270300

উষ্ণতা

গ্রীষ্মকালের মধ্যবর্তী সময় ছিল সেটা। ম্যাকাডাম রোডটি আন্দোলিত হচ্ছিল ঢেউয়ের মতো। প্রবল উত্তাপে। ঝিঁঝিঁ পোকারা  গাছের অন্তঃস্থল থেকে উচ্চকিত শব্দ করছিল। আর  আকাশ গলে পড়ছিল। রূপার পাতের মতো।

দিনগুলো ছিল একইরকমের। সংকীর্ণ ও কর্দমাক্ত ধূসর নদীর মতো শুধুমাত্র একদিকেই বয়ে চলছিল।  কিন্তু প্রবাহ এতটাই মন্থর ছিল যে, বোঝাই দুষ্কর হতো। তবে সপ্তাহের রোববারটা বৈচিত্রে ভরপুর ছিল। সকালের চার্চ,  রবিবারের দৈনিক পত্রিকা, রঙিন কমিকের নিউজপ্রিন্ট ইত্যাদি কারণে।

রিয়া ও রোদা দুজনে তাদের পুরোনো মরিচাধরা বাইসাইকেলে চড়ে উড়ে যাচ্ছিল। রেলরোড চত্বরের দিকে। গন্তব্যস্থানের নাম হুইপল’স আইস। এটা ছিল একটা চারণক্ষেত্র, যেখানে দুগ্ধবতী গাভীরা চড়ে বেড়াত। তারা দুজনে দাদীমার পকেট হতে ছয় ডলার চুরি করে এনেছিল। তিনি তাদেরকে খুবই ভালবাসতেন। দুইবোনের  বয়সই ছিল এগার বছর। জমজ। দেখতেও একই রকম। এই চত্বরে ওরা রোদ পোহাতে আসত।

রিয়া ও রোদা কুনকেল। রিয়া ও রোদা নামেই দুজনকে ডাকত সবাই। কখনই কেউ রোদা ও রিয়া নামে ডাকেনি।   আমি জানি না কেন। আসলে নামদুটো হয়তবা অন্য কোনভাবে উচ্চারণ করা যেত না। এমনকি তাদের  স্কুলের শিক্ষকরাও তাদেরকে ভিন্নভাবে ডাকার চিন্তা করতেন না।

আমরা তাদেরকে দেখতে গিয়েছিলাম ফিউনারেল পার্লারে। যেখানে দুই জমজ বোন দুই ঝুড়ির ভেতরে শুয়েছিল।  সাদা, মসৃণ এবং দ্যুতি ছড়াচ্ছিল। ঝুড়ি দুটোতে রেশমি কাপড়ের লাইনিং দেয়া ছিল। ক্যান্ডিবক্সে সাধারণত যেমন থাকে। ঝুড়ি থেকে মোমের মত সাদা লিলি ও ট্যালকম পাউডারের সুগন্ধ ছড়াচ্ছিল। কক্ষটি ছিল জনাকীর্ণ। প্রবেশ ও বের হবার জন্যে সেটিতে একটি মাত্রই পথই ছিল।

রিয়া ও রোদা দুজনে একটি স্বত্বা ছিল। সেভাবেই তারা নিজেদেরকে ভাবত। শুধুমাত্র একজন থেকে চোখ ফিরিয়ে অন্যজনের দিকে তাকালেই আমরা বুঝতে পারতাম যে, তারা আসলে ছিল দুজন।

চারপাশের তাপমাত্রা ছিল খুবই প্রখর। তার ভেতর দিয়ে সাঁতার কেটে সামনের দিকে অগ্রসর হতে হত। সাইকেলের  উপরে বসে রিয়া ও রোদা এগুলোর কিছুই খেয়াল করছিল না। তাদের চলার পথটি ছিল পাকা রাস্তা। সেটি তাদের দাদীমার বাসস্থানে শুরু হয়ে প্রধান সড়ক দিয়ে শহরের দক্ষিণের একটি কংকরময় স্থানে শেষ  হয়েছিল। সে বছরের  গ্রীষ্মটি ছিল তাদের সপ্তম গ্রেডে উঠার অব্যবহিত পূর্বের। এই সময়েই তারা মারা গিয়েছিল। আসলে মৃত্যু তাদের দিকেই আসছিল, কিন্তু তারা তা জানত না।

রিয়া ও রোদা দুজনেই সেই মূহুর্তে একই ভাবনা ভাবছিল এবং একই স্বপ্নে বিভোর ছিল। সারাদিন ধরে নিজেদের  স্বপ্নগুলোকে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করছিল। টানেল ব্যবহার করে জল যেভাবে ফিরিয়ে আনা হয়। আমরা তাদেরকে দেখছিলাম এবং তাদেরকে নিয়ে কিছুটা ঈর্ষান্বিতও অনুভব করেছিলাম। কারণ আমাদের কারুরই জমজ ভাইবোন ছিল না।

অদ্ভুত আচরণের অধিকারী ছিল তারা। কোন কোন সময়ে দুজনেই মুখ ভারী করে নিশ্চুপ হয়ে বসে থাকত। আবার কোন কোন সময়ে, আমার মনে আছে তারা চিৎকার করত ও হাসত।  আমার মনে হতো তারা মরে যাচ্ছে। তারা অন্যদের ডেস্ক ও লকার থেকে জিনিস চুরি করত। কিন্তু কেউ ধরলেই সেগুলো ফিরিয়ে দিত। কারণ সেটা ছিল তাদের কাছে খেলা।

অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার পার্লারটিতে তিনটা ফ্লোর ফ্যান ছিল। ঘূর্ণমান দীর্ঘ সেই ফ্যানগুলো প্রোপেলার ব্লেড দিয়ে দ্রুততার সাথে উষ্ণ বাতাসকে প্রবাহিত করছিল। চারদিক থেকে প্রবাহিত সেই বাতাসে আমাদের চোখের কোণা জ্বলছিল। এই সময়ের মধ্যেই রজার হুইপলকে গ্রেফতার করে পুলিশের কাস্টডিতে নেয়া হয়েছিল। কেউ তাকে কোন আঘাত করেনি। তবে তাকে কখনই বিচারের সম্মুখীন করা সম্ভব ছিল না। কারণ সে ছিল মানসিকভাবে সম্পূর্ণ অপ্রকৃতিস্থ। যাকে এমনিতে গৃহবন্দী করে রাখতে হতো। সরকারী মানসিক হাসপাতালে বছরখানেক পর  সে মারা গিয়েছিল এবং কবর দেয়ার জন্যে তার মৃতদেহকে বাড়িতে ফিরিয়ে আনা হয়েছিল।

রিয়া ও রোদা কুনকেলকে একই সিমেট্রিতে দাফন করা হয়েছিল। সেটির অবস্থান ছিল চার্চের ঠিক পেছনে।

ঝুড়ির ভেতরে মৃত বালিকাদ্বয়কে দেখতে আমার পরিচিত মনে হয়নি। তাদের চোখ ও মুখ বন্ধ করে পিঠের উপরে শুইয়ে রাখা হয়েছিল। জীবিত মানুষেরা ঘুমালে যেরকম লাগে, তাদেরকে সেরকমও লাগছিল না। তাদের মুখমন্ডলকে খুবই ছোট লাগছিল এবং চোখের প্রতিটা ভ্রূকেই মনে হচ্ছিল যথার্থ। স্বর্গের অপ্সরাদের মতো।  ত্রুটিহীন। সবাই তাই বলছিল। আমি অন্তহীনভাবে তাদের দিকে তাকিয়েছিলাম। তাদের শরীরের নীচের অংশ  বোঝা যাচ্ছিল না।

