অবশেষে জানা গেল আসল সত্য, যেভাবে বিমানবন্দর পার হয় পলাশ!
অনলাইন সংস্করণঃ- বিমান ছিনতাই চেষ্টার ঘটনায় কমান্ডো অভিযানে নিহত পলাশ আহমেদ হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের অভ্যন্তরীণ টার্মিনালে কীভাবে প্রবেশ করেছিলেন তা ক্লোজ সার্কিট (সিসি) ক্যামেরার ফুটেজে প্রকাশ পেয়েছে।
সেখানে দেখা যায়, রবিবার দুপুর ২টা ২ মিনিটে বিমানবন্দরের অভ্যন্তরীণ টার্মিনালে ঢোকার সময় পলাশের হাতব্যাগ স্ক্যানিং এবং শরীর তল্লাশি করা হয়। সেখান থেকে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের কাউন্টারে গিয়ে তিনি বোর্ডিং পাস সংগ্রহ করেন। এরপর টার্মিনালের ভেতরে ৪০ মিনিটের মতো পায়চারি করেন তিনি।
দুপুর ২টা ৫৭ মিনিট ৪০ সেকেন্ডে পলাশের দেহ চূড়ান্ত তল্লাশি হয়। তখনকার ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, পলাশ কালো রঙের হ্যান্ডব্যাগটি স্ক্যানিং মেশিনে দেন। দুই আনসার সদস্যের সামনে এসে দুহাত উঁচু করে দাঁড়ান। আনসার সদস্যরা তখন তার দেহ খুবই হাল্কাভাবে তল্লাশি করেন। এর পরপরই তিনি ডানদিকে ঘুরে কয়েক সেকেন্ড অপেক্ষা করেন। ২টা ৫৮ মিনিট
১৭ সেকেন্ডে স্ক্যানিং করা কালো রঙের ব্যাগটি হাতে তুলে নেন জিন্সপ্যান্ট ও কেডস পরা পলাশ। প্যান্টের বেল্ট খোলার নিয়ম থাকলেও তার ক্ষেত্রে সেটা করা হয়নি। স্ক্যানিং ও শরীর তল্লাশির সময় পাঁচ আনসার সদস্য ও দুই অপারেটরকে দেখা যায়। যে দুজন আনসার শরীর তল্লাশি করেছেন তাদের একজনকে মোবাইল নাড়াচাড়া করতে দেখা যায়।
এদিকে বিমান ছিনতাইয়ের চেষ্টার ঘটনায় করা মামলার তদন্তভার দেওয়া হয়েছে চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের (সিএমপি) কাউন্টার টেররিজম ইউনিটকে। গতকাল সন্ধ্যায় এই ইউনিটের উপকমিশনার মো. শহীদুল্লাহ সাংবাদিকদের বলেন, পরিদর্শক রাজেশ বড়–য়াকে তদন্ত কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। তদন্তকাজ শুরু হয়েছে।
আগের রাতে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্র্তৃপক্ষের (বেবিচক) শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের প্রযুক্তি সহকারী দেবব্রত সরকার বাদী হয়ে পতেঙ্গা থানায় মামলাটি করেন, যাতে নিহত পলাশ আহমেদসহ কয়েকজনকে আসামি করা হয়।
বেবিচকের চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল এম নাইম হাসান জানান, ছিনতাইয়ের ঘটনার শিকার বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের উড়োজাহাজটিকে তারা নিয়ন্ত্রণে নিয়েছেন।
বেবিচকের কর্মকর্তারা জানান, মঙ্গলবার সকালে সংস্থাটির চেয়ারম্যান নাইম হাসান, সদস্য (অপস) এয়ার কমোডর মোস্তাফিজুর রহমান ও শাহজালাল বিমানবন্দরের পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন আব্দুল্লাহ আল ফারুক প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে গিয়ে ছিনতাইয়ের ঘটনার বিষয়ে জানান। পলাশের বিমানবন্দরে প্রবেশ থেকে শুরু করে বোর্ডিংয়ে যাওয়া পর্যন্ত সময়ের ভিডিও ফুটেজ উপস্থাপন করা হয়।
গতকাল বিমানবন্দরে গিয়ে দেখা যায়, কনফারেন্স কক্ষে ঘটনার দিন অভ্যন্তরীণ টার্মিনালে দায়িত্বপালনকারী কর্মকর্তা-কর্মচারী ও নিরাপত্তাকর্মীদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। দুর্ঘটনাকবলিত বিমানের একজন কেবিন ক্রু বলেন, সেদিন এক মুহূর্তের জন্য পলাশকে ততটা সিরিয়াস মনে হয়নি।
তার সামনে দিয়ে একে একে সব যাত্রী বের হয়ে এলো বিমান থেকে, কিন্তু তিনি কাউকে বাধা বা হুমকি দেননি। শুধু প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলার শর্ত না মানা হলে বিমান ছিনতাইয়ের হুমকি দেওয়া ছাড়া অন্য কোনো বডি ল্যাঙ্গুয়েজ দেখা যায়নি তার মধ্যে।
সোনারগাঁ প্রতিনিধি জানান, দুবাইগামী বাংলাদেশ বিমানের ‘ময়ূরপঙ্খী’ উড়োজাহাজ ছিনতাইয়ের চেষ্টাকারী মাহমুদ পলাশের দাফন সম্পন্ন হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার সকালে নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ উপজেলার পিরোজপুর ইউনিয়নের দুধঘাটা গ্রামে জানাজা শেষে স্থানীয় কবরস্থানে লাশ দাফন করা হয়।
পলাশের বাবা পিয়ার জাহান সরকার জানান, গত সোমবার রাত ৯টার দিকে চট্টগ্রামের পতেঙ্গা থানার এসআই জসিমের নেতৃত্বে পুলিশের একটি দল তাকে সোনারগাঁ থেকে চট্টগ্রামে নিয়ে যায়। ওই রাতেই পলাশের লাশ হস্তান্তর করে পতেঙ্গা থানা পুলিশ।
তিনি বলেন, লাশের সঙ্গে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র দিয়ে দেয় পুলিশ। লাশ নিয়ে মঙ্গলবার ভোর ৬টায় সোনারগাঁয়ে পৌঁছাই। সকাল ৯টায় জানাজা শেষে পলাশকে দাফন করা হয়। এ সময় পুলিশ বা প্রশাসনের কোনো লোকজন উপস্থিত ছিলেন না। পলাশের নিকটাত্মীয় ও এলাকাবাসী জানাজায় অংশ নেন।
সূত্র বিডিভিউঃ