267868

রংবেরঙের দালানকোঠা নিয়ে উঁচু পাহাড়ে দাঁড়িয়ে আছে ‘চাঁদ গ্রাম’

দক্ষিণ কোরিয়ার ছোট্ট একটি গ্রাম। গ্রামটির নাম মুরাল। সাজানো গোছানো এই গ্রামটি যেন শিল্পীর তুলি দিয়ে আঁকা ছবির মতো। মুরাল গ্রামটি গড়ে উঠেছে একটি পাহাড়ের পাদদেশে।

১৯৫৩ সালে কোরিয়া যুদ্ধ শেষ হওয়ার পর অসংখ্য যুদ্ধ শরণার্থী এবং দরিদ্র জনগণ সিউল এবং বুসানের মতো বড় শহরে আশেপাশে বসতি স্থাপন করে। জীবিকা এবং নিরাপদে বসবাস উভয় দিকই তাদের বসতি স্থাপনের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ কারণ ছিল।

সাধারণত নগরের পার্শ্ববর্তী ফাঁকা পার্বত্য অঞ্চলে এই সব উদ্বাস্তু এবং দরিদ্র জনগণ বসতি স্থাপন করে। ফলে পাহাড়ের পাদদেশে এবং ঢালে জনবসতি গড়ে উঠে। ধীরে ধীরে এসব অঞ্চলের জনবসতি এবং পরিসর বৃদ্ধি পেতে থাকে।

শত শত দালানকোঠা এখন চাঁদ গ্রামে

শত শত দালানকোঠা এখন চাঁদ গ্রামে

এক সময় যেখানে কোনো মানুষই ছিল না, সেখানে একটি গ্রাম তৈরি হয়ে যায়। দক্ষিণ কোরিয়ার সিউল এবং বুসানের মতো মহানগরীর পার্শ্ববর্তী পার্বত্য অঞ্চলে গড়ে ওঠা এসব জনবসতিদের গ্রামটি ‘মুন ভিলেজ’ বা ‘চাঁদ গ্রাম’ নামে পরিচিতি লাভ করে। কোরিয়ান ভাষায় মুন ভিলেজকে ডালডোঙ্গানে বলা হয়।

এই জনবসতিগুলো পাহাড়ের একবারেই উঁচু স্তরে বসবাস করে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই সেখান থেকে চাঁদের দৃশ্য খুব ভালোভাবে দৃষ্টিগোচর হয়। সে কারণেই এই জনবসতিরা তাদের গ্রামের নাম রাখেন ‘মুন ভিলেজ’। চাঁদ গ্রাম নামেই এখন বিশ্বব্যাপী পরিচিত এই গ্রামটি।

প্রতিটি বাড়িই এমন নজরকাড়া

প্রতিটি বাড়িই এমন নজরকাড়া

১৯৬০ সালের দিকে এই গ্রামগুলো দ্রুত এবং অপরিকল্পিতভাবে গড়ে ওঠে। তবে ১৯৮০ সালের দশকে ‘মুন ভিলেজ’ ঢেলে সাজানো হয়। অর্থাৎ গ্রামটিকে বসবাসযোগ্য করে গড়ে তোলা হয়। এরপর থেকে পাহাড়ের পাদদেশে থাকা এই সব জনবসতিদের গ্রামের সৌন্দর্য আরো বহুগুণে বৃদ্ধি পায়।

অতীতের পুরনো বাড়িগুলো ভেঙে নতুন বাড়ি তৈরি করা হয়। নজরকাড়া নকশায় বহুতল অ্যাপার্টমেন্টও নির্মাণ করা হয় পাহাড়ে। যেগুলো বিভিন্ন রঙে এবং নকশায় সজ্জিত করা হয়। রাস্তাগুলোতে বিভিন্ন জীবজন্তু, পশুপাখি এবং বিভিন্ন পরিচিত কার্টুন চরিত্র চিত্রিত করা হয়।

