265270

করোনাভাইরাস থেকে কি মুক্তি দেবে ম্যালেরিয়ার ওষুধ?

করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে বিশ্বজুড়ে মৃত্যুর সংখ্যা তিন লাখ ছাড়িয়েছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত করোনাভাইরাস প্রতিরোধে কার্যকর কোনো ওষুধ বা প্রতিষেধক আবিষ্কৃত হয়।

এ অবস্থায় কোথাও কোথাও করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসায় ক্লোরোকুইন ফসফেট বা হাইড্রোক্সিক্লোরোকুইন সালফেট ব্যবহারের কথা ভাবা হচ্ছে। এর সঙ্গে থাকবে জিংক ট্যাবলেট। সাধারণত ম্যালেরিয়া প্রতিরোধে লো-ডোজে ক্লোরোকুইন ফসফেট ও হাইড্রোক্সিক্লোরোকুইন সালফেট খেতে হয়।

ম্যালেরিয়ার এই ওষুধ করোনাভাইরাস প্রতিরোধে কতটা কার্যকর তা দেখতে একটি গবেষণা (Interventional double blind Randomised Placebo Control Prophylaxis Study) শুরু হওয়ার কথা রয়েছে।

অক্সফোর্ডের অধীনে ইউরোপ ও এশিয়ার করোনা নেগেটিভ সুস্থ সবল প্রায় ৪০ হাজার হেলথ কেয়ার প্রোভাইডার এতে অংশ নেবেন। তারা ৫০-১০০টি গ্রুপে ভাগ হয়ে প্রতিদিন করোনা রোগীদের সেবাদানের পূর্বে সেবন করে নেবেন ক্লোরোকুইন বা হাইড্রোক্সিক্লোরোকুইন।

এই ওষুধ তাদের সুরক্ষা দেবে কোভিড-১৯ রোগ থেকে– চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা এমনই আশা করছেন।

ইউরোপের দেশগুলোর হেলথকেয়ার প্রোভাইডাররা সেবন করবেন হাইড্রোক্সিক্লোরোকুইন। আর এশিয়ার প্রোভাইডাররা সেবন করবেন ক্লোরোকুইন, সঙ্গে থাকবে জিংক ট্যাবলেট।

এ সময় তাদের দেহে প্রতিনিয়ত পরীক্ষা করে দেখা হবে, তারা আদৌ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হচ্ছেন কিনা কিংবা হলেও কতটুকু।

এন্টিম্যালেরিয়া এই ওষুধ রিউম্যাটয়েড আর্থ্রাইটিস (বাত রোগ), লুপাস রোগ, নিউরোলজিক্যাল রোগ সারকোডোসিসসহ আরও বেশ কিছু রোগের চিকিৎসায় দীর্ঘদিন ধরে ব্যবহার হয়ে আসছে।

ক্লোরোকুইন ও হাইড্রোক্সিক্লোরোকুইন বাত রোগ বা ভাইরাস রোগের চিকিৎসায় কেন?

১. প্রথমত ক্লোরোকুইন ও হাইড্রোক্সিক্লোরোকুইন অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি হিসেবে কাজ করে। এর ওপর ভিত্তি করেই রিউম্যাটয়েড আর্থাইটিস বা লুপাস রোগের চিকিৎসায় ব্যবহার।

২. ক্লোরোকুইন ও হাইড্রোক্সিক্লোরোকুইন ক্ষারীয় এবং তা আমাদের কোষের এন্ডোজম ও লাইসোজোমের পিএইচ মাত্রা বাড়িয়ে ক্ষারীয় করে। ফলে করোনাভাইরাসের এন্ডোসাইটোসিস ও অন্যান্য লাইসোজোমাল ক্রিয়াকলাপ বাধাপ্রাপ্ত হয়।

৩. ক্লোরোকুইন ও হাইড্রোক্সিক্লোরোকুইন, করোনাভাইরাসের স্পাইক এস প্রোটিনের সঙ্গে আমাদের কোষের এসিই২ রিসেপ্টরে সঙ্গে যুগলবন্দি হয়ে কোষের ভেতর প্রবেশে বাধাপ্রাপ্ত হয়।

৪. ক্লোরোকুইন ও হাইড্রোক্সিক্লোরোকুইন সেল মেমব্রেনের সায়ালিক অ্যাসিডের সঙ্গে লেগে থেকে একে ব্লক করে রাখে। ফলে ভাইরাস কোষের ভেতর প্রবেশ করতে বাধাপ্রাপ্ত হয়।

৫. জিংকের এন্টিভাইরাস বৈশিষ্ট্য আছে; কিন্তু সে কোষের ভেতর প্রবেশ করতে পারে না। একে যখন ক্লোরোকুইন ও হাইড্রোক্সিক্লোরোকুইনের সঙ্গে দেয়া হয়, তখন সে তাদের সঙ্গে যুগলবন্দি হয়ে কোষের ভেতর প্রবেশ করে এবং সেখানে করোনাভাইরাস ভাইরাসের রেপ্লিকেশনের প্রধান এনজাইম আরএনএ ডিপেন্ডেন্ট আরএনএ পলিমারেজকে বাধা দেয়। ফলে কোষের ভেতর করোনাভাইরাসের বংশবিস্তার বিঘ্ন হয়।

চলতি মাসের ২০ তারিখ থেকে আগামী বছরের মে মাস পর্যন্ত এই গবেষণাটি হবে। যদি সন্তোষজনক ফল পাওয়া যায়, তবে দামে অত্যন্ত সস্তা, সহজলভ্য এই দুটি ওষুধ ম্যালেরিয়া প্রতিরোধের মতো সাধারণ মানুষকে করোনাভাইরাস থেকে সুরক্ষা দেবে।

লেখক: সহকারী অধ্যাপক, সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ।

পাঠকের মতামত

Comments are closed.