275554

বরগুনায় কলেজশিক্ষকের বিরুদ্ধে ছাত্রীকে যৌন হয়রানির অভিযোগ

বরগুনা সরকারি কলেজের বাংলা বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অমর চন্দ্রের বিরুদ্ধে ছাত্রীকে যৌন হয়রানিসহ নানা অভিযোগ এসে কলেজ অধ্যক্ষের কাছে বিচার চেয়ে লিখিত দিয়েছেন এক ছাত্র।  শিক্ষার্থীর অভিযোগ, বাংলা বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অমর চন্দ্রের হাতে ইনকোর্স ও মৌখিক পরীক্ষার নম্বর থাকায় তিনি শিক্ষার্থীদের জিম্মি করে প্রাইভেট পড়াতে বাধ্য করেন, শ্রেণিকক্ষ ও প্রাইভেটে ছাত্রীদের যৌন হয়রানি এবং ছাত্রদের দিয়ে বাজার করিয়ে নিচ্ছেন।

বুধবার ওই কলেজের বাংলা বিভাগের চূড়ান্ত বর্ষের ছাত্র এনামুল হক শিক্ষক অমর চন্দ্রের বিরুদ্ধে অধ্যক্ষ মতিউর রহমানের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।  বিষয়টি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন অধ্যক্ষ।

অধ্যক্ষের কাছে দেওয়া লিখিত অভিযোগে এনামুল হক উল্লেখ করেছেন, বাংলা বিভাগের শিক্ষক অমর দাসের কাছে আমরা গোটা ডিপার্টমেন্টের শিক্ষার্থীর এক প্রকার জিম্মিদশায় আছি।  তার হাতে থাকা ভাইভা ও ইনকোর্সের মার্কসের সুবিধা নিয়ে শিক্ষার্থীদের জিম্মি করে নানা প্রকার অনৈতিক আবদার করেন।

বিশেষ করে ভাইভায় মার্কস দেওয়ার জন্য তিনি অর্থ দাবি করেন।  গরিব অসহায় শিক্ষার্থীরা কেউ টাকা না দিলে তাদের সর্বনিম্ন মার্কস দেওয়ার ভীতি প্রদর্শন করেন।  একইভাবে ফুল মার্কস দেওয়ার বিনিময়ে তিনি শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে বাজার সওদা করানো, পোশাকাদি কিনে দেওয়ার আবদার করেন।

এনামুল বলেন, স্যার আমাদের বিভিন্ন সময়ে তার ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহার করে থাকেন।  ভাইভার ও ইনকোর্স মার্কসের দোহাই দিয়ে আমার কাছ থেকেও অমর স্যার একাধিকবার ইলিশ মাছ, কৈ মাছ, দেশি মুরগিসহ বাজার-সওদা করিয়ে নিয়েছেন।  এ ছাড়া তিনি কলেজের ভেতরে যে কক্ষটিতে থাকেন, ওই কক্ষের খাট ভেঙে যাওয়ায় গভীর রাতে ডেকে নিয়ে খাট মেরামত পর্যন্ত করিয়েছেন।  একইভাবে তিনি আমাদের ডিপার্টমেন্টে প্রায় সব ছাত্রকে ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহার, বাজার-সওদা করে খাওয়ানোসহ নানা কাজে বাধ্য করছেন।

এ ছাড়া গণমাধ্যমের হাতে আসা একটি ভিডিওচিত্রে দেখা যায়, শিক্ষক অমর চন্দ্র কলেজের বিপরীতে একটি বাসায় প্রাইভেট পড়ানোর সময় এক ছাত্রীর শরীরের স্পর্শকাতর স্থানে হাত দেওয়ার চেষ্টা করছেন।  এ অবস্থায় ওই শিক্ষার্থী বেঞ্চ থেকে উঠে গিয়ে পেছনের দিকে বসেন।  এ ছাড়া ক্লাস চলাকালীন একজন ছাত্রীর শরীর স্পর্শ করার চেষ্টা করছেন শিক্ষক অমর চন্দ্র। একইভাবে একজন ছাত্রী স্যারের এমন আচরণের বিষয়ে সহপাঠীর সঙ্গে কথোপথনেরও একটি কল রেকর্ড, একজন ছাত্রকে মাছ ও খাসির মাংস কিনে নিয়ে আসার কয়েকটি কল রেকর্ড প্রতিবেদকের কাছে সরবরাহ করেছেন শিক্ষার্থীরা।

