174984

ইউনাইটেড বিশ্ববিদ্যালয়ের ওড়না পরার নির্দেশনা নিয়ে ব্যাপক ক্ষোভ

অনির্বাণ বডুয়া: আবারও আলোচনায় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়। স্থায়ী ক্যাম্পাস, ছোট ক্যাম্পাস, লেখাপড়ার মান নিয়ে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো কয়েকদিন পর পরই এসেছে আলোচনায়। তবে এবারের আলোচনাটা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ড্রেসকোড নিয়ে। রাজধানীর ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশন বিশ্ববিদ্যালয়ে নারী শিক্ষার্থীদের ওড়না পরার নির্দেশনা দিয়ে একটি বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হলে বিতর্কের শুরু হয়। সোস্যাল মিডিয়ায় বিষয়টিকে ব্যাক্তি স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ হিসেবে দেখছেন অনেকেই। বিষয়টি নিয়ে একটি টেলিভিশন চ্যানেল প্রতিবেদন করলে সোস্যাল মিডিয়ায় তা ব্যাপক আলোচনার সৃষ্টি করে।

ওই প্রতিবেদকের কাছে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়টির উপাচার্য রেজওয়ান খান বলেন, “আমি মনে করি যে যেটা ইভটিজিং এর জন্যে উস্কানিমূলক হতে পারে সেটা হওয়া উচিত না।” তার এই কথাটি ক্ষোভকে দিয়েছে ভিন্ন মাত্রা। সোস্যাল মিডিয়ায় অনেকেই বলছেন একজন বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্য কীভাবে এমন কথা বলেন? তার মানে তো এই দাঁড়ালো যে ধর্ষণের জন্যও পোশাক দায়ী।
সাইকা ঐশী নামে একজন লিখেছেন, “কতিপয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মানীয় শিক্ষকেরা, আপনাদের শিক্ষক হওয়ার যোগ্যতা নিয়ে আমি সন্দিহান, যাদের মানসিকতা এমন তারা আর যাই হোন না কেন, যত যোগ্যতার সার্টিফিকেট গলায় ঝুলান না কেন, সঠিক শিক্ষায় শিক্ষিত জাতি কখনোই উপহার দিতে পারবেন না। ব্যাপারটা এমন হয়ে গেল না? ধর্ষণের জন্য পোষাক দায়ী?”
তবে বিষয়টি নিয়ে ইউজিসি চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবদুল মান্নান বলেন, “একটা মেয়ে ওড়না পরবে কি পরবে না এটা তার ওপর ছেড়ে দেন, তার বাবা মার ওপর ছেড়ে দেন। যদি মনে করেন যে তার পোশাক অশালীন সেটা আপনি তার শিক্ষক হিসেবে বলতেই পারেন, কিন্তু কোনও জিনিস আইন করে বাধ্য করা উচিত নয়।”
ইউজিসি চেয়ারম্যানের কথার প্রশংসা করে শেখ শাহনুমা শারমিন লিখেন, “শ্রদ্ধেয় মান্নান স্যার একেবারেই সঠিক কথাটি বলেছেন। যদি ইউআইইউর ভিসিও বিষয়টি বুঝতো!”
অনেকে আবার অধ্যাপক রেজওয়ান খানকে নিয়ে দিয়েছেন নানান অভিমত। সাবেক এই বুয়েট শিক্ষককে নিয়ে লিখেছেন শরিফুল ইসলাম। তিনি লিখেন, “বুয়েটের ইলেকট্রিক্যাল ডিপার্টমেন্টের প্রাক্তন শিক্ষক রেজওয়ান স্যার শিক্ষক হিসেবে খুবই জনপ্রিয় ছিলেন। গবেষক হিসেবেও তিনি উঁচুমানের। কিন্তু শেষ পর্যন্ত পারিবারিকভাবে জামাতি ঘরানার হওয়ায় মানসিকতায় তিনি এমন।”
কয়েকজন আবার বলছেন মিডিয়া অতিরঞ্জিত করেছে বিষয়টিকে। ফাল্গুনি রেজা মিলা নামে একজন লিখেছেন, “রিপোর্টে মিডিয়া অতিরঞ্জিত করে ইউনিফর্মের কথা বলেছে, যেটা কোন ইউনিভার্সিটি বলে নাই আসলে। তবে ভার্সিটির নোটিশ বোর্ডে ওড়না পরা কাম্য বলা হয়েছে।”
তবে তিন এও বলেন, একটা মেয়ে যখন ইউনিভার্সিটিতে ঢোকে তখন সে প্রাপ্তবয়স্ক। কোন কাপড় পরবে বা পরবে না সেটা ইউনিভার্সিটি সিদ্ধান্ত দেয়ার কে? ওড়না পরলেই যদি সমাধান হয়ে যেত তবে তো এদেশে রেইপ বলে কিছু থাকত না।
বিশ্ববিদ্যালয়টির পক্ষে কথা বলতেও দেখা গেছে কয়েকজনকে। আতাউল করিম নামে একজন লিখেছেন, “ওড়না পরতে বলে কি এমন অপরাধ করছে ইউআইইউ? তাহলে বাংলাদেশের ৮০% কলেজের ও নিয়ম পরিবর্তন দরকার সেখানে তো এপ্রন ও দেয়া হয়। কলেজ থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে উঠেই সব শেষ নিয়ম নীতি। আর ওড়না পড়লে কি উগ্র হচ্ছে?”
নারী শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে এমন বৈষম্য আরও কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ইতিপূর্বে হয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে। এর মধ্যে সবার ওপরে থাকছে আন্তর্জাতিক ইসলামিক বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম। বিশ্ববিদ্যালয়টির ঢাকা ক্যাম্পাস যখন ছিলো তখন নারী ও পুরুষ শিক্ষার্থীদের জন্য আলাদা আলাদা ক্যাম্পাস ছিলো বলে জানিয়েছেন এক শিক্ষার্থী। এমনকি নারী শিক্ষার্থীদের বোরকা পরে আসতে বাধ্য করা হতো। তবে বর্তমানে চট্টগ্রামের স্থায়ী ক্যাম্পাসে কীভাবে চলছে সেটি জানেননা বলে জানিয়েছেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এই সাবেক শিক্ষার্থী।
বিশ্ববিদ্যালয়ের পোশাক নিয়ে বিতর্ক এই প্রথম নয়। কয়েকদিন আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে দুই শিক্ষার্থীকে মুখের নেকাব সরাতে বলে তোপের মুখে পড়েছেন এক শিক্ষক। সোস্যাল মিডিয়ায় ওই বিষয়টির বিবরণ তুলে ধরেন আলাল আহমেদ। তিনি লিখেন, “বিশ্ববিদ্যালয়ে আমার দুই সহপাঠি মাঝে মধ্যে পশ্চিমা পোশাক পরতেন। তো একবার বিভাগের একজন অধ্যাপক, যিনি পরবর্তীতে বিভাগের চেয়ারম্যান নিযুক্ত হন, তাদের দুজনকেই আলাদাভাবে ডেকে নিয়ে তাদের সামান্য রক্ষনশীল পোষাক পরতে উৎসাহ দেন। পরবর্তীতে আমাদের মাস্টার্সে একটি কোর্স পড়াতে অন্য এক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক আসেন এবং ক্লাসে হিজাব পরিহিত একজনকে মুখের সামনে থেকে আবরণ সরাতে বলেন। এই ঘটনায় সবার আগে প্রতিবাদ করেন সেই দুই সহপাঠী এবং ওই শিক্ষককে সরিয়ে নেওয়া হয়।”

পাঠকের মতামত

Comments are closed.