রজার হুইপল ‘হুইপলস আইস’ এ তার পিতার সাথে কাজ করত। খবরের কাগজে বলা হয়েছিল যে, তার বয়স হয়েছিল উনিশ। ষোল বছর বয়স পর্যন্ত সে ডিউইট ক্লিনটন স্কুলে পড়াশুনা করেছিল। আমার মায়ের বান্ধবী স্যাডি সেখানে শিক্ষকতা করতেন। সে ছিল মিষ্টিমুখের এক ধীর আচরণের বালক। তার বড় বড় হাত ও পা এবং শূকরের বাচ্চাদের মত ঊরু ছিল। সে ছিল একজন ভাল স্বভাব চরিত্রের একটি লজ্জিত মুখের বালক। তার কণ্ঠস্বর ছিল ফ্যাসফ্যাসে। ক্লাসের অন্যদের মতো সে খুব সহজ সরল ছিল না। সতর্ক ও অনুসন্ধিৎসু প্রকৃতির ছিল।

রজার হুইপল পিতার ট্রাকের উপরে হাঁটু গেঁড়ে বসে থাকত এবং তার বড়ভাই গাড়ি চালাত। ড্রাইভওয়ে থেকে আমরা তাদের ট্রাকের শব্দ শুনতে পেতাম।  বড় বড় বরফের টুকরা কাঁধে নিয়ে তাকে এগিয়ে আসতে দেখা যেত। সে ছিল শক্তিশালী এবং বয়স্ক মানুষদের মত গোলাকার কাঁধের অধিকারী। কখনই সে ক্লান্ত হত না এবং তার হাত থেকে কিছু পড়ত না। সারাক্ষণ তার বড় মুখ হতে বিবর্ণ দৃষ্টি এবং নরম মুখ থেকে স্মিত হাসি ঝরে পড়ত। সবাই বলত যে, সে কোনদিন কোন পশুকেও আঘাত করেনি।

লোকজন কুনকেল যমজ হিসেবেই রিয়া ও রোদাকে নিয়ে কথা বলছিল। মৃত্যুর পরেও তাদেরকে আলাদা করে দেখার চেষ্টা করেনি। কফিনের পাশে হাঁটু গেঁড়ে কানে কানে আমার তাদেরকে বলতে ইচ্ছে করছিল, রিয়া ও রোদা, জেগে ওঠো।

রিয়া ও রোদা দুজনেই উচ্চস্বরে স্বরে কথা বলত। লজ্জা পেত না। এসেম্বলিতে সবসময়েই প্রথম সারিতে দাঁড়াত। একজন থাকত আমার সামনে এবং অন্যজন আমার পেছনে। পুরো ব্যাপারটিকে আমার কাছে পরিকল্পিত মনে হত।

সিরিয়াস ধরণের জায়গাগুলোতে রিয়া ও রোদা স্থির হয়ে থাকতে পারত না। বিশেষ করে চার্চ ও স্কুলে। সারাক্ষণ নিজেদের মধ্যে দৃষ্টি বিনিময় করত এবং হাসতে হাসতে প্রায় অজ্ঞান হয়ে যেত। কোন কোন সময়ে তাদের আঙুলের ফাঁক দিয়ে হাসি বের হয়ে যেত। বাষ্পের মত শব্দ করে। অন্য সময়ে সেগুলো হাঁচির আকারে বের হত। তখন আর আমরা আমাদের হাসি নিয়ন্ত্রণ করতে পারতাম না। সবচেয়ে কঠিন সময় ছিল স্কুল এসেম্বলির সময়ে। প্রিন্সিপাল আমাদেরকে বলতেন যে, মিস ফ্ল্যাগলার মরে গেলে আমরা সবাই তাকে খুব মিস করব। এই কথা বলার সময়ে তার গগলসের কাঁচের নীচে চোখ ছলছল করে উঠত। ঠিক এই সময়েই জমজদের একজন রুদ্ধশ্বাসে সংক্ষিপ্ত হ্রেষাধ্বনি করত, যা অগ্নিশিখার মত পুরো সারির মেয়েদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ত। আমাদের তখন নিজেদের উপরে কোন নিয়ন্ত্রণই থাকত না। অনেক সময়ে সুড়সুড়িই যথেষ্ট ছিল আমাদেরকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্যে।

আমি কখনই রিয়া ও রোদা সম্পর্কে ভাবিনি যে, তারা  তাদের ক্যাসক্যাডের ভেতরে ঘুমিয়ে থাকতে পারে, যেখানে অন্যরা তাদের দিকে তাকিয়ে থাকবে, অশ্রুপাত করবে এবং তাদের জন্যে প্রার্থনা করবে। আমি কখনই স্বপ্নে বাস্তব জিনিস দেখিনি। আমি শুধুমাত্র সেই জিনিসগুলো স্বপ্নে দেখতাম যেগুলো আমার অচেনা। যে জায়গাগুলোতে আমি কখনই যাইনি বা যে মানূষদেরকে আমি কখনই দেখিনি, তারা কখনই আমার স্বপ্নে আসত না। এমনকি স্বপ্ন  দেখার সময়ে নিজেকে দেখলেও, আমি জানতাম যে, সেটা আমি ছিলাম না। তাহলে কে ছিল সেটা? আমি জানতাম না।

রিয়া ও রোদা হুইপলস আইসের পেছনে তাদের সাইকেল রেখে খেলছিল। দুজনেই পাগলের মত হাসছিল। ঘুণাক্ষুরেও তারা খেয়াল করে দেখছিল না যে তাদের ফোকলা দাঁতের মধ্য দিয়ে পথের পাশের ধূলা মুখের ভেতরে ঢুকে যাচ্ছিল। যদি বিগত রাতে দুজনে মিলে কোন স্বপ্নও দেখে থাকে, উত্তপ্ত সূর্যের আলো তা পুরোপুরি মুছে দিয়েছিল।

মৃত্যু আসলে কখনও তুমি তা জানতে পার, আবার কখনও বা পারো না।

রজার হুইপল তখন গোলাঘরের ভেতরে কাজ করছিল। বাচ্চারা তার কাছে গিয়েছিল বরফের টুকরা চাইতে, যেগুলোকে তারা চুষবে, ছোড়াছুঁড়ি করবে অথবা সেগুলো দিয়ে তাকে জ্বালাতন করবে। কোন খারাপ উদ্দেশ্য থেকে নয়। শুধুই আনন্দময়তার জন্যে। সেটি ছিল একটি নিস্তরঙ্গ দিন। সারাদিন ও রাত  জুড়ে ছিল শুধুই উষ্ণতা। ঐ বয়সের শিশুদের সংগে রজার হুইপল আনন্দিতই বোধ করছিল। সে ছিল ষষ্ঠ গ্রেডের ছাত্র। দ্রুওতার সাথে সে  যোগ-বিয়োগ করতে পারত। যদিও অন্য ধরণের অংকগুলো তাকে কষ্ট দিত। লোকজনেরা বলাবলি করত যে, সে সব সময়েই অদ্ভুত ও খুবই সজাগ প্রকৃতির একজন বালক ছিল। হুইপল পরিবারের উচিত হয়নি তাকে মুক্তভাবে চলাফেরা করতে দেয়ার।

