200141

স্বামী বিদেশ থাকলে যা হয় (ভিডিও) পর পুরুষের সাথে কিভাবে মিলেমিশে…

কর্মসংস্থানের জন্য প্রতিবছর বাংলাদেশের অনেক মানুষ বিভিন্ন দেশে পাড়ি জমাচ্ছে। ফলে বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের অন্যতম প্রধান খাত হিসেবে উপরের দিকে রয়েছে জনশক্তি রপ্তানি খাত। ১৯৭৬ সালে ৬ হাজার ৬৭ জন কর্মী পাঠানোর মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের জনশক্তি রপ্তানি প্রক্রিয়া শুরু হয়। সরকারিভাবে এক কোটি দশ লাখ মানুষ বিদেশে কাজ করছে বলা হলেও, ধারণা করা হয় দুই কোটিরও অধিক বাংলাদেশি বিভিন্ন দেশে শ্রম দিচ্ছেন । বর্তমানে ১৬০ টি দেশে বাংলাদেশি শ্রমিক রয়েছে, তবে মধ্যপ্রাচ্যেই সবচেয়ে বেশি।

পুরুষের পাশাপাশি কর্মসংস্থানের জন্য নারীদেরও পাঠানো হচ্ছে বিভিন্ন দেশে। জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো (বিএমইটি) থেকে জানা যায়, ১৯৯১ থেকে ২০১৫ পর্যন্ত ৩ লাখ ৪৩ হাজার ৮৪৫ জন নারী কর্মী বিদেশে গিয়েছে। এর বেশিরভাগই গিয়েছে মধ্যপ্রাচ্যে যা প্রায় ৮৪ শতাংশ। ১৮ শতাংশের মত গিয়েছে দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশে। বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রীর দেওয়া তথ্য অনুযায়ী বেশি নারী কর্মী গিয়েছে আরব আমিরাতে। ২০০৪ এর জুন থেকে ২০১৬ পর্যন্ত দেশটিতে মোট ১ লাখ ১৬ হাজার ৫৫০ জন নারী কর্মী গিয়েছে।

সৌদি আরবে দীর্ঘদিন শ্রমিক পাঠানো বন্ধ ছিল। গত বছরের ১০ ফেব্রুয়ারি দেশটির সাথে জনশক্তি রপ্তানির জন্য নতুন করে চুক্তি হয় এবং ন্যূনতম ৮০০ রিয়াল মজুরিতে ২০ হাজার নারী শ্রমিক পাঠানোর উদ্যোগ নেয়া হয়। সৌদি সরকার দুই লাখের বেশি নারী কর্মীর চাহিদা জানালেও বাংলাদেশ থেকে প্রতি মাসে দশ হাজার নারী কর্মী পাঠানোর কথা বলা হয়। তবে সৌদি সরকার জানিয়েছে তারা প্রায় দুই লাখ নারীর জন্য ভিসা প্রস্তুত রেখেছে।

সৌদি আরবে যাবার ক্ষেত্রে নারীকর্মীদের সমস্ত খরচ বহন করে সৌদি নিয়োগকারী সংস্থা। নারীদের আকৃষ্ট করতে বেসরকারী উদ্যোগে বিনা খরচে এক মাসের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়। এছাড়াও সরকারী ২৬টি কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে আরবি ভাষা, গৃহস্থালীর কাজকর্ম এবং সৌদি নিয়ম-কানুন শেখানো হচ্ছে। এ ব্যাপারে ঢাকায় একটি সৌদি নিয়োগকারী সংস্থা আল শারক’র ব্যবস্থাপক গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, ‘বাংলাদেশ থেকে আরো বেশি নারীকর্মী সৌদি আরবে দরকার। বাংলাদেশি গৃহপরিচারিকা আমাদের জনগনের পছন্দ, কারণ তারা মুসলিম এবং কাজে বেশ ভালো।’
কিন্তু গত বছরে সৌদি আরবে যাওয়া অনেক নারীই ফিরে এসেছে বাংলাদেশে। এর কারণ খুঁজতে গিয়ে উঠে এসেছে বাংলাদেশি নারী কর্মীদের উপর নানা ধরণের নির্যাতনের কাহিনী। সবচেয়ে ভয়ঙ্কর ব্যাপার হল নারী কর্মীরা সেখানে প্রতিনিয়ত যৌন নিগ্রহের শিকার হচ্ছে। সম্প্রতি ময়মনসিংহের এক নারী সৌদিতে গণধর্ষনের শিকার হচ্ছেন বলে জানা গেছে, ফলে সৌদিতে নারী কর্মীদের অবস্থা নিয়ে আবারও বিষয়টি আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে চলে এসেছে।

