174751

জেলখানায় বিচিত্র চোরাচালান!

আজমল হোসেনঃ গরাদের ভেতর নিষিদ্ধ পণ্যের চোরাচালান চলেই। তালিকায় আছে ছোটখাট অস্ত্র ও মাদক। তবে মোবাইল ফোন, স্টেরয়েড, উত্তেজক উপন্যাস- পাচারের তালিকায় আছে আরো বিস্ময়কর সব জিনিস।

কবুতর ফোন
২০১৭ সালে ব্রাজিলের একটি জেলের গার্ডরা একটি কবুতরকে ধরে, কবুতরটির শরীরে একটি থলেতে একটি মোবাইল ফোন ছিলো। সাও পাওলোর ফ্রাঞ্চো ডা রোচার কর্মকর্তারা ধারণা করছেন যে কবুতরটি কোন এক বদীর কাছে জেলের মধ্যে নিষিদ্ধ যোগাযোগ স্থাপঙ্কারী কোন যন্ত্র পৌছাণোর চেষ্টা করেছে।
যখন একজন বদী কবুতরটিকে ধরার চেষ্টা করছিলো তখনই গার্ডরা সচেতন হয়ে যায় এবং সাথে সাথেই কবুতরটি ধরে ফেলে। কবুতরটির দেহে একটি থলে থেকে মোবাইলটি পাওয়া যায় আর একটি তার দিয়ে ফোনের ব্যাটারি কবুতরের দেহে বাঁধা ছিলো। জেলের কর্মকর্তারা জানেননা কোন কয়েদীর জন্য মোবাইলটি পাঠানো হয়েছিলো। জেলের মধ্যে কবুতর দিয়ে চোরাচালানের ঘটনা এটিই প্রথম না। এর আগে ২০১৬ সালে কলম্বিয়ার জেলের গার্ডরা একটি কবুতরকে মোবাইল ফোন ও একটি ইউএসবি স্টিক বহন করা অবস্থায় ধরেছিলো। ২০১৫ সালে কোস্টা-রিকার জেল কর্মকর্তারা ১৪ গ্রাম কোকেইন ও ১৪ গ্রাম মারিজুয়ানা সহ ধরে ছিলেন। বহুবছর ধরে কয়েদীরা যে চোরাচালানের জন্য বিড়াল ও ইগুয়ানা ব্যবহার করে তার অনেক রিপোর্টও কর্মকর্তাদের কাছে রয়েছে।

ফিফটি শেডস অফ গ্রে
২০১৪ সালে একজন ব্রিটিশ নার্স স্বীকার করেছেন যে তিনি জেলে বন্দী তার গোপন প্রেমিকের কাছে উত্তেজক উপন্যাস ‘ফিফটি শেডস অফ গ্রে’ চালান করেছেন। ওয়েলস্টুন জেলে কর্মরত থাকাকালীন অবস্থায় নার্স কিম্বলে হিন্ডে কয়েদী লি স্টিফেন্সন এর প্রেমে পড়েন। অনুসন্ধানে জানা যায় কিম্বলে লি’র সাথে প্রয়োজনের অতিরিক্ত ব্যক্তিগত সময় কাটাতেন। পরবর্তীতে লি’র সেল তল্লাশি করে ফিফটি শেডস অফ গ্রে’র একটি কপি পাওয়া যায়। এবং যতদুর জানা যায় তাদের সম্পর্কটাও এই উপন্যাসের মতোই ছিলো।
কিম্বলে প্রাথমিকভাবে তাদের সম্পর্কের কথা অস্বীকার করলেও পরবর্তীতে তিনি পাবলিক অফিসে অসদাচরনের জন্য আত্মসমর্পন করেন। তার বক্তব্যের প্রেক্ষিতে তাদের সম্পর্কের বিষয়টি খুটিয়ে দেখা হয় এবং সেখানে সবকিছুই স্বাভাবিক ছিলো যৌনতার কোন চিহ্ন সেখানে ছিলোনা। তাকে ৯ মাসের জেল দেয়া হয়, ২ বছরের জন্য তাকে অব্যাহতি দেয়া হয় এবং তাকে ২০০ ঘণ্টা বিনা পারিশ্রমিকে কাজ করতে করতে হয়। পরবর্তীতে জানা যায় যে কিম্বলে লি’র সাথে সম্পর্ক বজায় রেখেছেন। এবং তারদের মাঝে যে চিঠিপত্র ব্যবহার হতো সেখানে তারা ছদ্মনাম ব্যবহার করতেন।