তবে তারা এটাও বলত যে, সে যথেষ্টই ভদ্র প্রকৃতির একজন বালক ছিল, যে সানডে স্কুলে পড়তে যেত, সেখানে বসে থাকত এবং কখনই কারও জন্যে সমস্যার সৃষ্টি করত না। সে বাইবেল কার্ড সংগ্রহ করত এবং সেগুলোকে তার তোষকের নীচে লুকিয়ে রেখে দিত। মিঃ হুইপল তাকে প্রথম থেকেই নিয়মানুবর্তিক হিসেবে গড়ে তোলার চেষ্টা করেছিলেন। যেমন করে আমরা বড় কুকুর বা ঘোড়াকে শৃঙ্খলা শিখিয়ে থাকি। তাদেরকে আত্নচিন্তা বা আত্নউন্নয়নের অবকাশ না দিয়ে।

প্রতিবেশীরা বলত যে, হুইপল পরিবার রজারকে পশুর মত খাটাত। তার বড় ভাইগুলো ছিল নির্দয় প্রকৃতির। তারা ঢিলেঢালা জামা বা ডেনিম কাপড়ের পরিচ্ছদ পরিধান করত। কেন তা আমরা কেউ জানতাম  না। সেইদিন দুপুরে মিডল্যান্ড ব্যাংকের উপরে তাপমাত্রা ছিল ৯৮ ডিগ্রি ফারেনহাইট। আমার মা আমাকে বলেছিলেন।

ঘটনার পরের রাতগুলোতে আমি বিছানায় যাবার পূর্বে আমার মা  আমাকে আলিঙ্গন করতেন। নিজের বুকের সাথে আমার মুখকে শক্তকরে চেপে ধরে ফিসফিস করে কথা বলতেন। তিনি কি বলতেন আমি শুনতাম না। সম্ভবত যিশুর কাছে প্রার্থনা করতেন আমাকে সকল ধরণের বিপদ থেকে রক্ষা করতে। আমি কিছুই শুনতাম না। শুধু শক্তকরে চোখ বন্ধ করে থাকতাম। কখনও কখনও আমরা সবাই একত্রে প্রার্থনা করতাম। সবাই অথবা মা আর আমি। বিছানাতে হাঁটু গেঁড়ে। আমি জানতাম যে, মিসেস কুনকেলও তার মেয়েদেরকে একই রকম ভাল বাসতেন।

মিসেস কুনকেল জমজ মেয়েদের দিকে তাকিয়ে হাসতেন ও চোখ রাঙাতেন। মায়ের কাছে তারা ছিল ‘দ্বিগুণ সমস্যা’। এই কথাটি রেডিওতে পরিবেশিত কৌতুকের  মত সারাক্ষণ শোনা যেত। বারবার ঘুরেফিরে আসত। আমি নিশ্চিত যে, তিনিও আমার মায়ের মতো তাদের সাথে প্রার্থনা করতেন।

রাতের দীর্ঘ প্রহরে আমরা দিনের কথা ভুলে যাই। এটা পৃথিবীর অন্য পৃষ্ঠের মত। তারপর আবার সূর্য উঠে। উষ্ণতায় ভরে যায় চারদিক। আমরা তখন রাতের কথা ভুলে যাই।

আমরা স্কুলের পেছনের মাঠের ভেতর দিয়ে দৌড়াচ্ছিলাম। এই জায়গাতে কখনও কখনও লোকজন তাদের আবর্জনা ফেলে রেখে যায়। এগুলোর ভেতরে একটা মৃত কুকুর ও চমৎকার পশমের মেষরক্ষী কুকুর ছিল। কিন্তু দুটোরই চোখগুলো গলে গিয়েছিল।  রিয়া ও রোদা এদেরকে দেখার পর একসাথে চিৎকার করে উঠেছিল এবং চোখ বন্ধ করে ফেলেছিল।

তারা অসাধারণ সব কাজ করত। তাদের বন্ধুদেরকে চকলেট বার, নেইল পলিশ এবং কখনও কখনও অন্য কোথাও থেকে সংগ্রহ করা চাবির চেইন, প্লাস্টিকের ফ্রেমে আটকানো মুভিস্টারদের ছবি ইত্যাদি উপহার দিত। মুভি দেখার সময়ে তারা অন্যদের সাথে পপকর্ন শেয়ার করত।

একবার তারা আমাকে কাপড় খুলতে বাধ্য করেছিল। জায়গাটি ছিল কুনকেলদের বারান্দা, যার নীচে আমরা হামাগুড়ি দিয়েছিলাম। এটা ছিল একটা বড় ফাঁকা জায়গা, যার শেষপ্রান্তে অপ্রয়োজনীয় জিনিষপত্র রাখা হত। এই অংশে আমরা পরস্পরের সাথে মাথা ঠোকাঠুকি না করেই বসতে পারতাম। জায়গাটি ছিল ঠান্ডা, যেখানে ময়লা ও পাথরের গন্ধ ছিল। রিয়া ও রোদা হঠাত করে আমাকে বলেছিল, কাপড় খোল। আমি আমার জামা, শর্টস এবং প্যান্টিও খুলেছিলাম। তারা দুজনেই আমার পথরোধ করে দাঁড়িয়েছিল এবং হাসছিল। সুতরাং আমার কোন উপায়ান্তর ছিল না। আমি ভয় পেয়েছিলাম, কিন্তু আমিও হাসছিলাম। তারা আমাকে বলেছিল যে, আমার উপরে তাদের শক্তি প্রদর্শন করতেই এটা করেছিল। অতঃপর তারা নিজেরাও আমার মত কাপড় খুলেছিল।

অন্যদের উপরে তোমার শক্তি আছে; কিন্তু তুমি তা বুঝতে পারো না যতক্ষণ পর্যন্ত না তুমি পরীক্ষা করে দেখ।

কুনকেলের বারান্দার নীচে আমরা পরস্পরের দিকে তাকিয়েছিলাম, কিন্তু পরস্পরকে স্পর্শ করিনি। ভয়ে আমার দাঁত ঠকঠক করে শব্দ করছিল। কারণ কেউ যদি আমাদেরকে দেখে ফেলত। কোন ছেলে অথবা মিসেস কুনকেল নিজে। আমি খুবই ভয় পেয়েছিলাম। তবে খুশীও হয়েছিলাম। আমার মনে হয়েছিল শুধুমাত্র চেহারা ছাড়া আমি তাদেরই মত একটি মেয়ে।

