174794

ঢাকার কাছে একটি সুন্দর প্রাকৃতিক পরিবেশ

এখন নদীগুলো যেন একেকটা কেমিকেল ফ্যাক্টরির বর্জ্যের ড্রেনে পরিণত হয়েছে। এসব নদীর জল খাওয়া তো দূরের কথা, শরীরে লাগলে তা থেকে চর্ম রোগ হওয়া বিচিত্র কিছু নয়। ঢাকার মাঝে যে নদীগুলো আমরা দেখি বা নাম শুনি, সেগুলোর প্রায় সবগুলোর কয়েকটা বিশেষ সমস্যা আছে। চার পাশে হাজার হাজার বসত বাড়ি আর ইটের দালান, কারখানা আর সেগুলো থেকে দূষণ।

এর থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন একটি পরিবেশ হতে পারে বালু নদী আর তার সংলগ্ন বেলাই বিল। আসছে বর্ষায় একদিনের জন্য ঘুরতে যাবার জন্য খুব চমৎকার একটি গন্তব্য হতে পারে এই জায়গাটি। একই সাথে একটি নদী আর বিলে ঘুরে আসার সুযোগ সচরাচর ঘটে না, তাও আবার ঢাকার এত কাছেই।

কোথায়:
বালু নদী বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা শহরের উত্তর-পূর্ব এলাকা দিয়ে প্রবাহিত একটি নদী। এটি বেলাই বিল ও ঢাকার উত্তর-পূর্ব বিস্তীর্ণ জলাভূমির উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে ডেমরার কাছে শীতলক্ষ্যা নদীতে গিয়ে পড়েছে। এই বালু নদীটাই গাজীপুরের কানাইয়া বাজার এলাকায় নিচু জমিতে পড়ে বেলাই বিলে পরিণত হয়েছে।

কিভাবে যাবেন:
গুলিস্তান থেকে বাসে গাজীপুর বাস-স্ট্যান্ড। আবার চাইলে মহাখালী থেকেও বাস নিতে পারেন। গাজীপুর বাস স্ট্যান্ড থেকে রিকশা বা টেম্পোতে কানাইয়া বাজার। কানাইয়া বাজার ঘাটে সারি সারি নৌকা বাঁধা। দরদাম করে উঠে পড়ুন। চাইলে নিজস্ব বাহনেও যেতে পারেন দলবেঁধে। বর্ষাকাল বেলাই ভ্রমণের উপযুক্ত সময়। কানাইয়া বাজারে চা-বিস্কুট ছাড়া অন্য কিছু খাওয়ার ব্যবস্থা নেই। ভারী কিছু খাবার সাথে রাখতে পারেন। নিজস্ব গাড়িতে টঙ্গী-পুবাইল হয়ে কানাইয়া যেতে সময় বাঁচবে, সঙ্গে যুক্ত হবে মনোরম পথ-সৌন্দর্য। এক দিনের জন্য দারুণ বেড়ানো হবে।
কি দেখবেন:
খোলা প্রকৃতি, নদী আর জলার সমন্বয়ে একটা চমৎকার পরিবেশ তৈরি করেছে। বিশাল এই বিলটির কোনও কোনও স্থানে প্রায় সারা বছরই পানি থাকে, তবে বর্ষায় এর রূপ বেড়ে যায় অনেক। বর্তমানে বিলটি আট বর্গমাইল এলাকায় নিয়ে বিস্তার হলেও একসময় এটি আরও বড় ছিল। বাড়িয়া, ব্রাহ্মণ-গাঁও, বক্তার-পুর ও বাম-চিনি মৌজা গ্রামঘেরা বেলাই বিল আজ বেশ ছোটই। আজ থেকে ৪০০ বছর আগে বেলাই বিলে কোনও গ্রামের অস্তিত্ব ছিল না। খরস্রোতা চেলাই নদীর কারণে বিলটিও খরস্রোতা রূপে বিরাজমান ছিল। বর্তমানে জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারণে বিলের চারপাশে গ্রামের বিস্তার হয়েছে। বর্ষা মৌসুমে জেলেরা বিলের চারপাশে মাছ ধরার জন্য ডাঙ্গি খনন করে। আর শুষ্ক মৌসুমে বিলটি হয়ে ওঠে এক-ফসলি জমি। তাতে চাষ হয় বোরো ধান। বিভিন্ন কারণে এই বিলটির নাব্যতা কমে গেছে, একই সাথে বালু নদীর নাব্যতাও কমে এসেছে।


এখানে ইঞ্জিন চালিত আর ডিঙ্গি নৌকা দুটোই পাওয়া যায়। তাড়া থাকলে ইঞ্জিন নৌকা, আর হাতে সময় থাকলে হাতে বাওয়া ডিঙ্গি নৌকা নিয়ে নিতে পারেন। মাঝির সাথে কথা বলে নিজেই সেই নৌকা বেয়ে দেখতে পারেন, ভিন্ন একটা অভিজ্ঞতা হবে সন্দেহ নেই। নৌকা সারাদিনের জন্য ভাড়া করে নিতে পারেন। বিকেলে এই বিলের চারপাশে অপূর্ব দৃশ্য তৈরি হয়। সঠিক সময়ে গেলে চারপাশে পাবেন শাপলার ছড়াছড়ি। এলাকাটি এখনও জনপ্রিয় টুরিস্ট আকর্ষণ হিসেবে গড়ে ওঠেনি। তাই সবকিছু এখনও প্রাকৃতিক রয়েছে, মানুষগুলোও ঠিক তাই। সারাদিনের জন্য গেলে সাথে করে খাবার নিয়ে যাওয়াটা ভাল হবে।

বামচিনি মৌজা গ্রামটি বেলাই বিলের একটি দ্বীপ-গ্রাম। এর বিশেষত্ব এক মৌজায় এক বাড়ি। গাজীপুরে এই বামচিনি মৌজা ছাড়া এমন নজির দেশের অন্য কোথাও আছে বলে জানা নেই।

প্রাকৃতিক পরিবেশ এবং শিল্পায়নের দূষণ মুক্ত কিন্তু ঢাকার খুব কাছেই এরকম একটি জায়গা এক দিনের মাঝে ঘুরে আসার জন্য চমৎকার একটি গন্তব্য হতে পারে।

পাঠকের মতামত

Comments are closed.