করত এতে নাকি তাদের দাঁত ঝকঝকে হয়। এমনকি একটি রোমান কবিতাও রয়েছে যেখানে কবি তার শত্রুর ঝঝকে দাঁত দেখে ব্যঙ্গ করে বলেছেন, “তোমার ঝকঝকে দাঁত দেখে বোঝা যাচ্ছে যে তুমি মূত্রে পরিপূর্ণ।”

২। একই টয়লেট স্পঞ্জ ব্যবহার
রোমান সভ্যতা তাদের উন্নত পানিব্যবস্থার জন্য প্রশংশিত। তাদের শহর এবং জনসাধারনের জন্য যে টয়লেটগুলো ছিল সেগুলোতে পয়নিষ্কাশন ব্যবস্থা খুব ভালো ছিলো। তবে তারা সেসব বহু শতাব্দী ধরে প্রচার করেননি। সেটি একটি উন্নত ব্যবস্থার জন্য দুঃখজনক হলেও রোমান টয়লেট ব্যবহার না করার পিছনে যুক্তিসঙ্গত কিছু কারণ রয়েছে।
পাবলিক টয়লেট গুলো ছিলো খুব বিরক্তিকর, প্রত্নতত্ববিদগণ মরে করেন, সেই টয়লেটগুলো সহজে পরিষ্কার করা হতো না, কারণ তারা সেখানে নানান পরজীবীর সন্ধান পেয়েছেন। যখন কোন রোমান টয়লেটে যেতে সাথে উকুন বাছার জন্য বিশেষ চিরুনি নিয়ে যেতেন।
সবচেয়ে ভয়াবহ যে ব্যাপারটি হচ্ছে রোমান পাবলিক টয়লেটে টয়লেট শেষে পরিষ্কার হওয়ার জন্য যে স্পঞ্জ ব্যবহার করা হতো সেটি কখনো পরিষ্কার করা হতো না, আর সেই স্পঞ্জ দিয়ে সবাই পরিষ্কার হতো।

৩। টয়লেট ও ভাগ্যদেবী
যদি আপনি কখনো রোমান টয়লেটে প্রবেশ করতেন তবে আপনাকে আপনার জীবন হাতে নিয়ে তা করতে হতো।
কেনোনা আপনি যখন প্রাকৃতিক কাজ করছেন সেসময় পয়ঃনালায় বাসকারী কোন প্রাণী উঠে এসে আপনাকে কামড়ে দেয়ার আশঙ্কা ছিল প্রচুর, আর এতে আপনি মারাও যেতে পারতেন। আবার পয়ঃনালাতে যে গ্যাস জমা হতো তাতে আগুন ধরে তা বিস্ফোরিত হওয়ার আশঙ্কাও ছিল প্রবল।
মানুষের টয়লেটের ভীতি এতটাই ছিলো যে টয়লেটে গিয়ে তারা যেনো বেঁচে থাকে সে জন্য জাদুচর্চাও করতো। অনেকে টয়লেটে ভাগ্যদেবীর মূর্তি নিয়ে যেতেন তাদের ধারণা ছিলো যদি কোন বিপদ হয় তবে ভাগ্যদেবী তাদের রক্ষা করবেন।

৪। ওষুধ হিসেবে গ্ল্যাডিয়েটরের রক্ত
রোমান ওষুধেও ছিল খামখেয়ালীপনার ছাপ। অনেক রোমান লেখক দাবি করেছেন যে অনেকে মৃত গ্ল্যাডিয়েটর যোদ্ধার লাশে কাছে জড়ো হয়ে তার রক্ত সংগ্রহ করতেন, এবং পরবর্তীতে তা ওষুধ বলে বিক্রি করতেন। অনেকে বিশ্বাস করতেন গ্ল্যাডিয়েটরের রক্ত মৃগীরোগ সারাতে সক্ষম এবং তারা সেই রক্ত পথ্য হিসেবে পানও করতো। এখানেই শেষ নয়, অনেকে মৃত গ্ল্যাডিয়েটরের যকৃৎ বের করে তা কাঁচা খেতো।
যখন রোমে গ্ল্যাডিয়েটোরিয়াল যুদ্ধ নিষিদ্ধ করা হলো তখন এটি আরো জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিলো, লোকজন সেসময় মৃত বন্দীর রক্ত পান করত। অবাক করা বিষয় হচ্ছে অনেক রোমান চিকিৎসক দাবী করেছেন যে এটি আসলে কাজ করত, তারা দেখেছেন যে যারা অন্য মানুষের রক্ত পান করত আশ্চর্যজনকভাবে তাদের মৃগীরোগ ভালো হয়ে যেতো।