কুনকেল পরিবার নদীর তীরে কাঠের তক্তা দিয়ে তৈরী একটা বাসস্থানে বাস করত। এখান থেকে সাঁকোর উপরে ট্রাকের ঘর্ঘর আওয়াজ এবং পাহাড়ের উপরে সশব্দে গিয়ার পরিবর্তনের শব্দ শোনা যেত। মিসেস কুনকেলের আট সন্তান ছিল। এদের মধ্যে রিয়া ও রোদাই ছিল সর্বকনিষ্ঠ। আমার মা অবাক হতেন ভেবে যে, মিসেস কুনকেল নিজের যত্ন নিতেন না। তার চাঁদের মত সুন্দর মুখমণ্ডল ছিল। কিন্তু তার চুলগুলো ছিল  অযত্নে কোঁকড়ানো। তার ওজন নিশ্চয়ই ২০০ পাউন্ডের কম ছিল না। প্রচণ্ড গরমের ভেতরে তিনি ঘামতেন এবং কষ্ট করে শ্বাস-প্রশ্বাস  গ্রহণ করতেন। মিঃ কুনকেল গ্রামের দিকে কন্সট্রাকশনের কাজ করতেন। গ্রীষ্মের সন্ধ্যাগুলোতে তিনি বারান্দায় বসে বিয়ার পান করতেন এবং উঠানের ভেতরে শেষ হয়ে যাওয়া সিগারেটের শেষপ্রান্ত ছুঁড়ে দিতেন। দূর থেকে সেগুলোকে জোনাকি বলে মনে হতো। খালিগায়ে তিনি রোদের ভেতরে কাজ করতেন। তার শরীরের উপরের অংশকে মনে হতো পোড়া কাঠ। তার বুকের লোমের ভেতরে ছোট্ট  নিপলগুলোকে দেখে মেয়েরা হাসত। মিঃ কুনকেল আমাদেরকে জ্বালাতন করতেন। তিনি রিয়া ও রোদাকে আমাদের সাথে এমনই মিলিয়ে ফেলতেন যে,  তখন তাদের নাম সঠিকভাবে উচ্চারণ করাটাই তার জন্যে সমস্যার হয়ে যেত।

মিঃ কুনকেলকে পুলিশ কাস্টডিতে নেওয়া হয়েছিল। তিনি মৃত মেয়েদেরকে দেখতে আসতে পারেননি। ফিউনারেল  পার্লারে গিয়েছিলেন মিসেস কুনকেল। তার চিবুকের চর্বিগুলো ঘাম ও চোখের জলে চকচক করছিল এবং তার  মুখের মেকআপ এতটাই বিবর্ণ হয়ে গিয়েছিল যে, আমরাই তার দিকে তাকাতে বিব্রতবোধ করছিলাম। পিতামাতার সাথে সেখানে উপস্থিত হবার পর তিনি কাঁদতে কাঁদতে যেভাবে আমাকে টেনে নিয়ে তার বৃহৎ বেলুনের মত বুকের সাথে আমাকে আলিঙ্গন করেছিলেন, তাতে আমি ভীত হয়ে পড়েছিলাম। আমার সকল শক্তি অন্তর্হিত হয়ে গিয়েছিল এবং তাকে সরিয়ে দেয়া আমার পক্ষে সম্ভব ছিল না।

পুলিশ বলেছিল যে, তারা মিঃ কুনকেলের ভালোর জন্যেই তাকে কাস্টডিতে নিয়েছিল। তিনি হুইপলস পরিবারে গিয়ে বলেছিলেন যে, তিনি হাতের নাগালে যাকে পাবেন, তাকেই হত্যা করবেনঃ পিতা বা ভাই যেই হোক না কেন। কারণ তারাও হত্যাকান্ডের  জন্যে দায়িত্ববান ছিল এবং তাদের কারণেই তার ছোট্ট মেয়েরা মরে গিয়েছিল। তিনি তাদেরকে খালি হাতে ছিঁড়ে ফেলতেও চেয়েছিলেন, যদিও সে সময়ে তার হাতে একটা লোহার রড ছিল।

সেদিনের ঘটোনাটি আসলেই কি কোন বিশেষ ঘটনা ছিল, নাকি রিয়া ও রোদা তাদের দাদীমার কাছ থেকে ছয় ডলার চুরি করেছিল বলে দুর্ঘটনায় পতিত হয়েছিল? তবে এটা ঠিক  যে, মৃত্যু তাদের দিকে এগিয়ে আসছিল, এবং কোন না কোন ভাবে তাদের মৃত্যু ঘটতই।

তুমি যদি ঈশ্বরে বিশ্বাস কর, তবে তোমাকে এটা বিশ্বাস করতে হবে। আর যদি তুমি ঈশ্বরে বিশ্বাস না কর, তবে ভিন্ন কথা।

তাদের দাদীমা শহরতলির একটা জুতার দোকানের উপরে বাস করতেন। তার এপার্টমেন্টটি প্রধান সড়কের দিকে মুখ করা ছিল। তারা সাইকেলে করে সেখানে গেলে তিনি তাদেরকে আঙুরের জুস অথবা লেমনেড পান করতে দিতেন। চাইতেন যে, তারা কিছুক্ষণ তার সাথে থাকুক। একজন একাকী বৃদ্ধা। তিনি সবসময়ে আমার সাথে ভাল আচরণ করতেন। রিয়া ও রোদা তার নিকট হতে থেকে চুরি করে খারাপ কাজ করেছিল। কিন্তু তারা তো  সেরকমই ছিল। তাদের একজন কিচেনে দাদীমার সাথে কথা বলছিল এবং অন্যজন কোন ধরণের পরিকল্পনা ছাড়াই বাথরুমে গিয়েছিল এবং সেখান থেকে বেডরুমে প্রবেশ করে তার পার্স থেকে অর্থ নিয়েছিল। এই কাজটা তারা প্রায়ই করত। কোন ধরণের বিকার ছাড়াই। কি করেছ তুমি? রোদা হাসতে হাসতে রিয়াকে বলত। কারণ, সে জানত যে রিয়া কিছু একটা করেছে যা তার করা উচিৎ হয়নি। অতঃপর তারা পরস্পরকে খোঁচা দিতে শুরু করত এবং হাসি সংবরণ করার চেষ্টা করত, যতক্ষণ না তারা দাদীমা থেকে নিরাপদ দূরত্বে চলে যেত।

সাইকেলের প্যাডেলের উপরে সোজা দাঁড়িয়ে তারা পাহাড়ের ঢালু দিয়ে নামত। কখনই ব্রেক ব্যবহার করত না।

রিয়া ও রোদা সবসময়েই বলত যে, তাদের পক্ষে আলাদা থাকা সম্ভব না। এমনকি মৃত্যুর সময়েও না।

একবার তারা কোথাও থেকে কিছু অর্থ পেয়েছিল। আমাদেরকে বলেনি কোত্থেকে। সেই টাকা দিয়ে তারা আমাদের সবাইকে মুভির  টিকেট কিনে দিয়েছিল এবং অবশিষ্ট টাকা দিয়ে আইসক্রিম খাইয়েছিল।

তুমি হয়ত খুবই মনোযোগ দিয়ে পত্রিকা পড়েছ, কিন্তু আমি নিশ্চিত যে, তুমি জান না, সেদিন রজার হুইপল  আসলে কি করেছিল। বড়রা অনেকদিন ধরে ঘটনাটি নিয়ে আলাপ করত। কিন্তু আমরা ছোটরা সে সম্পর্কে কিছুই শুনতে পেতাম না। আমি ভাবতাম যে, রজার হুইপল একটি আইস পিক (ice pick) ব্যবহার করেছিল। অথবা এমনও হতে পারে যে, আমারই মত কেউ একজন যে কম জানত, সে আমাকে এটা বলেছিল।

