268075

৩০০০ বছরের পুরনো মমি, জানা গেল মানুষের নয়

মৃত্যু নিয়ে মিসরীয়দের নানা কুসংস্কার ও রীতি ছিল। মৃত্যুর পরের জীবন উপভোগের জন্য মিসরীয়রা মৃতদেহকে মমি করত একথা সবারই জানা। মিসরীয়রা তাদের মমি আর পিরামিডের জন্যই সারাবিশ্বে কৌতূহলের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে। হাজারো বছরের পুরনো সব পিরামিড রহস্য আজো অনেকাংশেই অজানা। তবে এ যুগের বিজ্ঞানীদের আশার আলো দেখিয়েছে মমি।

বর্তমানে মিসরীয় গবেষকরা অনেক মমির সন্ধান পেয়েছেন যেগুলো মিসরের ফারাও, তাদের রানি, সন্তান এবং অন্যান্য সম্ভ্রান্ত পরিবারের মানুষদের। মৃত্যুর পরের জীবনও যাতে সুখের হয় এজন্য মমির সঙ্গে মহামূল্যবান সম্পদও দিয়ে দেয়া হত তখনকার দিনে।

সাধারণত মিসরের ফারাও রাজা, তাদের পরিবারবর্গ এবং সমাজের উচ্চশ্রেণির মানুষদের মমি করা হয়। যাতে তাদের সম্মান আর ক্ষমতা সারাজীবন বিদ্যমান থাকে। আর এসব মমি সংরক্ষণেরও ছিল বিশাল ব্যবস্থা। পিরামিডেই বেশি সংরক্ষিত আছে এসব মমি।

ধারণা করা হয়, মমি সংরক্ষণের জন্যই তৈরি করা হয়েছিল পিরামিড। তবে শুধু যে বিশিষ্ট ব্যক্তিদেরই মমি করা হত, তা কিন্তু নয়। তাদের প্রিয় পোষ্যদেরও মমিও পাওয়া গেছে। কারো পোষা পাখি, কুকুর অথবা অন্য প্রাণীদের মমিও করা মনিবের মৃত্যুর পর। কয়েকদিন আগেই তেমনই দুটি মমি পাওয়া গেছে। যেগুলো বাক্সের ভেতর ছিল এবং খুবই ছোট আকৃতির।

পাখির মমি

পাখির মমি

প্রথমে গবেষকরা মনে করেন, এটি কোনো শিশুর মমি হবে হয়তো! তবে মমির কফিনটা খোলার পরই তাজ্জব বনে যান তারা। ভেতরে ছিল একটি পাখি আর কাঠ, কাদা এবং বিভিন্ন উদ্ভিদ দিয়ে তৈরি একটি ছোট্ট মানুষের পুতুল। গবেষকরা ভেবেই পাচ্ছিলেন না পুতুলের মমি করার কি দরকার পড়েছিল মিসরীয়দের।

তাদের ধারণা মমিগুলো ২৫০০ থেকে ৩০০০ বছর আগের হতে পারে। এই ক্ষুদে মমির সিটি স্ক্যানিং করে জানা যায়, এটি একটি পাখির মমি আর সঙ্গে থাকা পুতুলটি ছিল প্রাণহীন। ধারণা করা হয়, পাখিকে যেহেতু তারা দেবতা হরসের প্রতিনিধিত্বকারী ভাবত। তাই এটি হয়তো কারো পোষা ছিল। মারা যাওয়ার পর এর মমি করা হয়। সঙ্গে দেবতা হরসের একটি প্রতিমূর্তি তৈরি করে একই কফিনে রাখা হয়।

কফিনের ভেতর প্রচুর শস্য ছিল। হয়তো মৃত্যুর পরও যাতে পাখিটির খাবারের কষ্ট না হয় তাই এগুলো দেয়া হয়েছিল। বর্তমানে এই মমি রাখা আছে হাইফা যাদুঘরে। সেখানকার গবেষক রন হিলেল বলেন, একে শস্যের মমি বা কর্ন মমি হিসেবে ডাকা হয়। তিনি আরো বলেন, মিসরে যখন কাউকে মমি করা হত তখন তার দেহ পাহারা দেয়ার জন্য অনেক সময় এমন পাখি বা কোনো প্রাণীকে তার সঙ্গেই সমাধি দেয়া হত।

এই গবেষক দলের একজন ডা. জাভিট বলেন, প্রাচীন মিসরীয়রা অসংখ্য প্রাণীকে কবর দিয়েছিল। যার মধ্যে রয়েছে বিড়াল, কুমির, মাছ। এদের মৃত্যুর পর যাতে সঙ্গের ব্যক্তির খাওয়ার কষ্ট না হয় আর সে যাতে নিরাপদ থাকে। তবে পাখিরা প্রাচীন মিসরে মৃত্যুর পরেও খুব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করত বলে ধারণা ছিল।

পাখি ও পুতুলের মমি

পাখি ও পুতুলের মমি

কারণ পাখিকে তারা রক্ষাকর্তা হিসেবে বিবেচনা করত। ফেরাউনের সমাধির আশেপাশে প্রায়শই মমি করা পাখির নিদর্শন পাওয়া যায়। এবারের পাওয়া পাখির মমিও হয়তো কোনো ফারাওয়ের দেহরক্ষী হিসেবে সমাধিস্থলে ছিল।গবেষণা দলটি প্রচলিত সিটি স্ক্যানিংয়ের সঙ্গে দ্বৈত সিটি স্ক্যানিংও করে। যাকে বলা হয় স্পেকট্রাল সিটি।

যা মমির শরীরের ঘনত্ব প্রকাশ করার একটি গণনা করা টোমোগ্রাফি। তবে এই মমিটির কোনো হাড় বা টিস্যু তারা পাননি। এর থেকেই তারা নিশ্চিত হন এটি মানুষের না বরং একটি হাতে গড়া পুতুলের মমি। যেহেতু প্রাচীন মিসরীয়রা আত্মার অমরত্বে বিশ্বাসী ছিল। তাই মৃত্যুর মুহূর্তটিকে একটি সাময়িক বাধা হিসেবে বিবেচনা করত তারা।

মৃত্যুর পর জীবনের ধারাবাহিকতা নিশ্চিত করতে তারা নিজেদের পরে দেবতাদেরও স্থান রাখত। তাই দেবতার আদলের পুতুল মৃত্যুর পর তাদের মমির সঙ্গেই সমাধি দিত। তবে প্রাপ্ত পাখি আর পুতুলের মমি নিয়ে এখনো গবেষণা শেষ হয়নি। গবেষকরা আরো রহস্য উন্মোচনের চেষ্টা চালাচ্ছেন।

সূত্র: অ্যান্সাইন্টঅরিজিন

পাঠকের মতামত

Comments are closed.