268036

ক্যামেরা নিয়ে তিন বছর জঙ্গলে, অতঃপর দেখা মিলল ব্ল্যাক প্যানথারের

প্রাণীজগত সম্পর্কে জানার কৌতূহল সবার মধ্যেই কমবেশি থাকে। এজন্য ন্যাশনাল জিওগ্রাফি বা ওয়াইল্ড লাইফ ভিডিও বা ছবি দেখেন অনেকেই। বর্তমানে অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ও ভালো রেজ্যুলেশনের ক্যামেরা দিয়ে ফ্রেমবন্দী করা হয় অনেক হিংস্র প্রাণীদেরকেও।

বন্যপ্রাণীদের নিয়ে বিভিন্ন ডকুমেন্টরিও তৈরি হয় এখন। তবে কখনো কি ভেবে দেখেছেন যারা এসব ছবি তোলেন অর্থাৎ ফটোগ্রাফার বা সিনেমাটোগ্রাফার তাদের অভিজ্ঞতা কেমন? তাদের ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতার কথা আমরা অনেকেই জানতে পারি না।

কালো চিতা বাঘ

কালো চিতা বাঘ

হিংস্র এসব প্রাণীর ছবি বা ভিডিও সংগ্রহ করতে অনেক সময় জীবন বাজি রাখেন তারা। এই কাজে তারা অনেক শ্রম আর সময় ত্যাগ করেন, তবেই ভাগ্যের জোরে হয়তো ফ্রেমবন্দী করতে পারেন বিরল সব বন্যপ্রাণীদেরকে।

কেননা হিংস্র বন্যপ্রাণীদের নির্দেশনা দিয়ে তো আর পছন্দ মতো ছবি তুলতে পারবেন না। এজন্য একেকজন ফটোগ্রাফার ব্যয় করেন অনেক সময়। চরম ধৈর্য্যের পরীক্ষা দিতে হয় তাদেরকে। আজকের যে ছবিগুলো দেখছেন এগুলো ফ্রেমবন্দী করতে ফটোগ্রাফারের সময় লেগেছে প্রায় তিন বছর। এই পুরো সময়টাই তিনি কাটিয়েছেন গহীন জঙ্গলে।

গাছের ফাঁকে উঁকি মারছে একটি বাঘ

গাছের ফাঁকে উঁকি মারছে একটি বাঘ

বলছিলাম শাজ জং এর কথা। তিনি বিখ্যাত চলচ্চিত্র নির্মাতা ও ফটোগ্রাফার। ন্যাশনাল জিওগ্রাফির জন্য ব্ল্যাক প্যানথারের একটি ডকুমেন্টারি তৈরি করার অনুমতি পান শাজ জং। সময়টা ২০১৫ সাল। ভারতের কর্ণাটকের কাবিনি বনে যান তিনি। সেখানেই দেখা পান ব্ল্যাক প্যানথারের।

এর আচরণ আর সৌন্দর্যে রীতিমতো মুগ্ধ হয়ে যান  শাজ জং। বিস্মিত হন এর জীবনযাপনে। সিদ্ধান্ত নেন ব্ল্যাক প্যানথারের আরো ছবি তুলবেন। মনের মতো করেই তৈরি করবেন এর ডকুমেন্টরি। তাই জঙ্গলে গিয়ে থাকার মনস্থির করেন।

বিরল প্রজাতির এই বাঘের ছবি তুলতে অনেক কাঠখড় পুড়িয়েছেন ফটোগ্রাফার

বিরল প্রজাতির এই বাঘের ছবি তুলতে অনেক কাঠখড় পুড়িয়েছেন ফটোগ্রাফার

২০১৭ সালে জঙ্গলে গিয়ে থাকতে শুরু করেন এই ছবির কারিগর। ২০২০ সাল পর্যন্ত প্রায় তিন বছর তিনি জঙ্গলে থেকে শুধু ছবিই তুললেন। এই কালো প্যানথারের শরীরে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে মেলানিন। এদের আচরণ অন্য বাঘদের চেয়ে আলাদা।

কুচকুচে কালো জ্বলন্ত চোখের এই কালো চিতা বাঘ বেশি দেখা যায় আফ্রিকায়। সেখানকার উপজাতিদের কাছে এই প্রাণী বিভীষিকাময়। অনেক উপজাতিরাই এর নাম দিয়েছেন কালো শয়তান। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় সবচেয়ে বেশি দেখা মেলে এই কালো চিতা বাঘকালো চিতা বাঘদের।

গাছের ডালে কালো চিতা বাঘ

গাছের ডালে কালো চিতা বাঘ

এছাড়াও উত্তর আফ্রিকার পার্বত্য এলাকায়, দক্ষিণ আফ্রিকা ও উত্তর ইরানে কমবেশি দেখা যায় এদের। উত্তর ভারতের বক্সা ব্যাঘ্র প্রকল্পে ২০১৭ সালে খোঁজ মিলেছিল একটি পুরুষ ও একটি স্ত্রী কালো চিতা বাঘের। তাছাড়া কর্ণাটকের ডানডেলি, ভদ্রা অভয়ারণ্য, কাবেনিসহ দেশের কয়েকটি জায়গায় দেখা দিয়েছিল এই ব্ল্যাক প্যানথার।

