198963

সেই নারীকে দেখতে সুবর্ণচরে হিরো আলম

যুগান্তর : নোয়াখালীর সুবর্ণচরে ঘরে ঢুকে স্বামী-সন্তানদের বেঁধে পিটিয়ে আহত করে তাদের সামনে গণধর্ষণের শিকার গৃহবধূকে দেখতে গেছেন আশরাফুল আলম ওরফে হিরো আলম। শনিবার সকালে তিনি নোয়াখালী ২৫০ শয্যা হাসপাতালে নির্যাতিতা গৃহবধূ ও তার পরিবারের সঙ্গে দেখা করেন। দেখার পর হিরো আলম বলেন, ‘গরিব গরিবের দুঃখ বোঝে, তাই আমি এত দূর থেকে ছুটে এসেছি। আমি নির্যাতনকারীদের দ্রুত আইনের আওতায় নিয়ে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই। চাই তাদের ফাঁসি হোক, এমন ঘটনা যেন আর বাংলার ঘরে না ঘটে।’

তিনি বলেন, ‘নির্বাচনের দিন আমাকেও মারধর করা হয়েছে। আমার বিচার পরে, আগে আমার এই বোনের অপরাধীদের বিচার করেন।’ নোয়াখালী থেকে হিরো আলম পরে সুবর্ণচরে নির্যাতিতা গৃহবধূর বাসায় যান। সেখানে তার মেয়ের সঙ্গে কথা বলেন ও সান্ত্বনা দেন। প্রসঙ্গত, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিন ধানের শীষে ভোট দেয়ার জের ধরে রাত ১১টার দিকে নোয়াখালীর সুবর্ণচর উপজেলার চরজুবলি ইউনিয়নের মধ্যম বাগ্যা গ্রামে সিএনজিচালকের স্ত্রী (৪০) গণধর্ষণের শিকার হন।

এ সময় আওয়ামী লীগ ও যুবলীগের সন্ত্রাসীরা গৃহবধূর স্বামী, ছেলেমেয়েকে পিটিয়ে আহত করে। ঘটনার পরপরই গোপনে গৃহবধূ ও আহতদের নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। হাসপাতালে গৃহবধূর দাবি, নৌকার সমর্থকদের সঙ্গে বাগ্বিতণ্ডার জেরে তিনি ধর্ষণের শিকার হয়েছেন। তবে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতারা এ ঘটনার সঙ্গে দলীয় সম্পৃক্ততার অভিযোগ অস্বীকার করেন।

এ ঘটনায় গৃহবধূর স্বামী অভিযোগ করলে সোমবার লক্ষ্মীপুর থেকে আবদুল মন্নানের ছেলে ও আওয়ামী লীগ কর্মী স্বপন (৩০) এবং মঙ্গলবার রাতে চরজুবলি ইউনিয়নের মধ্যম বাগ্যা গ্রামের আহাম্মদ উল্লাহর ছেলে বাদশা আলমকে (৩৫) গ্রেফতার করে পুলিশ। এরপর বুধবার দুপুরে একই গ্রামের ইসমাইলের ছেলে আওয়ামী লীগ কর্মী মো. সোহেলকে (৩৫) কুমিল্লা জেলার অজ্ঞাত স্থান থেকে গ্রেফতার করে পুলিশ।

এলাকাবাসী জানান, নোয়াখালী-৪ (সদর ও সুবর্ণচর) আসনে বিএনপি প্রার্থী মোহাম্মদ শাহজাহানের ধানের শীষ প্রতীকে রোববার সকাল ১০টায় ভোট দেন ওই গৃহবধূ।এ কারণে আওয়ামী লীগের ক্যাডাররা প্রচণ্ড ক্ষুব্ধ হয়। এরপর ওইদিন রাত ১১টার দিকে গৃহবধূর বাড়িতে প্রবেশ করে তারা তিনজনকে মারধর এবং বেঁধে রেখে গৃহবধূকে গণধর্ষণ করে। এরপর ঘটনাটি কাউকে না বলতে এবং মামলা না করতে প্রাণনাশের হুমকি দিয়ে তারা পালিয়ে যায়।

ধর্ষকরা হলো- একই গ্রামের মো. তোফায়েলের ছেলে আওয়ামী লীগ কর্মী ও সন্ত্রাসী মোশাররফ হোসেন, ইসমাইলের ছেলে সোহেল, আবুল কাশেমের ছেলে বেচু, আবুল কালামের ছেলে সোহেল, আবদুল মন্নানের ছেলে স্বপন, ইউছুপের ছেলে আনোয়ার, নুরুল হকের ছেলে আমীর হোসেন, বাগন আলী ওরফে ইসমাইলের ছেলে মো. হানিফ, টোকাইর ছেলে ছালাউদ্দিন, খোরশেদের ছেলে ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য রুহুল আমিন, আবুল কালামের ছেলে সোহেল, আহমদ উল্লাহর ছেলে বাদশা।

ঘটনার পর গৃহবধূ ও আহতদের গোপনে গভীর রাতে নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

এ ঘটনায় একই গ্রামের ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) সদস্য রুহুল আমিন, মোশাররফ হোসেন, বাদশা, সোহেল, হেঞ্জু, সোহেল, বেচু, জসিম, স্বপন, মো. হানিফ, আবুল, আনোয়ার, আমির হোসেনসহ ১২ জনকে আসামি করে গৃহবধূর স্বামী প্রথমে থানায় অভিযোগ এবং পরে মামলা করেন। তবে রহস্যজনক কারণে ইউপি সদস্য রুহুল আমিন, আনোয়ার ও হেঞ্জুর নাম বাদ দিয়ে ৯ জনের বিরুদ্ধে এফআইআর করা হয়।

গৃহবধূর স্বামী অভিযোগ করে বলেন, অভিযুক্তরা গ্রামে ঘোরাফেরা করলেও পুলিশ তাদের গ্রেফতার করছে না।

এদিকে এ ঘটনা তদন্তে নোয়াখালীতে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন এবং আইন ও সালিশ কেন্দ্রের দুটি তদন্ত দল বুধবার তদন্ত শুরু করেছে।

পাঠকের মতামত

Comments are closed.