অসাধারণ সব শিল্পকর্ম রয়েছে প্রতিটি বাড়ির দেয়ালে

অসাধারণ সব শিল্পকর্ম রয়েছে প্রতিটি বাড়ির দেয়ালে

এভাবেই এক সময়ের দারিদ্র্যপীড়িত, জীর্ণ অঞ্চল একটি প্রাণবন্ত পর্যটন কেন্দ্রে পরিণত হয়।এই ‘মুন ভিলেজের’ অংশ ইহওয়া মুরাল ভিলেজ। সিউলের নাকসান পার্কের নিকটে এর অবস্থান। সংস্কৃতি, ক্রীড়া এবং পর্যটন মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে ২০০৬ সালে প্রায় ৭০ জন শিল্পী এর স্থাপনাগুলোতে বিভিন্ন দৃষ্টিনন্দন চিত্রকর্ম আঁকেন। যা সমগ্র অঞ্চলের সৌন্দর্য বহুগুণ বৃদ্ধি করেছে।

বর্তমানে এটি স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যটকদের কাছে জনপ্রিয় একটি পর্যটন কেন্দ্র। সিউলের উত্তরের ইনওয়াংসান জেলার অনুরূপ একটি প্রকল্পর নাম গেমি মাউল। সিউল থেকে ৩৫ কিলোমিটার দক্ষিণে সুয়নে অনুরূপ দুটি গ্রাম রয়েছে। গ্রাম দুটির নাম হলো- হেইংগংডং মুরাল গ্রাম এবং জিদং মুরাল গ্রাম।

ছবিগুলো সত্যিই জীবন্ত!

ছবিগুলো সত্যিই জীবন্ত!

দক্ষিণ কোরিয়ার বুসান নগরীর উকণ্ঠে অবস্থিত ‘গামছেও আর্ট ভিলেজ’। এটি পাহাড়ের পাদদেশ এবং ঢালে উপর গড়ে উঠা ‘মুন ভিলেজের’ আরেকটি অংশ। এটি ২০০৯ সালে শিক্ষার্থীরা একটি আর্ট প্রকল্পের অংশ হিসেবে বিভিন্ন চিত্রকর্মের মধ্যমে সজ্জিত করেছে। বর্তমানে সেখানকার বাড়ি এবং দেওয়ালগুলোতে বিভিন্ন দৃষ্টিনন্দন চিত্রকর্ম চোখে পড়ে।

‘মুন ভিলেজ’ হিসেবে পরিচিত ১৯৬০ এর দশকে অপরিকল্পিতভাবে গড়ে ওঠা জীর্ণ অঞ্চল বিভিন্ন সময়ে পরিকল্পিত পুনর্নিমাণ এবং চিত্রকর্মের মাধ্যে বর্তমানে নয়নাভিরাম পর্যটন কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। এই গ্রাম দুইটি দেখতে খুবই সুন্দর। এখানে গলিতে গলিতে অক্টোপাস আঁকা রয়েছে। প্রতিটি চিত্রের অক্টোপাস ১০ মিটার লম্বা।

চাঁদ গ্রামের বাড়িঘর আসলেই পর্যটকদের মন কাড়ে

চাঁদ গ্রামের বাড়িঘর আসলেই পর্যটকদের মন কাড়ে

এছাড়া জিরাফের ছবিও রয়েছে। শুধু এসবই নয়, বিভিন্ন গ্রহের ছবিও আছে। এই সুয়ন নগরের আশেপাশের অঞ্চল আরো উন্নত। এখানে রয়েছে বড় বড় দালানকোঠা। এই দালানকোঠাগুলোও বিভিন্ন রঙে সজ্জিত। যা এখানকার মানুষের কিংবা বিভিন্ন পর্যটকদের মন কেড়ে নেয়। সেখানকার অনেকেই এসব শিল্পকর্মকে ছবি বলে মনে করে না। তারা ভাবে সেখানকার সবকিছুই যেন জীবন্ত।

তারা এটাও বলে, তারা যখন হাঁটে তখন মনে হয় তারা জীবন্ত কোনো জিনিসের উপর দিয়ে হাঁটছে। এই প্রকল্পগুলো যদিও সুন্দর, তবুও বাসিন্দাদের গোপনীয়তার একটি নির্দিষ্ট ক্ষতির কারণ হতে পারে। হঠাৎ করে দর্শনার্থীদের আগমন ঘটলে স্থানীয়দের প্রতিদিনের কাজে ব্যাঘাত ঘটে। ফলে তারা সময়ের কাজ সময়ে করতে পারে না। তাই এ ব্যাপারে সকলের উচিত যত্নশীল হওয়া।

পাঠকের মতামত

Comments are closed.