রিয়া ও রোদা’র হত্যা সংক্রান্ত আলাপচারিতাগুলো শোনার জন্যে আমরা  খুবই আকর্ষণবোধ করতাম। কিন্তু আমরা  কখনই মেনে নিতে পারতাম না যে, তারা মরে যাবে। কারণ আমরা তাদেরকে আমরা খুবই পছন্দ ও মিস  করতাম। আমাদের দশম গ্রেডের সময়ে কফম্যান (Kaufmann) পরিবারের দুই যমজ আমাদের স্কুলে ভর্তি হয়েছিল। তাদের নাম ছিল ডরিস ও ডায়ানা। কিন্তু তাতে আমাদের ভেতরে রিয়া ও রোদার অভাব পূরণ হয়নি।

রজার হুইপল বলেছিল যে, ঘটনার কিছুই তার স্মৃতিতে নেই এবং সে কি করেছিল সে সম্পর্কে মনে করতে পারছে না সে। প্রথমে সবাই  ভেবেছিল যে, সে মিথ্যে বলছে। কিন্তু পরবর্তীতে তার কথা সত্য বলেই  মেনে নিতে হয়েছিল। সরকারী হাসপাতেলের একজন ডাক্তার তাকে পরীক্ষা করেছিলেন। তিনিও বার বার বলছিলেন যে, রজার হুইপল কিছুই করেনি এবং সে মনেও করতে সক্ষম নয় যে সেদিন বিকেলে যমজ বোনেরা তার ওখানে গিয়েছিল। তবে তাদের বাইসাইকেল দুটো তার সিঁড়ির নীচে কেন ছিল এবং কেনই বা সে সেদিন দুপুরে স্নান করেছিল এই বিষয় দুটো সে ব্যাখ্যা করতে পারেনি। তার পরিবারের সদস্যরাও স্বীকার করেছিল যে, মধ্য দুপুরে স্নান করার কোন রেওয়াজ হুইপলস পরিবারে ছিল না।

রজার হুইপল ছিল একটি পরিচ্ছন্ন বালক। আমরা প্রায়ই লক্ষ্য করতাম যে, সে বার বার ঘষে ঘষে তার হাত ধৌত করত। তার কাজ ছিল ট্রাকের ভেতরে বরফের টুকরাগুলোকে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে স্থাপন করা এবং সেগুলোকে কিচেনের আইসবক্সে রাখা। সে পাগলের মতো আচরণ করত, যদি সে তার নখের নীচে অথবা কাপড়ের ভেতরে কোন খড়কুটো পেত। তাকে শেইভ করা শেখানো হয়েছিল এবং সে প্রতিদিন সকালে নিয়মিতভাবে শেইভ করত। দাঁড়ি একটু বড় হলেই খুব খসখসে অনুভব করত, এমনকি ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে পড়ত।

কয়েক বছর পরে তার বোন লিন্ডা আমাদেরকে বলেছিল যে, রজারের শরীর ছিল ঘোড়ার মত। বলার পর নিজের ঊরুসন্ধির দিকে নির্দেশ করেছিল, যাতে আমরা বুঝি যে, সে কি বোঝাতে চাচ্ছে। বলেছিল যে, কাকতালীয়ভাবে রজারের শরীর সে কয়েকবার দেখেছিল।

রজার হুইপল ধুলার ভেতরে হাঁটু গেড়ে বসে হাসছিল। মাথা নিচু করে। রিয়া ও রোদা বাইসাইকেলে চড়ে তার চারপাশে চক্কর দিচ্ছিল। এটা ছিল একটা কঠিন ধরণের খেলা। দুই বোন চেষ্টা করছিল সাইকেলের উপরে থেকে তারা রজারের কত নিকটে যেতে পারে এবং চাকার উপরের কভার (bike fenders) দিয়ে তাকে স্পর্শ করতে পারে কিনা। রোজারও নিজেও লাফ দিয়ে তাদেরকে ধরার চেষ্টা করছিল এবং খেয়াল করছিল না যে, তার আঙুল গিয়ে চাকার স্পোকে আঘাত করলে সে আহত হতে পারে। আইস হাউজের পেছনের উঠোনটি রেলের ডেপোর অন্য একটা পরিত্যাক্ত উঠোনের সাথে সংযুক্ত ছিল। উঠোনটি সূর্যের নীচে উত্তাপে পুড়ে যাচ্ছিল এবং যমজ দুই বোনের পেছনে ধুঁয়া উঠছিল, মেঘের মতো। খুব দ্রুতই তারা ক্লান্ত হয়ে গিয়েছিল, যদিও রজার হুইপল তার ভারী ওভারলস (overalls) পরেও চাচ্ছিল খেলা চালিয়ে যেতে। তার মুখ উত্তেজনায় লাল হয়ে ছিল। সে ছিল একটা বালক যে খুব হাসতে চাইতো, কিন্তু তার সে সুযোগ ছিল না। রিয়া তাকে বলেছিল যে, সে তৃষ্ণার্ত।  কিছু বরফ চায়। রজার দ্রুততার সাথে উপরের তলায় গিয়েছিল আইস কিউবের একটি বড় ব্যাগ আনতে। এর চেয়ে বেশী কিছু সে মনে করতে সক্ষম হয়নি।

দুই বোন আইস কিউবগুলো চুষে চুষে পান এবং অকারণে সেখানে অবস্থান করেছিল। রজার হুইপল হাঁপাচ্ছিল এবং কুকুরের অভিনয় করে জিহ্বা বের করেছিল। রিয়া ও রোদা চিৎকার করে তাকে বলছিল,  কুকুর, কুকুর এখানে!  অতঃপর তারা আইস কিউবগুলো রজার হুইপলের দিকে ছুঁড়ে দিয়েছিল। রজার হুইপল তা মুখ দিয়ে ধরার চেষ্টা করেছিল। কিছুক্ষণ পর যমজ বোনেরা অবশিষ্ট আইস কিউবগুলোকে ময়লার মধ্যে নিক্ষেপ করেছিল। তখন রজার হুইপল বলেছিল যে, তার কাছে তার ভাই এয়ামনের কিছু গোপন জিনিস আছে, যেগুলো সে তার তোষকের নীচে লুকিয়ে রেখেছে। তারা চাইলে সে তাদেরকে সেগুলো দেখাতে পারে।

সে কোনটা রিয়া ও রোদাকে আলাদা করে সনাক্ত করতে সক্ষম ছিল না। তবে আমাদের মধ্যে কেউ কেউ বলতে পারত তাদের মুখের ছুলি ও চোখের রঙ থেকে। রিয়ার মুখের ছুলি রোদার মুখের ছুলির চেয়ে কিছুটা গাঢ় ছিল।  রিয়ার চোখগুলো অধিকতর কাল ছিল রোদার চাইতে। তবে পার্থক্য বুঝতে হলে তাদেরকে পাশাপাশি দাঁড়াতে হতো।

রিয়া বলেছিল যে, সে গোপন জিনিসগুলো দেখতে চায়। সে তার বাইসাইকেলকে কাত করে রেখে পাশেই পা ছড়িয়ে বসেছিল।