৫। মুখের ক্রিম
যেসব গ্ল্যাডিয়েটর হেরে যেত (মানে মারা যেত) তারা হতো মৃগীরোগীর পথ্য আর যার জয়লাভ করত তারা হত অ্যাফ্রোডিয়াকিকস (কামোদ্দীপক বস্ত)। রোমে সাবান পাওয়া খুব কষ্টকর ছিলো, তাই যোদ্ধারা তাদের শরীরে তেল মেখে স্ট্রিগিল নামক একটি যন্ত্র দিয়ে তাদের ত্বকের মৃত কোষ পরিষ্কার করতেন।
সাধারণত এই কোষগুলো ফেলে দেয়া হতো, তবে এই কোষ যদি কোন গ্ল্যাডিয়েটরের হতো তবে তা গ্ল্যাডিয়েটরের ঘামের সাথে মিশিয়ে বোতলে করে নারীদের কাছে কামোদ্দীপক বস্ত বলে বিক্রি করা হতো। অনেক নারী এটি মুখের ক্রিম হিসেবে ব্যবহার করতেন, আশা করতেন গ্ল্যাডিয়েটরের মৃত কোষ তাদেরকে পুরুষদের কাছে আবেদনময়ী করে তুলবে।

৬। খাওয়ার জন্য বমি করা
রোমানরা তাদের খাদ্যপ্রীতিকে নতুন মাত্রায় নিয়ে গিয়েছিল। কোন ভোজ অনুষ্ঠানে রোমানরা ততক্ষণ খেত যতক্ষণ না তারা আর খেতে পারতো না, তারপরে তারা গলায় আঙুল দিয়ে বমি করতো যাতে তারা খাওয়া চালিয়ে যেতে পারে। অনেকে টেবিলের পাশে রাখা পাত্রেই বমি করত, আর অনেকে কোন ভদ্রতার ধার না ঘেঁষে মেঝেতেই সারতো।
আপনার মনে তাদের ক্রীতদাসদের প্রতি দুঃখ জাগতে পারে, কারণ তাদের কাজটি ছিলো খুবই ভয়াবহ। ‘সেনেকা’র ভাষায়, “যখন আমরা কোন ভোজ অনুষ্ঠানে হেলিয়ে পরতাম তখন একজন দাস থুতু পরিষ্কার করত, আরেকজন দাস নিচে পড়ে থাকা ময়লা সংগ্রহ করত।”

৭। ছাগলের মল দিয়ে পানীয়
রোমানদের কোন ব্যান্ড-এইড ছিলো না, তাই তারা তাদের ক্ষত ঢেকে রাখার জন্য অন্য একটি উপায় বের করেছিলো। ‘প্লিনী দ্য ইল্ডার’র ভাষায়, রোমের লোকজন তাদের ক্ষত ও দাগ ছাগলের মল দিয়ে ঢেকে রাখতো। ‘প্লিনী’ লিখেছেন যে, ছাগলের মল সংগ্রহ করা এবং শুকানোর জন্য সবচেয়ে ভালো সময় হচ্ছে বসন্তকাল, তবে জরুরী সময়ে ছাগলের তাজা মল ব্যবহার করা হতো। তবে ছাগলের মল ব্যবহার করার আরেকটি ভয়াবহ উপায় হচ্ছে এটি পানীয়তে ব্যবহার করে পান করা। রোমান ঘোড়সওয়াররা এটি পান করত শক্তি লাভের আশায়। তবে ছাগলের মল ব্যবহার করার আরেকটি ভয়াবহ উপায় হচ্ছে এটি পানীয়তে ব্যবহার করে পান করা। রোমান ঘোড়সওয়াররা এটি পান করত শক্তি লাভের আশায়। ভিনেগারের সাথে ছাগলের মল মিশিয়ে তা জ্বাল দিয়ে পানীয় বানানো হতো বা শুকিয়ে গুঁড়ো করে পানীয়তে মিশিয়ে পান করা হতো। তারা যখন অবসাদগ্রস্থ হয়ে পরতো তখন একটু তাজা হবার আশায় তারা এ পানীয় পান করতো।
এটি শুধু গরীবদের জন্য ছিলো না। ‘প্লিনী’র মতে সম্রাট নিরো’র মতো কেউ আর ছাগলের মলের তৈরি পানীয় পান করতে পছন্দ করত না।

পাঠকের মতামত

Comments are closed.