174827

লিঙ্গ বদলকারী এক ওয়ারিয়ার গল্প

নূসরাত জাহান: ইন্দোনেশিয়ার ট্রান্সেজেন্ডার (রূপান্তকামী) নারীদের সুরক্ষায় কাজ করেন মামা ইউলি। ইন্দোনেশিয়াতে ট্রান্সজেন্ডাররা ওয়ারিয়া নামেই পরিচিত। বিশ্বের অন্যান্য জায়গার মতো ইন্দোনেশিয়াতেও তাদের নির্যাতনের শিকার হতে হয়। আর ইন্দোনেশিয়া মুসলিম প্রধান দেশ হওয়াতে তো আরো বেকায়দায় পড়তে হয়েছে ওয়ারিয়াদের। আর এটাই মামা ইউলির কাজ আরো কঠিন করে দিয়েছে। তাকে দুবার হত্যার চেষ্টাও করা হয়।
মামা ইউলির পুরো নাম উলিয়ানাস রেট্টোবলাউট। ইন্দোনেশিয়ার পূর্বাঞ্চলীয় পাপাউ দ্বীপের প্রত্যন্ত এক গ্রামে তার বেড়ে ওঠা। ১১ বছর বয়সেই তিনি প্রথম নিজের সম্পর্কে বুঝতে পারেন। ‘আমি ছেলেদের প্রতি আকৃষ্ট হতে শুরু করি। আমার এই অনুভূতি আসলে কি তা বোঝার চেষ্টা করি। এটা কি কোনো অনুভূতি নাকি অসুস্থতা? আমি যেখানে বড় হয়েছি সেখানে কোনো ট্রান্সজেন্ডার বা সমকামীও ছিল না। ১৮ বছর বয়স পর্যন্ত এমন অনুভূতি মনের মধ্যে কাজ করছিল। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির পরই আমার সঙ্গে আরেক ওয়ারিয়ার পরিচয় এবং বন্ধুত্ব হয়। সেই বন্ধুই আমাকে জাকার্তায় নিয়ে যায়। এরপরই আমি বুঝতে পারি আমার মতো অনুভূতি অনেকের মাঝেই আছে। আমি একা নই।’
তিনি বলেন, ‘পৃথিবীতে আমার মতো আরো অনেকে আছে জানতে পেরে নিজেকে খুব হালকা লাগছিল। মনে হচ্ছিল নিজের ওপর থাকা পাথরটা নেমে গেলো। আমি দেখলাম ভালো পোশাক পরলে এবং নিজেকে পরিপাটি রাখলে ছেলেরা সহজে আমার প্রতি আকৃষ্ট হয়।’
যাইহোক ওয়ারিয়ারা সাধারণত যৌন বৃত্তির সঙ্গে যুক্ত। ইন্দোনেশিয়ার বেশির পরিবারের এমন সন্তাদের পরিত্যক্ত ঘোষণা করে। আর মুসলিম দেশ হওয়াতে ওয়ারিয়াদের অবস্থা আরো শোচনীয়। এমন অভিজ্ঞতা ইউলিরও আছে। তার পুলিশ কর্মকর্তা ভাই তাকে হত্যার হুমকি এবং চেষ্টা করেছিলেন। তিনি বলেন, ‘আমাকে উলঙ্গ করে খুব পেটাচ্ছিল। আর আমার মুখে ছুরি দিয়ে আঘাত করছিল আর আল্লাহু আকবর বলছিল। সে যাত্রায় বুদ্ধির জোরে বেঁচে গিয়েছিলাম।’ এরপর তার বাবা-মা মারা যাওয়ার পর তিনি বাড়িতে গিয়েছিলেন। ওই সময়ও তাকে হত্যার চেষ্টা করে পরিবারের লোকজন।
ওয়ারিদের চিকিৎসা বেশ ব্যয় বহুল। যা সবার পক্ষে করা সম্ভব নয়। আর ট্রান্সজেন্ডার হওয়ায় তাদের কোনো কাজও মেলে না।
ইউলি বলেন, ‘আমি দেখতে খুব একটা সুন্দর নই। তাই যৌন বৃত্তি করার যোগ্যতা আমার ছিল না। এজন্য আমি ওয়ারিয়াদের সুরক্ষার কাজ শুরু করি।’
ইউলি প্রথম ওয়ারিয়া যিনি স্নাতোকত্তর ডিগ্রি অর্জন করেছেন। তাও আবার আইন বিষয়ে। একইসঙ্গে ওয়ারিয়াদের জন্য তিনি একটি আশ্রয় কেন্দ্রও খুলেছেন। পাশাপাশি তিনি ‘মিস ওয়ারিয়া’ প্রতিযোগিতারও আয়োজন করে থাকেন প্রতিবছর। ওয়ারিয়া সুন্দরী প্রতিযোগিতা নিয়ে তিনি বলেন, ‘কেউ আমাদের দেখে বলে না তুমি খুব সুন্দর। তাই নিজেদের মনের আক্ষেপের জায়গা থেকেই এ আয়োজন।’
সূত্র: বিবিসি।

পাঠকের মতামত

Comments are closed.