ভিডিও দেখানোর পর ওই কলেজেরই বাংলা বিভাগের সরকারি অধ্যাপক শিরীন সুলতানা নিশ্চিত করেন ওই ভিডিওর ব্যক্তিটি বিভাগীয় প্রধান অমর চন্দ্র।  শিরীন সুলতানা বলেন, আমার কাছেও স্যারের এমন আপত্তিকর আচরণের বিষয়ে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে অভিযোগ এসেছিল।  কিন্তু ছাত্রীদের ডেকে জিজ্ঞেস করলে তারা অস্বীকার করেছিল।

পরিচয় গোপন রাখার শর্তে বাংলা বিভাগের চূড়ান্ত বর্ষেও এক ছাত্রী জানান, তিন-চার মাস আগে বৃষ্টির মধ্যে একদিন প্রাইভেট পড়তে গিয়েছিলেন তিনি।  এ সময় পেছনের বেঞ্চে বসায় স্যার তাকে ডেকে সামনে সারিতে নিয়ে বসিয়ে শরীর স্পর্শ করে আপত্তিকর আচরণ শুরু করেন।  ক্ষোভে ও ঘৃণায় তিনি চলে আসেন এবং তার পর থেকে আর প্রাইভেট পড়তে যাননি।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে বাংলা বিভাগের বেশ কিছু শিক্ষার্থী জানান, অমর স্যার শিক্ষার্থীদের মার্কসে জিম্মি করে প্রাইভেট পড়ানোয় বাধ্য করেন।  তিনি কলেজে যোগদানের পর থেকে এভাবেই বছরের পর বছর শিক্ষার্থীদের জিম্মি করে অনৈতিক সুবিধা নিয়ে আসছেন।  স্যারের হাতে মার্কস জিম্মিদশার কারণে কেউ কিছু মুখ খুলে বলছে না।  তার বিরুদ্ধে মুখ খুললে সর্বনিম্ন মার্কস দেওয়া এমনকি ফেল করানোর পর্যন্ত হুমকি দিয়ে থাকেন।

কয়েকজন ছাত্রী পরিচয় গোপন রাখার শর্তে মোবাইলে জানান, শিক্ষক অমর চন্দ্র ইনকোর্স ও ভাইভায় ফুল মার্কস দেয়ার বিনিময়ে তাকে ‘বিশেষ সময়’ দেয়ার প্রস্তাব পর্যন্ত দিয়েছেন।  এছাড়া প্রাইভেট পড়ানোর সময় তিনি একাধিক ছাত্রীকে শরীরের স্পর্শকাতর স্থানে হাত দেওয়ার মত যৌন হয়রানি করে আসছেন।  ছাত্রীরা লজ্জা ও মার্কস না পাওয়ার ভয়ে কেউ মুখ খুলে না।

একজন ছাত্রী বলেন, শুধু প্রাইভেটেই না শ্রেণিকক্ষেও তিনি আমাদের সঙ্গে আপত্তিকর আচরণ করেন এবং গায়ে হাত দেন। আমরা খুবই বিব্রতবোধ করি।  কিন্তু লজ্জায় কাউকে বলতে পর্যন্ত পারি না।

অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে অমর চন্দ্র বলেন, এসব মিথ্যা অভিযোগ।  অনিয়মিত কিছু ছাত্র ভাইভা ও ইনকোর্সে ফুল মার্কস দেওয়ার জন্য আমায় চাপ প্রয়োগ করেছিল।  কিন্তু ফল অনুসারে আমি মার্কস দেয়ায় তারা ক্ষিপ্ত হয়ে আমার বিরুদ্ধে এসব মিথ্যে বিষোদগার করছে। আমি বিষয়টি অধ্যক্ষ স্যারকে জানিয়েছি।

তদন্তকারি কর্মকর্তা বরগুনা সরকারি কলেজের সহযোগী অধ্যাপক (ইংরেজি) মো. আবদুস সালাম বলেন, এ ঘটনায় অধ্যক্ষ আমাকে প্রধান করে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে আগামী সাত কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিল করার নির্দেশ দিয়েছেন।

এ বিষয়ে বরগুনা সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ মতিউর রহমান বলেন, একজন শিক্ষার্থীর কাছ থেকে লিখিত একটি অভিযোগ পেয়েছি।  সহযোগী অধ্যাপক মো. আবদুস সালামকে প্রধান করে একটি তদন্ত টিম গঠন করা হয়েছে।  অভিযোগের সত্যতা পেলে শিক্ষকের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

 

পাঠকের মতামত

Comments are closed.