264151

মৃত্যুর আগে যে ১০টি জায়গায় যাওয়া উচিত

মানুষ সৃষ্টিকর্তার সর্বশ্রেষ্ঠ সৃষ্টি। মানুষ সৃষ্টির পর থেকেই প্রকৃতির কাছাকাছি বাস করে আসছে। একারণে প্রকৃতির প্রতি তাদের একটা বিশেষ ভালোবাসা রয়েছে। মানুষ বিশ্বের বিভিন্ন দর্শনীয় জায়গা আবিষ্কার করে চলেছে। সেই চেষ্টার ফলে বিশ্বের অনেক দুর্দান্ত জায়গা আবিষ্কার করেছে। তার মধ্যে কিছু সৃষ্টিকর্তার তৈরি এবং কিছু মানুষ তৈরি করেছে। মৃত্যুর আগে প্রতিটি মানুষের ইচ্ছা থাকে এমন ২০টি সুন্দর জায়গা সম্পর্কে চলুন জেনে আসি-

১. স্যান্টোরিনি, গ্রীস

ন্টোরিনি আইল্যান্ডের অসাধারণ সুন্দর পরিবেশকে বিশ্বের সব চাইতে রোমান্টিক স্থান ধরা হয়। সমুদ্রে সূর্যের খেলা, সূর্যাস্ত এবং সূর্যোদয় দেখার জন্য সব চাইতে ভালো জায়গা এটি। প্রতিবছর হাজারো দম্পতি হানিমুন করার জন্য এই স্থানে আসেন।

এজিয়ান সাগরে অবস্থি গ্রিকি দ্বীপগুলো প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন, সমুদ্র সৈকত, উঁচুনিচু পাহাড় পর্বত আর নীল সাদা বাড়িঘরে জন্য বিখ্যাত। দ্বীপটি খ্রিষ্টপূর্ব ১৬ শতকে আগ্নেয়গিররি অগ্নুৎপাতে বিধ্বস্ত হয়। তারপর থেকেই এর সৈকত উঁচুনিচু ও এবড়োখেবড়ো। ফিরা ও ওইয়া শহরের সাগরপাড়ে আগ্নেয়গিরির জ্বালামুখে রয়েছে চমৎকার সব বাড়ি যেখান থেকে সাগরকে এক অনন্য দৃষ্টিতে দেখা যায়। এর পশ্চিমে রয়েছে লাভায় গঠিত মনোমুগ্ধকর কালো, লাল ও সাদা নুড়িপাথরের বেলাভূমি। এই দ্বীপে ১৩ টি গ্রাম রয়েছে। দ্বীপটির স্থাপত্য হলো পোসকাফো (গুহা ঘর) প্রকৃতির। সাগরের ঝড়ো হাওয়া থেকে বাঁচতে এমন ঘর তৈরি করা হয়েছিলো। এপ্রিল থেকে জুন পর্যন্ত এই দ্বীপে ভ্রমণের সেরা সময়।

২. কেপিলানো সাসপেনশন ব্রিজ, কানাডা

কেপিলানো সাসপেনশন ব্রিজটি কানাডার ভ্যানকোভারে ব্রিটিশ কলাম্বিয়া পার্কে অবস্থিত। ঝুলন্ত এই ব্রিজটি যেন নির্মিতই হয়েছে আপনাকে ভয় দেখাবার জন্য। অনবরত কাঁপতে থাকা ব্রিজটিতে হাঁটতে হলে কিছুটা সাহস নিয়েই এগোতে হবে পর্যটকদের। সুন্দর ব্রিটিশ কলম্বিয়ার দ্রুতগতির ক্যাপিলানো নদীর ওপরে ১৮৮৯ সাল থেকে ২৩০ ফুট উচ্চতায় পাথুরে পাহাড়ের মাঝখানে সাসপেনশন ব্রিজটি চালু রয়েছে।

