207088

ভারতে ফিরে নতুন পরীক্ষায় পড়তে হলো পাইলটকে!

ডেস্ক রিপোর্ট : প্রায় ৪৮ ঘণ্টা পর দেশে ফিরেছেন ভারতীয় বিমানবাহিনীর পাইলট অভিনন্দন বর্তমান। আজ শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টার দিকে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর একটি কনভয়ে ভারতের ওয়াঘা সীমান্তে নিয়ে আসা হয় অভিনন্দনকে। সেখানে তার মেডিকেল চেকআপ করা হয়। পাক রেঞ্জার্সের ‘বিটিং দ্য রিট্রিট’-এর পরই ভারতের হাতে তুলে দেওয়া হলো অভিনন্দনকে।

বিশেষজ্ঞদের দাবি, অসীম সাহসের পরিচয় দিয়েছেন অভিনন্দন বর্তমান। ১৯৭০ সালে তৈরি পুরোনো মিগ-২১ নিয়ে অত্যাধুনিক পাক যুদ্ধবিমান এফ-১৬ কে তাড়া করে ওই দেশে ঢুকে পড়েন তিনি। কিন্তু পাকিস্তান হেফাজত থেকে ভারতে ফিরতে কয়েক দফা জিজ্ঞাসাবাদের মুখে পড়তে হয়েছে তাকে।

ভারতীয় সংবাদমাধ্যম আনন্দবাজারের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, দেশে ফেরার পর অভিনন্দন কোন পরিস্থিতির মুখোমুখি হবেন, তা এখনো পরিষ্কার করে জানায়নি ভারতীয় বিমানবাহিনী। তবে এই বাহিনীর এক কর্মকর্তার কাছ থেকে বেশ কিছু ইঙ্গিত পাওয়া গেছে। এতে জানা গেছে, নতুন বেশ কিছু পরীক্ষায় পড়তে হবে তাকে।

*ওয়াঘা সীমান্ত থেকেই বাড়ি ফিরতে পারবেন না অভিনন্দন। সেখান থেকে তাকে সরাসরি বিমানবাহিনীর গোয়েন্দাদের কাছে নিয়ে যাওয়া হবে।

*বেশ কিছু ডাক্তারি পরীক্ষার মধ্য দিয়ে যেতে হবে অভিনন্দনকে। দেখা হবে তিনি ফিট কি না।

*বন্দীদের শরীরে অনেকসময় মাইক্রোচিপ ঢুকিয়ে দেওয়া হয়, যার মাধ্যমে আড়ি পেতে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য হাতিয়ে নেয় শত্রুপক্ষ। অভিনন্দনের শরীরে তেমন কোনো চিপ বসানো হয়েছে কি না, তা স্ক্যান করে দেখা হবে।

*মনোবিদের কাছেও নিয়ে যাওয়া হবে অভিনন্দনকে। বন্দী থাকা অবস্থায় ভারতের নিরাপত্তা ব্যবস্থা সংক্রান্ত তথ্য হাতাতে শত্রুপক্ষ তাকে অত্যাচার করেছে কি না, তা জানার চেষ্টা করা হবে। পাকিস্তানে কোনো ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হতে হয়েছে কি না তাও দেখা হবে।

*অভিনন্দনকে জেরা করতে আনা হতে পারে ইনটেলিজেন্স ব্যুরো (আইবি) এবং রিসার্চ অ্যান্ড অ্যানালিসিস উইং (র) কর্মকর্তাদের কাছেও। তবে সচরাচর পাইলটদের তাদের হাতে তুলে দেয় না বিমানবাহিনী। তাই অভিনন্দনের ক্ষেত্রে তা নাও হতে পারে।

*পাকিস্তানে পা রাখা থেকে ওয়াঘা সীমান্ত পার করা, গোয়েন্দাদের প্রতি মুহূর্তের সবিস্তার বর্ণনা দিতে হবে অভিনন্দনকে। বন্দী অবস্থায় তার কাছে কী কী জানতে চাওয়া হয়, তা জানাতে হবে তাকে।

*গত বুধবার বিমানে ওঠা থেকে পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে বিমান ভেঙে পড়া পর্যন্ত গোটা ঘটনার অভিনন্দনের কাছ থেকে জানবেন গোয়েন্দারা।

*পাকিস্তানি সেনাবাহিনী তার মিগকে নিশানা করতে করে কী ধরনের অস্ত্র ব্যবহার করেছিল, তাও জানার চেষ্টা করা হবে। তার সঙ্গে থাকা কোন কোন নথি তিনি নষ্ট করতে পেরেছিলেন এবং কী কী নথি পাক সেনার হাতে পৌঁছেছে তারও তালিকা তৈরি করা হবে।

*শত্রুপক্ষের হাতে বন্দী ছিলেন অভিনন্দন। সেখানে তাকে আপসের কোনো প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল কি না, তাকে ব্যবহার করার কোনো চক্রান্ত করা হয়েছি কি না, সে বিষয়ে নিশ্চিত হওয়ার চেষ্টা করবেন গোয়েন্দারা। এই গোটা পদ্ধতিকে সামরিক পরিভাষায় বলা হয় ‘ডিব্রিফিং’।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিমানবাহিনীর এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, জেরা ও ডাক্তারি পরীক্ষায় নিজেকে মানসিক ও শারীরিকভাবে সক্ষম প্রমাণ না করতে পারলে, আর কোনো দিনই হয়ত যুদ্ধবিমানে সওয়ার হতে পারবেন না অভিনন্দন। সে ক্ষেত্রে ডেস্কের কাজে বসিয়ে দেওয়া হতে পারে তাকে। তবে তার সঙ্গে কোনো রকম বৈষম্যমূলক আচরণ করা হবে না। খেয়াল রাখা হবে কোনো পরিস্থিতিতেই তাকে যেন অসম্মানিত হতে না হয়।

প্রসঙ্গত, গত মঙ্গলবার ভারতীয় বিমান বাহিনী পাকিস্তানের আকাশসীমায় প্রবেশ করে বিমান থেকে বোমাবর্ষণ করে। পরদিন বুধবার সকালে দুটি ভারতীয় যুদ্ধবিমান ভূপাতিত ও এক পাইলটকে আটক করে পাকিস্তান। পাল্টাপাল্টি হামলায় দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা বৃদ্ধির প্রেক্ষাপটে গতকাল বৃহস্পতিবার পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক মুখপাত্র বার্তা সংস্থা এএফপিকে বলেন, ‘উত্তেজনা নিরসনে ভূমিকা রাখলে আমরা ভারতীয় পাইলটকে হস্তান্তর করতে প্রস্তুত।’ এরপর পাকিস্তান ঘোষণা দেয় যে শান্তির নিদর্শন হিসেবে তাকে মুক্তি দেওয়া হবে।

পাঠকের মতামত

Comments are closed.