সৌদি আরবে যাবার ২৬ দিন পর ময়মনসিংহের নান্দাইল উপজেলার ঐ নারী তার স্বামীকে ফোন করে জানান, ‘আমি প্রতিদিন ওদের গণনির্যাতনের শিকার হচ্ছি, আমাকে বাঁচাও’। নান্দাইলের এই দিনমজুর স্বামী ঢাকার একটি রড সিমেন্টের দোকানে কাজ করতেন। বছর পাঁচেক আগে রড বহন করতে গিয়ে এক দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত হয়ে চলে আসেন বাড়িতে। বাম কাঁধ ভেঙে যাওয়ার ফলে তিনি হয়ে পড়েন কর্মহীন। গত বছর তার স্ত্রী নরসিংদীর কিছু নারীর সাথে সৌদি আরবে যান কাজের জন্য । গত ১৮ ডিসেম্বর তিনি তার স্বামীকে ফোন করে জানান তাকে একটি চারতলা ভবনে আটকে রেখে প্রতিদিন গণনির্যাতন চালানো হয়। স্বামীর পরামর্শে ঐ নারী কৌশলে পালিয়ে গেলেও পুলিশ তাকে ধরে ফেলে এবং ঐ নারীর মালিক তাকে ছাড়িয়ে নিয়ে যায়। পরে আর কোনো যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি তার সাথে। দিনমজুর স্বামী বলতে পারছেন না তার স্ত্রী বেঁচে আছে কিনা। অবশ্য ওই নারীর স্বামী ইতোমধ্যেই একজনের নাম উল্লেখ করে নান্দাইল থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন। নান্দাইল থানার ওসি দালালদের নাম, পরিচয় জানিয়ে অভিযোগ করার প্রেক্ষিতে ব্যবস্থা নেবার কথা জানিয়েছেন।

সৌদি আরব থেকে ফেরত আসা কয়েকজন নারীর সাথে কথা বলে সেখানকার অবস্থা আরেকটু বোঝা যাবে। এরকম একজনই বলছিলেন তার স্বপ্নভঙ্গের কথা। তিনি বলেন, ‘দশ-পনের দিন ভালই ছিলাম। কিন্তু আমারে বাড়িতে ফোন করতে দেয় না, বাড়ির বাইরেও যাইতে দেয় না।’ তবে এই নারীর ভয়াবহ অভিযোগটি হল যৌন হয়রানির। তিনি বলেন, ‘আমি সারাদিন কাম কাজ-করি, পরে যখন রাইতে ঘুমাইতে যাবো তখন বাড়ির মালিক আমার ঘরে গিয়া ডিস্টার্ব করতো।’ পরে কৌশলে অফিসের সঙ্গে যোগাযোগ করে দেশে ফেরত আসেন তিনি। তিনি বলছিলেন, ‘আমি তো দেহ ব্যবসা করতে যাই নাই। আমি তো গেছি কামের জন্য, কাম করমু, ভাত খামু, পয়সা ইনকাম কইরা পোলাপান মানুষ করমু। কষ্টের লাইগা গেছি।’ একই অভিজ্ঞতার শিকার হয়ে দেশে ফিরে আসেন রূপগঞ্জের রহিমা। অতিরিক্ত কাজের চাপ আর যৌন নির্যাতনে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েছেন।

পাঠকের মতামত

Comments are closed.