বৈষম্য থেকেই দলিতদের আত্মহত্যা ভারতে!
নূসরাত জাহান: দলিত সম্প্রদায়ের লোকজন ভারতে অচ্ছুৎ। নিম্নবর্ণের মানুষ হওয়ায় তাদের সম্মান তো দূরের কথা, মানুষ বলেই গণ্য করে না। সমাজের প্রতি পদে পদে অবহেলা-অপমান সহ্য করতে হয়। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোও তার থেকে বাদ যায়নি। তেমনই ঘটনা ঘটেছে ভারতের অন্যতম শিক্ষা প্রতিষ্ঠান জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ে। বৈষম্যের শিকার হয়ে দলিত সম্প্রদায় থেকে আসা মথুকৃষ্ণন জীবানন্দম আত্মহননের পথ বেছে নিয়েছেন। এরপর থেকেই বিষয় নিয়ে আলোচনা চলছে ভারতে।
বৈষম্যের শিকার হয়ে আত্মহত্যা করার ঘটনা এটাই প্রথম নয়। গত বছর হায়দরাবাদ কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের দলিত সম্প্রদায়ের পিএইচডি শিক্ষার্থী রোহিত ভেমুলা আত্মহত্যা করেছিলেন।
২৭ বছর বয়সী মথুকৃষ্ণন নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ে আধুনিক ইতিহাস বিষয়ে পিএইচডিতে ভর্তি হয়েছিলেন। কিন্তু বৈষম্যের শিকার হয়ে তিনি আত্মহত্যা করেন। যদিও দিল্লি পুলিশ তার আত্মহত্যার কারণকে ‘ব্যক্তি’ বলে জানিয়েছে।
বিষয়টি তেমন নয়। মথুকৃষ্ণনের সাম্প্রতিক ফেসবুক পোস্ট ও তার বন্ধুদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দলিত হওয়ায় বৈষম্যের শিকার হচ্ছিলেন তিনি। এতেই হতাশা তাকে আষ্টেপিষ্টে বেধে ফেলে। এর ফলশ্রুতি হচ্ছে আত্মহত্যা।
তামিলনাডুর বাসিন্দা মথুকৃষ্ণনের বাবা বেসরকারি সংস্থার নিরাপত্তা প্রহরী। আর মা দিনমুজুর। রজনীকান্তকে নকল করতে পারতেন বলে বন্ধুমহলে ‘রজনী কৃষ’ নামে তিনি পরিচিত ছিলেন তিনি।
সর্বশেষ ফেসবুকে পোস্টে মথুকৃষ্ণনের লিখেছিলেন, ‘পিএইচডি-তে ভর্তির ক্ষেত্রে সমানাধিকার নেই। সব খানেই বৈষম্য। মৌখিক পরীক্ষাতেও বৈষম্য। সবক্ষেত্রেই সমতাকে অগ্রাহ্য করা হচ্ছে। প্রান্তিকদের শিক্ষা থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে। সমানাধিকার থেকে বঞ্চিত করার অর্থ সব কিছু থেকেই বঞ্চিত করা।’
এরপরও দিল্লি পুলিশ বলছে আত্মহত্যার কারণ ব্যক্তিগত। পুরিশ জানিয়েছে, প্রাথমিকভাবে মনে হচ্ছে ব্যক্তিগত কারণেই তিনি আত্মহত্যা করেছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনও ঘটনার সঙ্গে তার মৃত্যুর যোগসূত্র থাকার প্রমাণ তারা পায়নি।
তবে মথুকৃষ্ণনের বাবা ছেলে আত্মহত্যা করছে এটি মানতে পারছেন না। তিনি বলেছেন, ‘ওর খুব মনের জোর ছিল। আত্মহত্যার দুদিন আগেও বলেছিল পরীক্ষা আছে সামনে। শেষ হলে তারপরে বাড়ি আসবে। ও যে আত্মহত্যা করতে পারে, এটা বিশ্বাসই করতে পারছি না।’
দলিত সম্প্রদায়ের হওয়ায় এক ছাত্রকে জীবনে কি কি প্রতিবন্ধকতায় পড়তে হয়েছে তা নিয়ে ফেসবুকে ধারাবাহিক গল্পও পোস্ট করছিলেন মথুকৃষ্ণন। দলিত ছাত্রের জীবনযুদ্ধ নিয়ে লেখা সেই গল্পটিতেও বারে বারে দলিতদের প্রতি বৈষম্যের কথা উঠে এসেছে। গল্পটিকে তার নিজেরই জীবনযুদ্ধের কাহিনী বলে মনে করা হচ্ছে।
দলিত সংগঠনগুলো জানিয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের সম্প্রতি নেওয়া কিছু সিদ্ধান্তেকারণে ফলে কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে দলিত আর পিছিয়ে থাকা সম্প্রদায়ের শিক্ষার্থীদের বৈষম্যের শিকার হতে হচ্ছে। আর এই হতাশো আত্মহত্যার পথ বেছে নিচ্ছেন রোহিত বা মথুকৃষ্ণনরা। সূত্র: দ্য হিন্দু।