263358

‘আমাকে এন-৯৫ মাস্ক দিন অথবা মৃত্যুর মাধ্যমে পালাতে দিন’

সোর্স আমাদের সময় 

করোনাভাইরাসের নমুনা সংগ্রহ ও চিকিৎসায় নিরাপত্তা অবলম্বন করতে হয়। আর এজন্য চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের পারসোনাল প্রটেকটিভ ইকুইপমেন্ট (পিপিই) ও এন-৯৫ মাস্ক পরা জরুরি। এবার এন-৯৫ মাস্ক না পেয়ে ক্ষুধ্ব হয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিলেন বরগুনা জেনারেল হাসপাতালের চিকিৎসক কামরুল আজাদ।

গতকাল বুধবার সন্ধ্যায় নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্টে মাস্কের অভাব তুলে ধরে একটি পোস্ট দেন এই চিকিৎসক। এর পর বিষয়টি নিয়ে বরগুনার বিভিন্ন মহলে আলোচনার সৃষ্টি হয়।

ফেসবুক স্ট্যাটাসে তিনি লিখেন, ‘আমাকে এন-৯৫ মাস্ক দিন অথবা মৃত্যুর মাধ্যমে পালাতে দিন। লোক দেখানো বাজারের ব্যাগের কাপড় দিয়ে তৈরি গাউন দেওয়া বন্ধ করুন।’

ডা. কামরুল আজাদ করোনাভাইরাসে সংক্রমিত এবং এর উপসর্গ দেখা দেওয়া রোগীদের চিকিৎসা ও নমুনা সংগ্রহের বিষয়ে বরগুনায় একমাত্র প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত চিকিৎসক। তিনি হাসপাতালটিতে মেডিসিন বিভাগের জুনিয়র কনসালট্যান্ট হিসেবে কর্মরত রয়েছেন।

ফেসবুকে দেওয়া স্ট্যাটাসটি সম্পর্কে জানতে চাইলে কামরুল আজাদ বলেন, ‘বরগুনা জেনারেল হাসপাতালের আইসোলেশনে এই মুহূর্তে তিনজন করোনা পজিটিভ রোগী চিকিৎসাধীন। করোনাভাইরাসে সংক্রমিত সন্দেহে চিকিৎসাধীন আছেন আরও ২৩ জন। এসব রোগীর চিকিৎসা থেকে শুরু করে নমুনা সংগ্রহ পর্যন্ত তাদের সংস্পর্শে যাওয়ার ক্ষেত্রে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এবং বাংলাদেশ স্বাস্থ্য বিভাগের পক্ষ থেকে এন-৯৫ মাস্ক ব্যবহারের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। কেননা এন-৯৫ মাস্কই পারে কেবল শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে ভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিহত করতে। কিন্তু আমাদের এন-৯৫ মাস্ক নেই। এজন্য আমিসহ আমার পুরো টিম ঝুঁকিতে পড়েছি। এই ঝুঁকি নিয়ে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। তবুও আমরা এন-৯৫ মাস্ক পাচ্ছি না।’

তিনি বলেন, ‘আইসোলেশনে যারা দায়িত্ব পালন করেন, তারা সাতদিন দায়িত্ব পালন শেষে ১৪ দিন হোম কোয়ারেন্টিনে থাকেন। অথচ বরগুনায় চিকিৎসক সঙ্কটের কারণে আমার কোয়ারেন্টিনে থাকার সুযোগ নেই।’

এই চিকিৎসক আরও বলেন, ‘করোনাভাইরাসে সংক্রমিত ও সন্দেহভাজন ব্যক্তিদের চিকিৎসা দেওয়ার পাশাপাশি হাসপাতালে সাধারণ রোগীদের চিকিৎসা দিতে হয় আমার। তাই আমি যদি সংক্রমিত হই তাহলে আমার কাছে আসা সাধারণ রোগীরা সংক্রমিত হবেন। এর মাধ্যমে পুরো জেলায় করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়বে। তাতে সবাই শেষ হয়ে যাবে। তাই বরগুনায় দ্রুত এন-৯৫ মাস্কের সরবরাহ নিশ্চিত করার অনুরোধ জানাই।’

এ বিষয়ে বরগুনার সিভিল সার্জন হুমায়ুন শাহীন খান বলেন, ‘আমাদের এন-৯৫ মাস্ক সরবরাহ করা হয়নি। এ কারণে চিকিৎসকরা চরম ঝুঁকি নিয়ে করোনায় সংক্রমিত ব্যক্তিদের সংস্পর্শে যাচ্ছেন।’

তিনি বলেন, ‘জেলা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর আমাদের বহু পুরোনো কিছু এন-৯৫ মাস্ক দিয়েছিল। যা এখন আর ব্যবহারের উপযোগী নয়। তাই আমাদের চিকিৎসকরা নিরুপায় হয়ে সার্জিক্যাল মাস্ক ব্যবহার করে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের সংস্পর্শে যেতে বাধ্য হচ্ছেন। অথচ এই মাস্ক ব্যবহার করে করোনা সংক্রমিত রোগীদের সংস্পর্শে যাওয়া মোটেই নিরাপদ নয়।’

বরগুনার জেলা প্রশাসক মোস্তাইন বিল্লাহ বলেন, ‘বরগুনার স্বাস্থ্য বিভাগ এন-৯৫ মাস্কের সংকটের কথা আমাকে কখনো জানায়নি। যদি জানাতো তাহলে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে আমি চিকিৎসকদের চাহিদা অনুযায়ী এন-৯৫ মাস্কের ব্যবস্থা করতাম।’

পাঠকের মতামত

Comments are closed.