প্রথমে এটি রশি এবং সিডার ফলক ব্যবহার করে নির্মাণ করা হয়। কিন্তু অল্পদিনের মধ্যেই ক্যাপিলানো সেতুটি দুর্ঘটনার জন্য সমালোচিত হতে থাকে। ব্রিজটির নিচে আছে বিস্তীর্ণ গিরিখাত। বিপদ এড়াতে প্রতিবছর এটি পুনর্গঠন করা হয়। নিরাপত্তা বাড়াতে এখানে দড়ির বদলে এখন ব্যবহার করা হয় কেবল তার। ১৯৫০ সালে পাটাতনে ব্যবহার করা হয়েছে কংক্রিট। সেতুটির নিরাপত্তা বাড়াতে ৪৫০ ফুট দৈর্ঘ্যরে স্প্যান ব্যবহার করা হয়েছে। এত নিরাপত্তার ব্যবস্থা করার পরও জঙ্গলের মাঝ দিয়ে বয়ে চলা সেতুটি এখনো এমন ভাবে ঝাঁকুনি দেয় তাতে সাহসী ব্যক্তিটিও ভয় পেয়ে যান।

৩. রোম, ইতালি

বিশ্বে দেখার জন্য আরও একটি সুন্দর জায়গা হলো ইতালির প্রাচীন শহর ও রাজধানী রোম। একে পশ্চিমা সভ্যতার কেন্দ্রও বলা হয়। এই শহরটি খ্রিস্টপূর্ব ৭৫৩ সালে আবিষ্কার হয়েছিল। কলোসিয়াম যা বিশ্বের সর্বাধিক আইকনিক স্মৃতিস্তম্ভ এটি রোমেও রয়েছে। এই স্মৃতিস্তম্ভটি না দেখে রোম থেকে ফিরে আসতে চান এমন কেউ নেই। তদুপরি, দ্য প্যানথিয়ন এবং পিয়াজা নাভোনাও রোমের জায়গাগুলি দেখার জন্য উপযুক্ত।

৪. তাজমহল, ভারত

তাজমহল ভারতের উত্তর প্রদেশে আগ্রায় অবস্থিত একটি রাজকীয় সমাধি। মুঘল সম্রাট শাহজাহান তার স্ত্রী আরজুমান্দ বানু বেগম বা মুমতাজ মহলের স্মৃতির উদ্দেশে এই অপূর্ব সৌধটি নির্মাণ করেন। সৌধটি নির্মাণ শুরু হয়েছিল ১৬৩২ খ্রিষ্টাব্দে যা সম্পূর্ণ হয়েছিল প্রায় ১৬৫৩ খ্রিষ্টাব্দে। শিল্পনৈপুণ্যসম্পন্ন একদল নকশাকারক ও কারিগর সৌধটি নির্মাণ করেছিলেন।

তাজমহলকে মুঘল স্থাপত্যশৈলীর একটি আকর্ষণীয় নিদর্শন হিসেবে মনে করা হয়, যার নির্মাণশৈলীতে পারস্য, তুরস্ক, ভারতীয় এবং ইসলামী স্থাপত্যশিল্পের সম্মিলন ঘটানো হয়েছে। এর সাদা মার্বেলের গোম্বুজাকৃতি রাজকীয় সমাধীটিই বেশি সমাদৃত, তাজমহল আসলে সামগ্রিকভাবে একটি জটিল অখণ্ড স্থাপত্য। এটি ১৯৮৩ সালে ইউনেস্কো বিশ্বঐতিহ্যবাহী স্থান হিসেবে তালিকাভুক্ত করা হয়। বিশ্বের সপ্তম আশ্চর্যের অন্যতম তাজমহল। ‘বিশ্ব ঐতিহ্যের সর্বজনীন প্রশংসিত শ্রেষ্ঠকর্ম’ হিসেবে তাজমহলকে আখ্যায়িত করেছে ইউনেস্কো।