রিওয়ার্ড কিপলিংয়ের লেখা বিখ্যাত কাহিনী ‘দ্য জাঙ্গল বুক’। আর সেই জঙ্গল কাহিনীর এক বিখ্যাত চরিত্র কালো চিতা বাঘ। যে কি না এই কাহিনীর নায়ক মোগলির রক্ষাকর্তা। ওয়াইল্ডলাইফ ফটোগ্রাফার শাজ জাং কাবিনি ঘন জঙ্গলে ঘুরে এই বিরল প্রজাতির বাঘের দেখা পেয়েছেন। সেই সঙ্গে হিংস্র এই প্রাণীর ছবি তুলে রীতিমত পুরো বিশ্বে আলোড়ন সৃষ্টি করেছেন।

পানি খাচ্ছে কালো চিতা বাঘ

পানি খাচ্ছে কালো চিতা বাঘ

কালো চিতা বা ব্ল্যাক প্যানথার পৃথিবীতে প্রায় বিলুপ্ত। তবে কিছু কিছু জায়গায় এখনো এর দেখা মেলে। এমনকি একসময় আমাদের সুন্দরবনেও এর রাজত্ব ছিল। ১৭৭২ সাল থেকে ১৮৯৫ পর্যন্ত ভারতে এর কয়েকটি প্রজাতি ছিল। তবে কালোবাজারি আর শিকারিদের জন্য নিজেদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে হিমশিম খেতে হয়েছে তাদের।

বাঘ বিড়ালের গোত্রের হলেও এই কালো চিতা আবার লেপার্ড গোত্রীয়। তবে সিংহ, জাগুয়া আর চিতার সংমিশ্রণে হয় এই কালো প্যানথাররা। ১৮৪৬ সালে ইংরেজ প্রাণীবিদ সিটি বাগল্যান্ড চট্টগ্রামে কালো চিতার দেখা পেয়েছিলেন বলে জানান। ১৮৪৯ সালে শেষ এই কালো চিতা উঠে আসে দেশের খবরের শিরোনামে।

পাশাপাশি দুইটি চিতাবাঘ

পাশাপাশি দুইটি চিতাবাঘ

বলা হয়, চট্টগ্রামের বাসিন্দারা হত্যা করেছে এক কালো চিতা। এরপর অবশ্য আর কখনো এদের দেখা মেলেনি এদেশের মাটিতে। এদের হিংস্রতা চিতার থেকেও অনেক বেশি। আমাদের দেশ থেকে বিলুপ্ত হলেও এখনো আফ্রিকার কিছু জায়গায় এদের দেখা মেলে। এছাড়াও ভারত, বার্মা, ইথোওপিয়ায় রয়েছে এর কিছু প্রজাতি।

কালো চিতা বাঘদের উচ্চতা প্রায় ১২ ফুট। আর গায়ের রং হয় কুচকুচে কালো। এদের কালো পশমের উপর অনেক সময় ছোপ ছোপ দাগও দেখা যায়। সেগুলো কালো বা কালো বাদামি, ছাই কিংবা সাদা রঙের হয়। এদের খাদ্য তালিকায় রয়েছে লেপার্ড, জাগুয়াদের মতোই হরিণ, জেব্রা, বন্য শূকর এমনকি গৃহপালিত পশু। তবে সুযোগ পেলে মানুষকেও আক্রমণ করে থাকে হিংস্র এই চিতা বাঘ।

বিরল প্রজাতির বাঘ

বিরল প্রজাতির বাঘ

শাজ জং বলেন, বিরল প্রজাতির এই বাঘের ছবি তুলতে অনেক শ্রম দিতে হয়েছে। তবুও আফসোস নেই, কারণ ছবিগুলো সবার মন জয় করেছে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, এই ছবিগুলো ইতিহাসের একটি অংশ হয়ে থাকবে। বর্তমান প্রজন্মও এই বিরল প্রজাতির বাঘ সম্পর্কে জানার আগ্রহ দেখাবে। শুধু এই বাঘ নয় বরং প্রকৃতিতে আরো অনেক রহস্যময় প্রাণী লুকিয়ে রয়েছে। সেগুলো সংরক্ষণের দায়িত্বও আমাদের।

ছবির কারিগর আরো বলেন, আমি যে বনে দীর্ঘ তিন বছর কাটিয়েছি সেটি বন্যদের জন্য সত্যি ভালো স্থান। কাবিনি বন রক্ষার জন্য কর্ণাটক বন বিভাগকে ধন্যবাদ জানাই। তাদের কঠোর পরিশ্রমে

পাঠকের মতামত

Comments are closed.