রজার হুইপল বলেছিল যে, সে একবারে শুধুমাত্র একজনকে উপরের তলায় তার কক্ষে নিয়ে যেতে পারে। কেন, তা সে বলেনি। ঠিক আছে, রিয়া বলেছিল। দুই যমজ বোনের ভেতরে যে কোন বিষয়ে রিয়া সব সময়ে প্রথম উদ্যোগ নিত। সে জন্মগ্রহণও প্রথমে করেছিল এবং ওজনও রোদার চেয়ে ছিল এক অথবা দুই পাউন্ড বেশী।

রজার হুইপলের কক্ষটি ছিল একটি অদ্ভুত জায়গায়। হুইপল হাউজের দ্বিতীয় ফ্লোরে একটা স্টোরের উপরে। ওটা   মূল বাড়ি তৈরী করার পর নির্মিত হয়েছিল। কাঠের একটি নড়বড়ে সিঁড়ি দিয়ে উপরে উঠার পর বাড়ির বাইরে থেকেই সেই কক্ষে যাবার একটি পথ ছিল। এই পথ দিয়ে রজার বাসার ভেতরে প্রবেশ না করেই তার কক্ষে আসা যাওয়া করত। প্রতিবেশীরা বলত হুইপলস পরিবার তাকে সেখানে জন্তুর মতো বাস করতে দিয়েছিল। তারা চায়নি সে বাসার ভেতরে চলাফেরা করুক। কক্ষটির ভেতরের দিকেও একটা দরজা ছিল।

ঘটনার দিন রজার হুইপলের ওজন ছিল এক শত নব্বই পাউন্ড। হাসপাতালে নেয়ার পর সে বেলুনের মত ফুলে গিয়েছিল। লোকজন বলত ড্রাগের কারণে ফুলে গিয়েছিল। তার চামড়া ব্রেডের ময়দার মতো নরম ও সাদা হয়ে গিয়েছিল এবং তার চুল পড়ে গিয়েছিল। একত্রিশ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করার সময়ে সে একজন বৃদ্ধ লোকে পরিণত হয়েছিল।  ঠিক কি কারণে সে মারা গিয়েছিল, তা হুইপলস পরিবার বলতে পারেনি। হাসপাতাল থেকে  বলা হয়েছিল যে, ঘুমের ভেতরে তার হৃদস্পন্দন থেমে গিয়েছিল।

রোদা তার বোনকে রজার হুইপলের সাথে দৌড়ে সিঁড়ি দিয়ে উঠতে দেখেছিল এবং কিছুটা ভয় পেয়েছিল। তার মনে হয়েছিল কিছু একটা ভুল হচ্ছে বা হতে যাচ্ছে। সে ঘ্যানঘ্যান করে বলেছিল যে, সেও তাদের সাথে উপরে  আসতে চায়। নীচে একাকী অপেক্ষা করতে চায় না। কিন্তু রিয়া তাকে চুপ থাকতে এবং অপেক্ষা করতে বলেছিল। সুতরাং সে অপেক্ষা করছিল এবং বিরক্তি সহকারে ময়লার ভেতরের আইস কিউবগুলোকে লাথি দিচ্ছিল। কিছুক্ষণ পর সে অস্থির হয়ে উঠেছিল এবং চিৎকার চেঁচামেচি করছিল। কক্ষটির দরজা তখন বন্ধ ছিল এবং ভেতর থেকে জানালা আটকে দেয়া হয়েছিল। রোদা তাদেরকে  উদ্দেশ্য করে বলেছিল যে, সে বাড়িতে চলে যাচ্ছে। তার পক্ষে  অপেক্ষা করা সম্ভব নয়। কিন্তু দরজায় কেউ আসেনি বা জানালা দিয়ে কেউ তাকায়নি। রোদার মনে হচ্ছিল যে, কক্ষটি খালি। দরজার কাঠে ভীমরুল বাসা করেছিল। সেটিকে দেখতে কাদামাটির তৈরি বলে মনে হচ্ছিল। সেখান থেকে ভীমরুলের শব্দও ভেসে আসছিল।

রোদা রাস্তার দিকে সাইকেল চালিয়েছিল, যাতে কেউ দেখলে মনে করে যে, সে আসলেই বাড়িতে চলে যাচ্ছে। সে  ভাবছিল যে, সে রিয়াকে ঘৃণা করে। ঘৃণা করে এই জঘন্য জমজ বোনকে! বিরক্তিতে মনে মনে চাচ্ছিল রিয়া মরে যাক। বাসায় ফিরে গিয়ে প্রথমেই সে তার মাকে বলবে যে, রিয়া দাদীমার নিকট হতে ছয় ডলার চুরি করেছে, যা এখনও তার পকেটে আছে।

হুইপলদের বাসস্থানটি ছিল একটি পুরোনো ফার্মহাউজ। তারা সেটিকে আধুনিক করতে চেয়েছিল সেটির দেয়ালে লাল এসফল্ট (asphalt) দিয়ে, যাতে তা ইটের তৈরি বলে মনে হয়। বাসস্থানটির নীচের তলার কক্ষগুলো ছিল বড় বড়, কিন্তু উপরের  তলার কক্ষগুলো ছিল ছোট ছোট। এই কক্ষগুলোর কয়েকটার নির্মানকাজ অসম্পূর্ণ  অবস্থায় ছিল। ফ্লোরবোর্ড দিয়ে ঢেকে রাখা হয়েছিল। অনেকটা রজার হুইপলের কক্ষের মতো। রজার হুইপলের কক্ষটিকে লোকজন পুলিশের কাছে পশুর খোঁয়াড় বলে অভিহিত করেছিল। সেটির এককোণে একটি বিছানা ঢোকানো ছিল। এছাড়াও কিছু আসবাবপত্র, বাক্স ও জিনিষপত্র মিসেস হুইপল সেখানে মজুত করে রেখেছিলেন।

হুইপল পরিবারের সাতজন সদস্য সেই বাসস্থানে বাস করছিল। এদের মধ্যে মিসেস হুইপল এবং মেয়ে আইরিস ঘটনার দিন বিকেলে বাসায় ছিল। তারা বলেছিল যে, বাসার পেছনে বাচ্চাদের খেলাধুলার শব্দ ছাড়া অন্য কোন শব্দই তারা শুনেনি। শপথ করে বলেছিল।

রিয়াকে রেখে রোদা বাড়িতে চলে যাবার জন্যেই মনঃস্থ করেছিল। কিন্তু ড্রাইভওয়ের শেষপ্রান্তে আসার পর কিছু একটা তাকে বাধ্য করেছিল সাইকেলের চাকা উল্টোদিকে ঘুরাতে। এই সময়ে তুমি যদি তাকে দেখতে, তাহলে তোমার কাছে মনে হতো যে, সে কিছু একটা করার উদ্দেশ্যে ইতস্তত ঘোরাফেরা করছে। লাল চুলের সাদাটে চামড়া ও ছুলিযুক্ত একটি শীর্ণকায় ছোট্ট শরীর নিয়ে রাগান্বিতভাবে সে সাইকেল চালাচ্ছিল। একবার দ্রুত গতিতে, পরক্ষণেই ধীরগতিতে, আবার দ্রুত গতিতে। এবং রিয়ার উপরে অগ্নিশর্মা হয়ে উঠেছিল। কিন্তু এক ধরণের ভয়ও  পাচ্ছিল সে এবং পাকস্থলীর ভেতরে অসুস্থতা অনুভব করছিল। তার মনে হচ্ছিল যে, তার ও রিয়ার কখনই পৃথক দুই জায়গায় থাকা উচিৎ নয়। এতে তাদের একজনের অথবা দুজনেরই কিছু একটা অমঙ্গল ঘটতে পারে। কিছু একটা, যা আমরা জানতাম।