৫. সাইফুল মুলুক লেক, পাকিস্তান

সর্বাধিক সুন্দর এবং দেখার মতো হ্রদগুলির মধ্যে একটি হলো পাকিস্তানের উত্তরাঞ্চলে অবস্থিত সাইফুল মুলুক লেক। এটি নারান শহরের নিকটবর্তী কাঘন উপত্যকার উত্তরে অবস্থিত। এটি সমুদ্রতল থেকে ১০ হাজার ৫৭৮ ফুট উচ্চতায় এবং এর পানি কুনাহার নদীতে প্রবাহিত হয়। এই হ্রদটি যা উপত্যকার সর্বোচ্চ চূড়া মালিকা পার্বতের নিকটে অবস্থিত।

কথিত রয়েছে- সাইফুল মুলুক হ্রদটির নামকরণ করা হয়েছিল কিংবদন্তি এক রাজপুত্রের নামে। সূফী কবি মিয়াঁ মুহাম্মদ বখশের রচিত সাইফুল মুলুক নামে একটি রূপকথার গল্পে হ্রদের কথা রয়েছে। এতে পারস্যের রাজপুত্র সাইফুল মুলুকরে কথা বলা হয়েছে যিনি হ্রদে বদ্রি-উল-জামাল নামে এক রূপবতী রাজকন্যার প্রেমে পড়েছিলেন।

মানুষ সৃষ্টিকর্তার সর্বশ্রেষ্ঠ সৃষ্টি। মানুষ সৃষ্টির পর থেকেই প্রকৃতির কাছাকাছি বাস করে আসছে। একারণে প্রকৃতির প্রতি তাদের একটা বিশেষ ভালোবাসা রয়েছে। মানুষ বিশ্বের বিভিন্ন দর্শনীয় জায়গা আবিষ্কার করে চলেছে। সেই চেষ্টার ফলে বিশ্বের অনেক দুর্দান্ত জায়গা আবিষ্কার করেছে। তার মধ্যে কিছু সৃষ্টিকর্তার তৈরি এবং কিছু মানুষ তৈরি করেছে। মৃত্যুর আগে প্রতিটি মানুষের ইচ্ছা থাকে এমন ২০টি সুন্দর জায়গা সম্পর্কে চলুন জেনে আসি। আজ থাকছে চার পর্বের দ্বিতীয় পর্ব।

৬. সিডনি, অস্ট্রেলিয়া

বিশ্বের মনোরম জায়গা দেখতে হলে অস্ট্রেলিয়ার সিডনিতে আপনার ভ্রমণ করতে হব। এটি অস্ট্রেলিয়ার নিউ সাউথ ওয়েলসের সর্বাধিক জনবহুল শহর। এর হারবার ব্রিজটি বিশ্বের সর্বাধিক বিখ্যাত পর্যটকের স্থান। নতুন বছর উদযাপনে এই সেতুতে বিশাল আতশবাজি প্রদর্শনী হয়। নতুন বছরকে স্বাগত জানাতে বিশ্ব থেকে লক্ষ লক্ষ মানুষ সমবেত হয়।

৭. বার্সেলোনা, স্পেন

প্রতি বছর বহু লোকের দ্বারা পরিদর্শন করা আরেকটি সুন্দর জায়গা হলো স্পেনের বার্সেলোনা শহর। শহরটি আধুনিক পাশাপাশি প্রাচীন রোমান সভ্যতার একটি ভাল মিশ্রণ। এটি অলিম্পিক খেলার জন্যও বিখ্যাত। এই শহর স্পেনের শিল্প ও বাণিজ্যের প্রধানতম কেন্দ্র। এছাড়া এটি স্পেনের সংস্কৃতি ও শিক্ষাব্যবস্থার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র।

