174830

টাইগারদের সামনে অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড ও ভারতকে পেছনে ফেলার সুযোগ

আগামীকাল নিজেদের শততম টেস্টে বাংলাদেশ মুখোমুখি হচ্ছে শ্রীলঙ্কার। এই টেস্টে বাংলাদেশের সামনে হাতছানি আছে অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড ও ভারতের মত দলকে ছাড়িয়ে যাওয়ার। বিস্তারিত জানাচ্ছেন অনির্বাণ বড়ুয়া।

সবকিছু ঠিক থাকলে আগামীকাল কলম্বোর পি সারাভানামুত্তু স্টেডিয়ামে বাংলাদেশ শততম টেস্টে মুখোমুখি হবে শ্রীলঙ্কার। সবচেয়ে তরুণ দল হিসেবে একশ টেস্ট খেলতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। ২০০০ সালে টেস্ট অভিষেকের পর ১৭ বছরের পরিসংখ্যান একেবারেই সুখকর কিছু নয় বাংলাদেশের জন্য। এই সময়ে বাংলাদেশ মাত্র আটটি টেস্ট জিতেছে ও ১৫টি টেস্ট ড্র করতে সক্ষম হয়েছে। আর হেরেছে ৭৬ ম্যাচ। এই হতাসাজনক রেকর্ড বাংলাদেশকে রেখেছে শতটেস্টের খতিয়ানের একেবারেই তলানিতে। তবে ১০০তম টেস্টেও বাংলাদেশের সামনে সুযোগ আছে অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড, ভারত, দক্ষিণ আফ্রিকাকে পেছনে ফেলার। কারণ এই পরাক্রমশালী দলগুলোর একটিও নিজেদের শততম টেস্টে জিততে পারেনি। উপরন্তু কেবল দক্ষিণ আফ্রিকা ছাড়া বাকী সবাই বেশ বড় ব্যবধানে হেরেছে। সর্বশেষ শততম টেস্ট খেলেছে জিম্বাবুয়ে। গত বছর নিজেদের দেশে বুলাউয়েতে নিউজিল্যান্ডের মুখোমুখি হয়েছিলো দলটি। ফলাফল ২৫৪ রানের হার।

শততম টেস্টে জয়ীরা

নিজেদের শততম টেস্টে জয় পেয়েছে কেবল পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা ও ওয়েস্ট ইন্ডিজ। প্রতিটি দলই নিজ দেশের বাইরে খেলে জিতেছিলো। ১৯৭৯ সালে মেলবোর্নে পাকিস্তান নিজেদের শততম টেস্টে অস্ট্রেলিয়াকে হারায়। ২০০০ সাল রাওয়ালপিন্ডিতে শ্রীলঙ্কা নিজেদের শততম টেস্টে পাকিস্তানকে হারায়। ওয়েস্ট ইন্ডিজ কানাডার কিংস্টনে হারায় অস্ট্রেলিয়াকে ১৯৬৫। ব্যাস এটুকুই জয়ের ইতিহাস। বাকী সব পরাজয়। কেবল নিউজিল্যান্ডই ড্র নিজেদের শততম টেস্ট করতে পেরেছে।

শততম টেস্টে টস ফ্যাক্টর

শততম টেস্টে ইতিহাস পর্যালোচনা করে দেখা যায় টস হারা মানেই ম্যাচ হারা। অন্তত ৯০ শতাংশ সময়ে এমন হয়েছে। শততম টেস্টে টস হেরে কেবল পাকিস্তানই জিততে পেরেছে। শ্রীলঙ্কা ও ওয়েস্ট ইন্ডিজ টসে জিতে ম্যাচ জিতেছে। আর টসে জিতে ম্যাচ জিততে পারেনি এমন হয়েছে কেবল দক্ষিণ আফ্রিকার ক্ষেত্রে। তাদের মাত্র তিন ইউকেটর পরাজয় বরণ করতে হয়েছে ইংল্যান্ডের ১৯৪৯ সালে, পোর্ট এলিজাবেথে।

তাই বাংলাদেশকে ভাগ্যকে পাশে পেতে হলে টসে জিততেই হবে। তবে মুশফিকের টস ভাগ্য লঙ্কায় খারাপ বলা যায়। সিরিজের প্রথম ম্যাচে টসে হেরেছে বাংলাদেশ।

গ্রাউন্ড ফ্যাক্টর

পি সারাভানামুত্তু স্টেডিয়ামে শ্রীলঙ্কার সাম্প্রতিক রেকর্ড খুব একটা ভালো নয়। ২০১০ সালের পর থেকে এই স্টেডিয়ামে শ্রীলঙ্কা ছয়টি টেস্ট খেলেছে জিতেছে মাত্র দুটিতে আর হেরেছে চারটিতে। তাই বাংলাদেশ এখানে একটি প্লাস পয়েন্ট পেতেই পারে।

 

 

