198158

পৃথিবীর সবচেয়ে ধনী লোকের গল্প!

অনলাইন সংস্করণ:- ‘ব্যবসা’ শব্দটা শুনলে সাধারণত আ্মাদের মনে ভেসে উঠে কল কারখানা ,দোকানপাট ইত্যাদি। অথচ পৃথিবীর সবচেয়ে ধনী ব্যবসায়ীর নেই কোন নিজস্ব কল-কারখানা, নেই কোন দোকানপাট। কি অবাক হচ্ছেন? অবাক হওয়ার কিছু নেই। কারণ পৃথিবীতে এখন ডিজিটাল রূপান্তরের সময়। এই ডিজিটাল রূপান্তর (ট্রান্সফরমেশন) নিয়ে যেকোনো সেমিনার বা আলোচনায় প্রথম যে উদাহরণটি দেওয়া হয়, সেটি অ্যামাজন ডটকমের। অ্যামাজন ডটকম কে বলা হয় পৃথিবীর সবচেয়ে বড় খুচরা পণ্য বিক্রেতা প্রতিষ্ঠান, অথচ এর নিজস্ব কোন কোনো দোকান নেই, নেই কল কারখানা। আপনি জেনে বিস্মিত হবেন যে, এই প্রতিষ্ঠানটির মালিক জেফ বেজোস এখন পৃথিবী নামের এই গ্রহের সবচেয়ে ধনী মানুষ। আসুন জেনে আসি পৃথিবীর সবচেয়ে ধনী মানুষ জেফ বেজোসের জীবনের গল্প।

(স্ত্রীর সাথে জেফ বেজোস)

ফোর্বস এর ২০১৮ সালের সমীক্ষার তথ্য অনুসারে, পৃথিবীর সবচেয়ে ধনী মানুষ জেফ বেজোস। বর্তমানে ৮ হাজার ৭০০ কোটি ডলারের সম্পদের অধিকারী জেফ বেজোস জন্মেছিলেন জেফরি প্রেসটন জর্জেনসেন নামে। নিউ মেক্সিকোতে জ্যাকলিন ও জর্জেনসেন দম্পতির ঘরে ১৯৬৪ সালের ১২ জানুয়ারি জেফের জন্ম। শীর্ষ ধনী কিংবা সফল ব্যক্তির জীবনের দিকে তাকালে আমরা সাধারণত দেখতে পাই তারা শূণ্য থেকে সফলতার শীর্ষে উঠেছেন। জেফ বেজোসের বেলায় ব্যাপারটা তেমন নয়। জেফ যখন ছোট, মা জ্যাকলিনের পরিবারের জমির পরিমাণ ছিল ২৫ হাজার একর। মায়ের কাছ থেকে পাওয়া জমি এবং পরে নিজের কেনা জমি মিলিয়ে ২০১৫ সালের মার্চ মাসে জেফ বেজোস হয়ে ওঠেন টেক্সাসের সবেচেয়ে বেশি পরিমাণ জমির মালিক।

(শৈশবে জেফ বেজোস)

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির প্রতি আগ্রহ ছোটবেলা থেকেই দেখা যায় জেফ বেজোসের মধ্যে। ছোট ভাইবোনের জন্য এটাসেটা দিয়ে একটা অ্যালার্ম ঘড়ি বানিয়ে দিয়েছিলেন। বিজ্ঞানের নানা আয়োজনে অংশ নিতেন নিয়মিত। ১৯৮৬ সালে প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তড়িৎ প্রকৌশল ও কম্পিউটার বিজ্ঞানে স্নাতক হন জেফ বেজোস। স্নাতক হওয়ার পর জেফের পেশাজীবন শুরু হলো। তবে তা জমিজমা বা অ্যামাজন ডটকম দিয়ে নয়; প্রভাবশালী শেয়ারবাজার ওয়াল স্ট্রিটে কাজ শুরু করেন। তখন তিনি বড় বড় কোম্পানির কম্পিউটার নেটওয়ার্ক তৈরি করতেন। এরপর দু-একটা প্রতিষ্ঠানে কাজ করে ১৯৯৪ সালে প্রতিষ্ঠা করেন অ্যামাজন ডটকম।

জেফ মূলত ইন্টারনেটভিত্তক বই কেনাবেচার ওয়েবসাইট হিসেবে যেটি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন, সেই অ্যামাজন ডটকম এখন সব ধরনের পণ্য বিক্রি করে। পৃথিবীজুড়েই চলে অ্যামাজনের পণ্য বিকিকিনি। প্রকৃতির বিশাল-বিপুল বিস্ময় অ্যামাজনের মতোই তথ্যপ্রযুক্তি জগতের বিস্ময় অ্যামাজন ডটকম। নিজের বাড়ির গ্যারেজেই শুরু করেছিলেন অ্যামাজনের কাজ।

জেফ বেজোস সেই বিরল নির্বাহীদের একজন, যিনি সব কর্মী নিয়োগের সময় ইন্টারভিউ বোর্ডে নিজে উপস্থিত থাকেন। অ্যামাজনের প্রথম এক দশকে এই নিয়মের তো কোনো ব্যতয়ই ঘটেনি।

নিজের ব্যবসায় উদ্যোগকে শুধু অ্যামাজনেই আটকে রাখেননি জেফ। ২০১৩ সালে কিনে নেন বিশ্বখ্যাত পত্রিকা দ্য ওয়াশিংটন পোস্ট। ২০০০ সালে একেবারে অন্য রকম প্রতিষ্ঠান গেড়ন জেফ। ব্লু অরিজিন নামের এই প্রতিষ্ঠান যাত্রীবাহী মহাকাশযান তৈরি করে। মহাকাশে বিলাসবহুল হোটেল, পার্ক, রেস্তোরাঁ ইত্যাদি বানানোর কাজে লেগে আছে জেফের এই প্রতিষ্ঠান। গুগলে বিনিয়োগ রয়েছে জেফ বেজোসের। প্রযুক্তিভিত্তিক সাড়া জাগানো উদ্যোগে বেজোস এক্সপিডিশন নামে বিনিয়োগ করে যাচ্ছেন বেজোস। আংশিক হলেও বেজোসের বিনিয়োগ আছে এমন প্রতিষ্ঠানের তালিকায় টুইটার, উবার, এয়ারবিএনবি থেকে শুরু করে অসংখ্য প্রতিষ্ঠান রয়েছে। অ্যামাজনের অঙ্গপ্রতিষ্ঠানও কম নয়। অ্যালেক্সা ইন্টারনেট, এ নাইন ডটকম ইত্যাদি আছে এই তালিকায়। অভিনয়ের অভিজ্ঞতাও নিয়েছেন জেফ। ২০১৬ সালে স্টার ট্রেক বিওয়াইন্ড-এ অভিনয় করেন।

অ্যামাজনের প্রতিষ্ঠাতা, প্রেসিডেন্ট ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) জেফের ‘টু পিৎজা রুল’ নিয়ে বেশ কথা হয়। অফিসে জেফ যে সভাগুলো করেন, সেখানে যে কজনই উপস্থিত থাকুক না কেন, তাঁদের আপ্যায়নের জন্য দুটি পিৎজা আর পানীয় থাকবে। দুটি পিৎজার কমও না বেশিও না। লোক বেশি হলে ওই দুটি পিৎজা ভাগ করে খেতে হবে। আর কম হলে একেকজন বেশি বেশি পিৎজা খেতে পারবেন। জেফ বিশ্বাস করেন, এ দুই পিৎজার নিয়মে নাকি উৎপাদনশীলতা বাড়ে।

পাঠকের মতামত

Comments are closed.