স্যান্ডউইচ পাচার
জানুয়ারি ২০১৭তে লিওন কাউন্টি জেলে এক শিক্ষানবিস কর্মকর্তাকে কেক কয়েদীকে সাব স্যান্ডউইচ পাচার করার অভিযোগে। ৩৯ বছর বয়সী জেরিলিন হ্যারিস বদী ট্রাভেল ডগলাসকে তার অফিসে শুনানির জন্য ডাক দেন। সংশোধনী কর্মকর্তারা সন্দেহের বাইরে ছিলেন না, কেনোনা এটিই প্রথম এমন ঘটনা না। সেই মিটিং শেষে একটি এক্স-রে তে ডগলাসকে তার জেলখানার পোশাকের মধ্যে একটি ইটালিয়ান স্যান্ডউইচ, পেস্ট্রি এবং ক্যান্ডি লুকাতে দেখা যায়।
একই মাসে একজন সাবেক শিকাগো পুলিশ তার চাকরি থেকে বরখাস্ত হন এবং একটি স্যান্ডউইচ চোরাচালাঙ্কারী দলের পঞ্চম ব্যক্তি হন। এই দলটি কুক কাউন্টি জেলের মধ্যে স্যান্ডুইচের মধ্য দিয়ে তামাক, মারিজুয়ানা, এবং মদ পাচার করত। জেসন মারেক স্যান্ডুউইচ পাচারের জন্য অভিযুক্ত হন। তবে ষড়যন্ত্রকারী স্টেফানি লুইস আর তার কয়েদী প্রেমিক প্রিন্স জনসন এর জবানবন্দি থেকে জানা যায় যে তারা জেসনের ব্যক্তিগত তথ্য সংগ্রহ করে তাকে হুমকি দিয়ে এই কাজ করিয়েছিলো।

পায়ুপথে মোবাইল
৬ ফেব্রুয়ারি ম্যানচেস্টার জেলের এক কয়েদী স্টিফেন কাভানাঘের প্রচণ্ড পেটে ব্যথা শুরু হয়। জেলের কর্মীরা তাকে দ্রুত স্বাস্থ্যসেবা বিভাগে নিয়ে যায়। পরে এক্সরে করে দেখা যায় যে তার পায়ুপথে একটি মোবাইল ফোন লুকানো রয়েছে। জেলের কর্মকর্তারা তাকে সার্জারী বিভাগে পাঠান সেখানে তাকে ফোনটি বের করতে জোর প্রয়োগ করা হয়।
২০১৩ সালে ইউএস জেল কর্মকর্তারা ৪২০০ বা দিনে ১১টি মোবাইল ফোন বাজেয়াপ্ত করেন। কয়েদীরা ডায়াপার, স্যুপের প্যাকেট, পানীয়ের প্যাকেট, এবং নীতিহীন গার্ডদের মাধ্যমে জেলের ভেতরে মোবাইল নিয়ে আসত। মোবাইল ব্যবহার করে কয়েদীরা জেল থেকে পালানোর পরিকল্পনা করতে পারে আবার জেলে থেকেও নানান অপরাধ ঘটাতেও পারে। ২০১৩ সালে দুজন খুনী ফ্লোরিদার প্যানহ্যান্ডেল জেল থেকে পালিয়ে যায়। তদন্তকারীরা তাদের পরিত্যক্ত সেলে একটি মোবাইল খুঁজে পেয়েছিলেন। কুখ্যাত খুনী চার্লস ম্যাসনকে তার বিছানার নিচে মোবাইল লুকানো অবস্থায় হাতেনাতে ধরা হয়, একবার নয় দুবার।

স্টেরয়েড চক্র
ব্রিটিশ জেলে স্টেরয়েড পাচারের দায়ে ২০১৫ এর ১৪ই নভেম্বর কারা কর্মকর্তার ১ বছর ৯ মাসের জেল হয়। ২৩ বছর বয়সী প্রাক্তন রয়্যাল মেরিন ম্যাথু টায়লর ওকহুড জেলে একজন অপরাধীর সাথে যুক্ত হন। কয়েদী মাইকেল ক্লার্ক (৪৭) তার বাইরের সাথী ডোনা ডুফাস (৩৯) ও টায়লর এর মাঝে যোগাযোগকারী হিসেবে কাজ করেন। চোরাচালান করা সম্ভব হয়নি কারণ টায়লর বেশি টাকা দাবি করেছিলো। তার আর ডোনার মাঝের কথপোকথনটি রেকর্ড করে রাখা হয়।
পরবর্তীতে টায়লর পাবলিক অফিসে নিজের দোষ স্বীকার করে নেয়। ক্লার্ক এর ২০ মাসের জেল হয়। ডোনা স্বীকার করে যে সে অনলাইন থেকে স্টেরয়েড কিনে ১২ মাস ধরে ক্লার্ককে যোগান দিয়ে আসছে। তায়লর এই কাজের জন্য আগে ৩০০ পাউন্ড পেয়েছিলো। তবে জেলখানার ভিতরে স্টেরয়েডের দাম এখনো অজানাই রয়েছে।

পাঠকের মতামত

Comments are closed.