৮. ইস্তাম্বুল, তুরস্ক

জীবদ্দশায় ঘুরে দেখার আর একটি সুন্দর এবং আকর্ষণীয় জায়গা হলো তুরস্কের শহর ইস্তাম্বুল। এই শহরটি এশিয়া এবং ইউরোপের সঙ্গে সংযুক্ত। এটি এশীয় এবং ইউরোপীয় সভ্যতার খুব ভাল মিশ্রণ। এটি কনস্টান্টিনোপলের পুরাতন শহর। এটি তুরস্কের সাংস্কৃতিক, অর্থনৈতিক ও ঐতিহাসিক কেন্দ্র। এটি দৃষ্টিনন্দন মসজিদগুলির জন্যও বিখ্যাত।

৯. ভিক্টোরিয়া জলপ্রপাত

পৃথিবীর প্রাকৃতিক সপ্তাশ্চর্যের মধ্যে অন্যতম একটি ভিক্টোরিয়া জলপ্রপাত। আফ্রিকা মহাদেশের দুটি দেশ জাম্বিয়া ও জিম্বাবুয়ের সীমানায় অবস্থিত এই জলপ্রপাত পৃথিবীর দীর্ঘতম জলপ্রপাত। জিম্বাবুয়ে ও জাম্বিয়ার সীমানাবর্তী যৌথ নদী জাম্বেজি থেকেই এই জলপ্রপাতের উৎপত্তি। উচ্চতা ১০৮ মিটার এবং চওড়ায় ১,৭০৩ মিটার। প্রতি সেকেন্ডে প্রায় ৯৩৫ ঘনমিটার জল পতিত হয় এই জলপ্রপাত থেকে। জল পড়ার সময় প্রচণ্ড আওয়াজ সৃষ্টি করে বলে স্থানীয় ভাষায় এর নাম ‘মোজি-ওয়া-তুনিয়া’। এর অর্থ ‘বজ্রের ধোয়া’।

ভিক্টোরিয়া জলপ্রপাত থেকে জল পড়ার সময় জলীয়বাষ্পের মেঘ তৈরি হয় যা প্রায় ৪০০ মিটার উচ্চতায় ভাসতে থাকে এবং প্রায় ৫০ কিলোমিটার দূর থেকেও দেখা যায়। অনিন্দ্য সুন্দর এই প্রাকৃতিক নিদর্শনের অন্যতম আকর্ষণীয় দৃশ্য এখানকার জলীয়বাষ্পে আলো পড়ে রংধনুর সৃষ্টি হওয়া। শুধু দিনেই নয়, পূর্ণিমার রাতেও এই রংধনু দেখা যায়। ব্রিটিশ অভিযাত্রী ডেভিড লিভিংস্টোন ১৮৫৫ সালে এই জলপ্রপাত দেখে এর নামকরণ করেন রাণী ভিক্টোরিয়ার নামে। সেই থেকে এটি ভিক্টোরিয়া ফলস নামে পরিচিত হলেও বর্তমানে জিম্বাবুয়ে সরকার এর নামকরণ করেছে ‘মোজি-ওয়া-তুনিয়া’ ফলস।

১০. চীনের মহাপ্রাচীর

ধারণা করা হয়, চীনের মহাপ্রাচীর মানুষের হাতে তৈরি পৃথিবীর সবচেয়ে বড় স্থাপত্য। এটি পৃথিবীর সপ্তাশ্চর্যের একটি। বলা হয় থাকে, চীনের মহাপ্রাচীর পৃথিবীর একমাত্র স্থাপনা যা চাঁদ থেকেও দেখা যায়। এর দৈর্ঘ্য প্রায় ৬২৭৬ কিলোমিটার। এটি শুরু হয়েছে সাংহাই পাস এবং শেষ হয়েছে লোপনুর নামক স্থানে। এই প্রাচীরের শাখা দেয়ালগুলো এক করলে দৈর্ঘ্য দাঁড়ায় প্রায় ৫৫০০ মাইল। চীনের মহাপ্রাচীরের চাইনিজ নাম চাংছ্যাং, যার অর্থ লম্বা দেয়াল।

পাঠকের মতামত

Comments are closed.