সুতরাং সে বাসাটির দিকে প্যাডেল চালিয়ে পুনরায় ফিরে গিয়ে সাইকেলটিকে ময়লার কাছে রিয়ার সাইকেলের পাশে রেখেছিল। সাইকেল দুটো ছিল অন্যদের কাছ হতে পাওয়া। সেগুলোর কিকস্ট্যান্ড ভেঙে গিয়েছিল। কিন্তু সেই গ্রীষ্মের শুরুতে সেগুলোতে তাদের পিতা নতুন গুডইয়ার (Goodyear) টায়ার লাগিয়ে দিয়েছিলেন। সাইকেল দুটোতে তিনি তেলও দিয়ে দিয়েছিলেন।

তাদের বাইসাইকেলদ্বয়কে কখনই একাকী কোথাও দেখা যেত না। সবসময়েই দেখা যেত দুটোকেই একসাথে মাটিতে শুইয়ে রাখা হয়েছে। দুটোই একদিকে মুখ করে রাখা এবং সেগুলোর প্যাডেলও প্রায় একই পজিশনে রাখা।

রিয়া দ্বিতীয় তলার দিকে তাকিয়েছিল। জানালা তখনও আটকানো ও দরজা বন্ধ ছিল। সিঁড়ি দিয়ে উপরে উঠতে উঠতে সে জোরে জোরে ডেকেছিল, রিয়া? রিয়া, তুমি কোথায়? যথেষ্ট শব্দ করেই সে ডেকেছিল যাতে তারা তাকে শুনতে পায়। একই সাথে জোরে জোরে সে রেলিং ধরে  টানছিল, যেমন করে ছেলেরা সেটিকে ভাঙার চেষ্টা করে। তার পরেও সে ভয় পাচ্ছিল। কিন্তু উচ্চ স্বরে কথা বলা ও বীতশ্রদ্ধ বা পাগলপ্রায় ভাবের কারণে তার ভেতরে একধরণের  শক্তির সঞ্চার হচ্ছিল। এই সময়ে রজার হুইপলকে দেখা গিয়েছিল খোলা দরজার সামনে দাঁড়িয়ে রোদার উত্তেজিত  ও ঘর্মাক্ত মুখের দিকে তাকিয়ে থাকতে। কিছুটা সন্ত্রস্তভাবে। তবে তাকে দেখে মনে হচ্ছিল যে, সে রোদাকে সম্পূর্ণই ভুলে গেছে। নিজের জামার উপরে সে হাত মুছছিল এবং চোখ থেকে লেবুর রঙের আলো বেরুচ্ছিল। পরবর্তীতে রজার বলেছিল যে, কোন কিছুই মনে করতে পারেনি। একেবারেই না।

রজারের বয়ঃপ্রাপ্ত শরীর ও গোলাকৃতির কাঁধ থেকে বোঝা দুষ্কর ছিল যে, তার উচ্চতা বা বয়স কত ছিল। তার খড়ের রঙের চুল চোখের উপরে পড়ছিল এবং তার আঙুলগুলো কুন্ডলী পাকানো ছিল। মনে হচ্ছিল যে, সে প্রার্থনা করছে। নিজের সর্বশক্তি দিয়ে। যমজরা তার কক্ষে এসেছিল কিনা, তা সে মনে করতে পারেনি এবং তার কক্ষে  রক্ত ছিল কেন, তাও ব্যাখ্যা করতে পারেনি। কিন্তু সে চিৎকার করে কেঁদেছিল এবং ভাব দেখিয়েছিল যে, সে ভয় পেয়েছে এবং অনুতপ্ত বা দুঃখিত হয়েছে। সুতরাং তারা সিদ্ধান্ত নিয়েছিল যে, তাকে বিচারের সম্মুখীন করার কোন মানে হয় না।

এরপর থেকে মিসেস হুইপল নিজেকে ঘরের ভেতরে আবদ্ধ রাখতেন। কখনই বাইরে যেতেন না। এমনকি চার্চে বা মুদীর দোকানেও না। রজার মারা যাবার কয়েক মাস পর তিনি ক্যান্সারে মারা গিয়েছিলেন। তিনি তার ছেলেকে ভালবাসতেন। সবসময়ে বলতেন যে, তার ছেলের কোন দোষ ছিল না। সে পশুদেরকে আঘাত করার মতো বালকও ছিল না। সে বিড়াল ভালবাসত এবং সে ছিল ভদ্র, বাধ্যগত ও ধার্মিক। যা কিছুই ঘটেছে সেই মেয়ে দুটো তাকে  টিজ করার কারণেই ঘটেছে। সারাজীবন রজারকে শিশুরা টিজ ও উপহাস করার ফলে তার হৃদয় ভেঙে গিয়েছিল এবং সেইদিন নিশ্চয়ই কিছু একটা তাকে খুবই কষ্ট দিয়েছিল।

হুইপলরাই পুলিশ ডেকেছিল। মিঃ হুইপল মেয়ে দুটোর মৃতদেহ আইস হাউজেই খুঁজে পেয়েছিলেন। খড়ের গাঁদা ও কাপড়ের নীচে লুকানো অবস্থায়।পাশাপাশি। একই রকমের দেখতে ছিল তারা এবং পাশাপাশি শুয়েছিল। তিনি তাদেরকে খুঁজে পেয়েছিলেন রাত নয়টার দিকে। তিনি বলেছিলেন, তিনি জানতেন।

যেহেতু রজার ভিন্ন ধরণের আচরণ করছিল এবং যেহেতু কুইনকেল যমজদের পাওয়া যাচ্ছিল না, সেহেতু খবরটা দ্রুতই পুরো শহরে ছড়িয়ে পড়েছিল। মধ্য দুপুরে রজারের স্নান করা, বারবার মাথার চুল ধোয়া এবং কারও কোন প্রশ্নের উত্তর না দেয়া এগুলো থেকে লোকজনের সন্দেহ হলে তারা রজারের কক্ষে যায় এবং রক্ত দেখতে পায়। সুতরাং তারাও জানত।

মিঃ হুইপল বলেছিলেন যে, তার জীবনের সবচেয়ে কঠিন সময় ছিল যখন তিনি আইস হাউজে কাপড়ের ক্যানভাসটাকে সরাচ্ছিলেন দেখার জন্যে যে, ওটার নীচে কি আছে।  ঘটনাটি তাকেও ভীষণ আঘাত  করেছিল, যে আঘাত তিনি কখনই কাটিয়ে উঠতে পারেননি। তিনি ভাবতেন যে, বেশীরভাগ মানুষই তাকে দোষ দিত। ছেলেকে ঠিকভাবে বড় না করার জন্যে। তিনি ছিলেন একজন পুরোনো আমলের মানুষ। যথারীতি ধর্মকর্ম পালনকারী। তিনি সবকিছুকেই গুরুত্বসহকারে গ্রহণ করেছিলেন। তবে এতে  তার কোন লাভ হয়নি। তিনি বিশ্বাস করতেন যে, যীশুই তার রক্ষাকারী এবং কখনই তিনি রজারকে ভালবাসা থেকে বিরত হননি। তিনি ভাবতেন যে, রজার যদি সত্যিকার অর্থেই কোনদিন অনুতপ্ত হয়, তবে সে বেঁচে যাবে। সেক্ষেত্রে স্বর্গে তার সাথে হুইপল পরিবারের সবার পুনর্মিলন হবে। কিন্তু তার বিশ্বাস কোন কাজে আসেনি।

