173871

গুগল ডুডলে পাকিস্তানের এদহি ফাউন্ডেশন

নূসরাত জাহান: পাকিস্তানের আবদুল সাত্তার এদহি। ২০ বছর বয়স থেকে তিনি মানবতার সেবায় নিজেকে আত্মত্যাগ করেন। পাকিস্তানি এই নাগরিক একক প্রচেষ্টায় গড়ে তুলেছেন বিশ্বের সবচেয়ে বড় স্বেচ্ছাসেবা অ্যাম্বুলেন্স নেটওয়ার্ক। গড়ে তুলেছেন এদহি ফাউন্ডেশনের। এদহি তার জীবন উৎসর্গ করেছিলেন গরিব মানুষের সেবায়। নিজের যা ছিল তাই দিয়েই এ ফাউন্ডেশন গড়ে তুলেছিলেন। গত ২৮ ফেব্রুয়ারি ছিল তার জন্মদিন। এদহির জন্মদিনে গুগল তাকে সম্মান জানাতে এদিন গুগল ডুডল সাজিয়েছিল তাকে নিয়ে।
এদহি ফাউন্ডেশন আন্তর্জাতিকভাবে পরিচিত লাভ করে ২০০৫ সালে। ওই সময় যুক্তরাষ্ট্রে হ্যারিকেন ক্যাটরিনা দুর্গতদের জন্য তারা এক লাখ ডলার সাহায্য পাঠায়। সেই থেকেই সবার নজরে আসে ‘লিভ অ্যান্ড হেলপ লিভ’ স্লোগান নিয়ে পথ চলা এদহি ফাউন্ডেশন।  
১৯২৮ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি ভারতের পাঞ্জাব রাজ্যের বানভাতে জন্ম এদহির। দেশ ভাগের পর তিনি পাকিস্তানের করাচিতে চলে আসেন। এরপর থেকে সেখানে ছিলেন। গত বছর করাচিতে তিনি মারা যান। এদহি অসুস্থ হওয়ার পর তাকে বিদেশে নিয়ে চিকিৎসা করানোর প্রস্তাব দেওয়া হয়। কিন্তু তিনি করাচির সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নেন। সেখানেই তিনি মারা যান।  
এদহির ৮৯তম জন্মদিনে তার সম্মানে যুক্তরাষ্ট্র, আইসল্যান্ড, পর্তুগাল, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্য, জাপান, এস্তোনিয়া, ব্রিটেন, ডেনমার্ক, আয়ারল্যান্ড ও পাকিস্তানের গুগল ডুডলে তাকে দেখানো হয়।
গুগল এ প্রসঙ্গে জানিয়েছে, ‘আসুন আমরা আবদুল সাত্তার এদহির জন্মদিন উদযাপন করি। আসুন আমরা সবাই দরিদ্রের দিকে সাহায্যে হাত বাড়িয়ে দেই ।’ গুগল এখন পর্যন্ত দুই হাজারের বেশি ডুডল ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান বা ঘটনার স্মরণে।
পাকিস্তানের সবচেয়ে বড় কল্যাণ সংস্থা এদহি ফাউন্ডেশন। তাদের এক হাজার ৮০০ বেশি অ্যাম্বুলেন্স। ১৯৯৭ সালে সংগঠনটি গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডে ‘বিশ্বে সবচেয়ে বড় স্বেচ্ছাসেবা অ্যাম্বুলেন্স সংস্থা’ হিসেবে নাম ওঠে। দক্ষিণ এশিয়ার যেকোনো দেশ থেকে ১১৫ নম্বরে ফোন করলে এদহি ফাউন্ডেশন উত্তর দেবে।
ওষুধের ছোট্ট একটি ডিসপেনসারি থেকে এদহি তার কাজের শুরু করেছিলেন। কিছুদিন পরে তিনি একটি অ্যাম্বুলেন্স কেনেন। এরপর আরো সাহায্য ওঠাতে শুরু করেন। তার কাজের সঙ্গে মেডিক্যাল শিক্ষার্থীদের যুক্ত করেন। তারা স্বেচ্ছায় এদহির কাজে সাহায্য করে। ধীরে ধীরে দেশজুড়ে কাজ শুরু করেন এদহি। এখন এদহি ফাউন্ডেশনের একটি হাসপাতাল ও শিশু কেন্দ্র চালায়। এদহি জরুরি সেবাকেন্দ্রও আছে। যেখানে পরিত্যক্ত শিশুদের রাখা হয়। এছাড়া উদ্ধার কাজের জন্য তাদের কিছু নৌকাও আছে। এছাড়া তারা বেওয়ারিশ লাশের দাফন করে। এদহি তার জীবনদ্দশায় ধর্মের চেয়ে বেশি প্রাধান্য দিয়েছেন মানবতাকে। এ সংস্থাটি মুসলিম, হিন্দু ও খ্রিস্টানদের কাছ থেকে অর্থ সাহায্য নেয়।
অমুসলিমদের অ্যাম্বুলেন্স সেবা প্রসঙ্গে এদহি বলেছিলেন, ‘কারণ আমার অ্যাম্বুলেন্স মুসলমানের চেয়ে বেশি কিছু।’
সূত্র; আল-জাজিরা।

পাঠকের মতামত

Comments are closed.