225016

বিশ্বকাপের জার্সিতেই অসাধারণ দেশপ্রেম শ্রীলংকার, মুগ্ধ সারাবিশ্ব!

ডেস্ক রিপোর্ট : গত দুদিন আগে শ্রীলঙ্কা তাদের বিশ্বকাপ দলটির অফিসিয়াল জার্সি ও প্র‍্যাকটিস কিট উন্মুক্ত করেছে। কোনো প্রকার ব্যাখ্যা ছাড়া স্বাভাবিক দৃষ্টিকোণ থেকে দেখলেও এক বাক্যে জার্সিটিকে চমৎকার বলে ফেলা যায়। অত্যন্ত সুন্দর গ্রাফিক্যাল ডিজাইন জার্সিটিকে একটা ভিন্ন মাত্রা এনে দিয়েছে। কিন্তু, শ্রীলঙ্কার এই জার্সির বিশেষত্ব অন্য জায়গায়। শ্রীলঙ্কা দলটি বিশ্বকাপে কেমন পারফর্ম করবে, কয়টি ম্যাচ জিতবে তা আমরা এখনি জানতে পারব না, কিন্তু এখন যে কথাটা বলা যায় তা হলো, শ্রীলঙ্কার জার্সি মন জিতে নিয়েছে একটা অসাধারণ কনসেপ্টের কারণে।

সমুদ্র দূষণ বর্তমান পৃথিবীর একটা বেশ কঠিন সমস্যা। পরিবেশগত হুমকি মোকাবেলায় সমুদ্রকে বাঁচানো ভীষণভাবে জরুরি। কিন্তু অসচেতন, বর্বর, চোখ থাকতেও অন্ধ যারা তাদেরকে এসব বুঝানো প্রায় অসম্ভব। তারা যেভাবে সমুদ্র দূষিত করছে,প্লাস্টিকের বোতল, পলিথিন সহ অন্যান্য বর্জ্য ফেলছে তা পরিবেশের জন্য মারাত্মক হুমকি। সমুদ্রের জলজ পরিবেশের ভারসাম্য এতে নষ্ট হচ্ছে। অনেকে হয়ত না জেনে স্রেফ অভ্যাসবশত সমুদ্রে প্লাস্টিক বর্জ্য ফেলছে। পরিবেশবিদরা, প্রকৃতিপ্রেমীরা সচেতনতামূলক কত কথা বলেন, কিন্তু তাতে কাজ হয় অল্পই। বিশ্বকাপ একটা বড় ইভেন্ট। এমন বড় মঞ্চে যদি এমন প্রচারণা চালানো যায়, তাহলে কেমন হয়?

এরকম ভাবনার জায়গা থেকে শ্রীলঙ্কার জাতীয় দলের বিশ্বকাপ জার্সি বানানো হয়েছে। শ্রীলঙ্কার সমুদ্র উপকূলের প্লাস্টিক বর্জ্য রিসাইকেল করে সেই উপাদান দিয়ে তৈরি করা হয়েছে বিশ্বকাপ জার্সি। মাস হোল্ডিং নামক একটি কোম্পানি শ্রীলঙ্কা ক্রিকেট দলের পোষাকের স্পন্সর। তারাই এমন জার্সি উৎপাদনের প্ল্যান করেছে। এমন চমৎকার ইনোভেশন এবং টেকসই পরিবেশবান্ধব আইডিয়া তারা বিশ্বকাপের মঞ্চেই উন্মুক্ত করলো। এর মাধ্যমে তারা সমুদ্র দূষণ প্রতিহত করার বার্তা দিচ্ছে। সমুদ্রকে বাঁচানোর কথা ছড়িয়ে দিতে চাইছে।

জার্সিটির ডিজাইন খেয়াল করলে দেখতে পাবেন, গ্রাফিক্যালি কচ্ছপ আঁকা আছে। সমুদ্র দূষণের ক্ষতিকর প্রভাবে সমুদ্রে কচ্ছপের জীবনচক্র প্রবলভাবে হুমকির মুখে, এটাই বুঝানো হচ্ছে এর মাধ্যমে। জার্সির মাধ্যমে তাই বার্তা দেয়া হচ্ছে, সমুদ্র বাঁচাও, কচ্ছপদেরও বাঁচাও। যখন প্লাস্টিক বর্জ্য সমুদ্রে ফেলা বন্ধ হবে,তখন আসলে শুধু কচ্ছপ নয় সকল সামুদ্রিক প্রাণীও টিকে যাবে। সবচেয়ে বড় কথা পরিবেশের ভারসাম্য বজায় থাকবে যা পৃথিবীকে বাঁচানোর জন্য এখন অনেক জরুরি।

যেভাবে প্রাকৃতিক দূর্যোগ আমাদের উপর হানা দিচ্ছে, পরিবেশকে হেলা করলে পরিবেশ আমাদের গ্রাস করে নিবে ভয়ংকর দূর্যোগের মাধ্যমে। এটা কেন আমরা বুঝি না! এইকারণে শ্রীলঙ্কার জার্সির এই আইডিয়াটি আরো বেশি সিগনিফিকেন্ট মনে হয়েছে। তারা সমস্যা এড্রেস করতে পেরেছে, ইনোভেশন কাজে লাগাতে পেরেছে। বিশ্বকাপের মঞ্চকে তারা ব্যবহার করে শিক্ষামূলক একটা বার্তা দিতে চাচ্ছে।

শ্রীলঙ্কার জার্সির এই অভিনব আইডিয়া ইতিমধ্যেই বেশ প্রশংসিত হচ্ছে। ক্রিকেট দিনশেষে একটা খেলা হলেও, এই খেলার মধ্যে অনেককিছু লুকিয়ে থাকে। খেলার সাথে জাতীয়তাবাদ, রাজনীতি, দেশপ্রেম সব কিছু ওতোপ্রতোভাবে মিশে আছে। শ্রীলঙ্কার এবারের বিশ্বকাপের জার্সিটি দেশপ্রেমকে ভিন্নভাবে উপস্থাপনের এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। এই জার্সির ইতিহাস নিশ্চয়ই প্রত্যেকটা শ্রীলঙ্কান এখন জেনে যাবেন।

দলটির ক্রিকেটাররা যখন এই জার্সি পড়ে মাঠে নামবেন, তখন জার্সির বার্তাটাও মানুষ স্মরণ করবে। দেশকে ভালবাসো? তাহলে দেশের জন্য সচেতন হও, সমুদ্র বাঁচাও, প্লাস্টিক বর্জ্য সমুদ্রে ফেলো না। গোটা বিশ্বকাপজুড়ে এই বক্তব্যটি ছড়াবে শ্রীলঙ্কা ক্রিকেট দলের মাধ্যমে। জার্সির মধ্য দিয়ে কত দারুণভাবে একজন দেশপ্রেমিকের দায়িত্ব কি স্মরণ করিয়ে দেয়া হবে! এভাবেও দেশভক্তি দেখানো যায় আসলে। কারণ, দেশপ্রেম তো শুধুই মুখের বুলি হওয়া উচিত নয়, দেশের জন্য ইতিবাচক পরিবর্তনে ভূমিকা রাখাই দেশপ্রেম! এগিয়ে চলো অনলাইন ম্যাগাজিন থেকে

পাঠকের মতামত

Comments are closed.