আইস হাউজটি এখনও আছে। তবে তালাবদ্ধ ও পরিত্যাক্ত অবস্থায়। হুইপলদের বরফের ব্যবসা অনেক পূর্বেই শেষ হয়ে গিয়েছিল। বর্তমানে এখানে আগন্তুকেরা বাস করে। এবং এটার উঠোনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে মরিচা পড়ে যাওয়া কয়েকটি কার, পিক আপ ও ট্রাকের শরীর। হুইপল পরিবারের সদস্যদের কেউ কেউ এখন গ্রামে বাস করে। কিন্তু তাদের কেউই এই শহরে বাস করে না।

আমার বিয়ের কয়েক বছর পর এক যুবকের সাথে আমি এক অদ্ভুত সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ি। আমি যুবকের নাম বলব না। কারণ নাম এখানে গুরুত্বপূর্ণ নয়। কিন্তু তার সাথে আমার সাক্ষাৎ হতো হুইপলদের বাসার পেছনের সেই আগাছা ও গুল্ম আচ্ছাদিত উঠোনে। সেখানে গেলেই আমি শিশুদের মতো বন্য হয়ে উঠতাম। অথবা মাতাল হবার শেষ পর্যায়ে থাকতাম। সেই যুবকের জন্যে আমি এতটাই পাগলপ্রায় হয়ে যেতাম যে, আমি অন্য কিছুর কথা চিন্তা করতে পারতাম না। আমরা সেখানে পরস্পরের সাথে শারীরিক সম্পর্কে মিলিত হতাম। দুই বা তিন বছর পর্যন্ত আমার এই সম্পর্ক চলেছিল। অতঃপর একদিন অকস্মাৎ শেষ হয়ে গিয়েছিল। যেমন করে এই ধরণের  সম্পর্কগুলো শেষ হয়ে যায়।

এখন আমি পেছন ফিরে সেই নারীকে চিনতে পারি না। মনে হয় সেটা কখনই আমি ছিলাম না। সেটা ছিল অন্য কোন উন্মত্ত নারী, যাকে আমি ঘৃণা করি। সেটা ছিল একটা গল্পের জীবন যাপন, যার সাথে আমার কোন সম্পর্ক নেই।

রিয়া ও রোদাকে আমি আইস হাউজের পেছনে কল্পনা করতাম। ভাবার চেষ্টা করতাম, সেদিন আসলেই কি ঘটেছিল রজার হুইপলের কক্ষে। ফিউনারেল পার্লারে যমজ দুই বোনকে লাগছিল পুতুলের মতো। তাদের চোখগুলোকেও মনে হচ্ছিল পুতুলের চোখ, যেগুলো বন্ধ হয়ে যায়, যখন তুমি তাদেরকে কাত করে শুইয়ে দাও।

একরাতে আমি বিছানায় শুয়ে ছিলাম, কিন্তু ঘুমাচ্ছিলাম না। তখন আমি দেখতে পেয়েছিলাম যে, আমার বাবা-মা দুজনেই আমার বেডরুমের দরজায় দাঁড়িয়ে আছেন। আমি জানতাম যে, তারা রিয়া ও রোদা ও আমাকে নিয়ে ভাবছিলেন। ভাবছিলেন যে, কিভাবে তারা আমাকে নিরাপদে রাখতে পারেন। কিন্তু আমি নিশ্চিত যে, তাদের কাছে  কোন স্পষ্ট জবাব  ছিল না।

সেই উঠোনে যুবকের গাড়িতে তার বাহুলগ্ন হয়ে আমার মন ভেসে যেত। আমি দেখতে পেতাম, রোদা রজার হুইপল থেকে সিঁড়ির কয়েক ধাপ নীচে দাঁড়িয়ে ইতস্তত করছে। তার সাদা মুখ ভয়ার্ত হয়ে আছে। তবুও সে সিদ্ধান্ত নিচ্ছে উপরে উঠার। চেষ্টা করছে রজার হুইপলকে ধাক্কা দিয়ে তার কক্ষে প্রবেশ করার এবং রিয়াকে খুঁজে বের করার। রজারকে সামান্য স্পর্শ করে তাকে কক্ষের ভেতরে যেতে হয়েছিল। কারণ, রজার যেভাবে দাঁড়িয়েছিল, তাতে মনে হচ্ছিল যে, সে রোদার ভেতরে ঢোকার পথে বাঁধার সৃষ্টি করছে। কিন্তু বাস্তবে কাউকে বাঁধা দেয়ার মত স্নায়বিক শক্তি তার ছিল না। সে নিজের শরীরের গন্ধ শুঁকছিল এবং জোরে জোরে শ্বাস নিচ্ছিল। কিন্তু তা পূর্বের মত রিয়া ও রোদাকে হাসানোর জন্যে কুকুরের অনুকরণ করে জিহ্বা বের করে নয়। রোদা জিজ্ঞেস করছিল, রিয়া কোথায়? বাইরের উজ্জ্বল আলো থেকে অন্ধকারাচ্ছন্ন ছোট্ট কক্ষের ভেতরে প্রবেশ করায় সে প্রথমে ভালভাবে দেখতে পাচ্ছিল না। রজার হুইপল বলেছিল যে, রিয়া বাড়িতে চলে গেছে। তার কণ্ঠস্বর খসখসে মনে হচ্ছিল। যেন অনেকক্ষণ সে তা  ব্যবহার করেনি। সে বাড়িতে চলে গেছে, রজার পুনরায় বলেছিল। কিন্তু রোদা তার মুখের উপরে বলেছিল যে, রিয়াকে ছাড়া সে বাড়িতে ফিরবে না। এরপর রজার হুইপল তার কাছে এসে বলেছিল, সত্যিই সে চলে গেছে। সে ক্রমশ রাগান্বিত হয়ে যাচ্ছিল। রোদা তাকে বিশ্বাস করছিল না বলে।  রোদা ডাকছিল, রিয়া, তুমি কোথায়? এবং সেই সময়ে সে হোঁচট খেয়েছিল মেঝেতে পড়ে থাকা কোন কিছুর সঙ্গে, যা একটা বিছানার চাদর দিয়ে ঢাকা ছিল।

রোদার পেছনে দাঁড়িয়েছিল সেই বড় বালক, যে বার বার বলছিল, রোদা চলে গেছে। তার কণ্ঠস্বর ক্রমশ উচ্চকিত হচ্ছিল। কিন্তু এতটা  উচ্চকিত নয় যে, কেউ তার কথা শুনে ফেলবে এবং মেয়েটিকে রক্ষা করার জন্যে এগিয়ে আসবে।

আমি সেখানে ছিলাম না, কিন্তু তোমরা সবাই জান যে, সেখানে কি ঘটেছিল।

                    সমাপ্ত 

পাঠকের মতামত

Comments are closed.