ড্রেসিংরুমের অস্বস্তি

ম্যাচটিকে ঘিরে বাংলাদেশ দলে বড় ধরনের পরিবর্তন আনা হয়েছে। বাদ দেওয়া হয়েছে মাহমুদউল্লাহকে, গুঞ্জন আছে বিশ্রামে রাখা হবে মুমিনুল হককেও। দলে যায়গা করে নিতে পারে ইমরুল ও সাব্বিরের যে কেউ বা দুজনই। এই সবকিছু খেলোয়াড়দের মনে ফেলেছে বিরূপ প্রভাব। তাই ইতিমধ্যেই দর্শকমনে খেলাটি নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে।

শততম টেস্ট বিষয়ক বিশেষজ্ঞ মত

হাবিবুল বাশার সুমন: আমার আশা প্রথম ম্যাচের কথা ভুলে আমরা এখানে অনেক ভালো খেলবো। প্রথম ম্যাচটি যেমন ফিরে আসবে না তেমন এই ম্যাচও কখনো ফিরে আসবে না। তাই আমার একটাই চাওয়া আমরা যেন সেরা নৈপুণ্য দিয়ে খেলি। ভালো কিছু চাই- ভালো কিছু অর্থ হলো জয়। আমাদের এই ম্যাচটি স্মরণীয় করে রাখতে হলে জয়টাই হবে বড় পাওয়া।

নাইমুর রহমান দুর্জয়: ১৬-১৭ বছরের ক্যারিয়ারে একজন খেলোয়াড়েরই একশ টেস্ট খেলার রেকর্ড হয়ে যাওয়ার কথা। কিন্তু দেশ হিসেবেই আমরা শততম টেস্ট খেলছি ১৭ বছরে এসে। আমার মনে হয় কিছুটা দেরিতেই হয়েছে। তবে ঘুরে দাঁড়ানোর জন্য এটি একটি মঞ্চ বটে। দীর্ঘ পরিসরের ম্যাচে আমাদের আরও নজর দিতে হবে। কারণ টেস্টে ভালো খেলতে পারলে স্বাভাবিকভাবে আমরা অন্য ফরম্যাটেও ভালো খেলতে পারবো।

আশরাফুল: আমাদের মনে রাখতে হবে এই ১৭ বছরের মধ্যে আমরা চার পাঁচ বছর কোনও টেস্টই খেলিনি। তাই অনেকবারই আমাদের নতুন করে শুরু করতে হয়েছে। প্রতি বছর চার পাঁচটা করে টেস্ট খেলতে পারলে আমাদের উন্নতির গ্রাফটা আরও উর্ধ্বমুখি হতো।

ভক্ত প্রতিক্রিয়া

শাহারিয়ার শাকিব, ব্যাংকার: ভাবতেই ভালো লাগছে আমাদের দল একশ টেস্ট খলছে। আমার মনে হয় এইতো সেদিন ভারতের বিরুদ্ধে বাংলাদেশে অভিষেক ম্যাচ। কি যে উত্তেজনা ছিলো। আরও নিয়মিত ম্যাচ পেলে নিশ্চই আমরা ভালো করতে পারতাম। তবে আমরা ওয়ানডেতে এখন বেশ ভালো দল। আশাকরি ওয়ানডের মতো টেস্ট খেলার সুযোগ পেলে টেস্টেও ভালো হতে পারবো। কাল আমাদের দল ভালো খেলুক এটাই প্রত্যাশা। শ্রীলঙ্কার মাটিতে শ্রীলঙ্কাকে হারানো বেশ কঠিন।

মহিউনুদ্দিন মাহিন: বাংলাদেশের ক্রিকেট নিয়ে অনেক আশা ছিলো। এখন আর সেটি নেই। খেলা থেকে যখন আলাদা বিষয়গুলো গুরুত্বপূর্ণ হয়ে পড়ে তখন আর আশা থাকে না। এখন দল দেখে মনে হয় দলে খেলা থেকে রাজনীতির স্থান বেশি। একনায়কতন্ত্রতো চলছেই।

শততম টেস্টের ফল তালিকা

দল

ফল

প্রতিপক্ষ

অস্ট্রেলিয়া

৭০ রানে পরাজিত

ইংল্যান্ড

ইংল্যান্ড

৯ উইকেটে পরাজিত

অস্ট্রেলিয়া

ভারত

১৩২ রানে পরাজিত

ইংল্যান্ড

নিউজিল্যান্ড

ড্র

ওয়েস্ট ইন্ডিজ

পাকিস্তান

৭১ রানে জয়ী

অস্ট্রেলিয়া

দক্ষিণ আফ্রিকা

৩ উইকেটে পরাজিত

ইংল্যান্ড

শ্রীলঙ্কা

২ উইকেটে জয়ী

পাকিস্তান

ওয়েস্ট ইন্ডিজ

১৭৯ রানে জয়ী

অস্ট্রেলিয়া

জিম্বাবুয়ে

২৫৪ রানে পরাজিত

নিউজিল্যান্ড

 

পাঠকের মতামত

Comments are closed.