196694

কোন সময় পর্ন সাইটে আগ্রহ কমে ভারতীয়দের?

দেওয়ালি বা অন্যান্য ধর্মীয় উৎসবের সময় পর্নোগ্রাফি ওয়েবসাইট কম দেখেন ভারতীয়েরা। শনিবার আর রবিবার ভারতীয়রা পর্নোগ্রাফি দেখেন কিনা, সামনে এল সেই মানসিকতার কথাও। শুধু তাই নয়, প্রাপ্তবয়স্ক ভিডিয়ো দেখায় দর্শকসংখ্যার বিচারে এখন সারা পৃথিবীতে তিন নম্বরে ভারত। পর্নোগ্রাফিক বিষয় নিয়ে ভারতীয় সমাজের এরকম নানান অজানা তথ্য সামনে এল সদ্য প্রকাশিত একটি বইতে।

সম্প্রতি ‘ইন্ডিয়া কানেক্টেড’ বলে একটি বই প্রকাশ করেছেন ভারতীয় লেখক রবি আগরওয়াল। সস্তার স্মার্টফোন আর সস্তার ডেটা কী ভাবে ডিজিটাল দুনিয়ায় ভারতীয়দের মানসিকতায় পরিবর্তন এনেছে, তা নিয়েই বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে বইটিতে।

বইটির লেখক ‘পর্নহাব ডট কম’ ওয়েবসাইট থেকে প্রকাশিত রিপোর্টের ভিত্তিতেই এই সিদ্ধান্তে পৌঁছেছেন। ইউটিউব ভিডিয়োর মতোই পর্নহাব আন্তর্জাতিক ডিজিটাল দুনিয়ায় গত কয়েক বছরে আধিপত্য তৈরি করেছে। তবে তা শুধু মাত্র পর্নোগ্রাফিক বা কঠোর ভাবে প্রাপ্তবয়স্ক বিষয়ের মধ্যেই সীমাবদ্ধ। ২০১৬ সালে তাদের ওয়েবসাইটে ভারতীয়দের আসা-যাওয়া বিশ্লেষণ করে প্রকাশিত রিপোর্টে দেখা যাচ্ছে, দেওয়ালির সময় পর্নহাব ডট কমে ভারতীয় দর্শক সংখ্যা প্রায় ১৭ শতাংশ কমে গিয়েছে। শুধু দেওয়ালি নয়, অন্যান্য উৎসবের ক্ষেত্রেও একই প্রবণতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। রমজান মাসের সময়ও পর্নহাবে ভারতীয় দর্শকদের সংখ্যা প্রায় ১৫ শতাংশ কমে গিয়েছে বলে দেখা যাচ্ছে রিপোর্টটিতে। রবিবার দিন ভারতীয় দর্শকদের সংখ্যা কমে গেলেও শনিবার প্রাপ্তবয়স্ক ওয়েবসাইটে ভারতীয়দের ভিড় উপচে পড়ে, এমনটাই জানাচ্ছে পর্নহাব।

প্রাপ্তবয়স্ক ভিডিয়োর সামগ্রিক দর্শক সংখ্যার বিচারেও ভারতীয়দের উত্থান অব্যাহত। ২০১৭ সালের হিসাব অনুযায়ী সারা পৃথিবীতে তিন নম্বরে ভারত। ভারতের আগে আছে শুধু আমেরিকা ও গ্রেট ব্রিটেন। এই প্রসঙ্গে গুগলের একটি তথ্যও লেখা হয়েছে রবি আগরওয়ালের বইটিতে। ২০১৬ সালে পটনা রেল স্টেশনে ফ্রি ওয়াইফাই ইন্টারনেট সংযোগ দিয়েছিল গুগল। পরে দেখা যায়, এই ওয়াইফাই সংযোগ থেকে দেশের মধ্যে সব থেকে বেশি প্রাপ্তবয়স্ক ভিডিয়ো দেখা হয়েছে।

সারা পৃথিবীতে পর্নহাব ওয়েবসাইট যাঁরা দেখেন, তাঁদের গড় বয়স ৩৫। অথচ ভারতীদের দর্শকদের গড় বয়স পাওয়া যাচ্ছে ৩০। অর্থাৎ, তুলনামূলক ভাবে নবীন প্রজন্মই ভারতবর্ষে প্রাপ্তবয়স্ক ভিডিয়ো বেশি দেখেন। আর এই দর্শকদের ৮৬ শতাংশই মোবাইল ব্যবহারকারী।

আর প্রাপ্তবয়স্ক বিষয় বা পর্নোগ্রাফিক ভিডিয়ো দেখায় পিছিয়ে নেই ভারতীয় মহিলারাও। রিপোর্টে দেখা যাচ্ছে, ভারতীয় দর্শকদের ৩০ শতাংশই মহিলা। প্রথমে ফিলিপিন্স। এই দেশে দর্শকদের ৩৬ শতাংশই মহিলা। এর পর ব্রাজিল ও দক্ষিণ আফ্রিকা। তার ঠিক পরেই ভারত। অর্থাৎ, মহিলা দর্শকদের সংখ্যায় শতাংশের হিসেবে সারা পৃথিবীতে চার নম্বরে ভারত।

এই প্রসঙ্গে লেখক রবি আগরওয়াল একটি চমকপ্রদ তথ্য লিখেছেন তাঁর বইতে। ২০১১ সাল পর্যন্ত করণজিৎ কউর ভোরা বলে কাউকে চিনতেন না ভারতীয়রা। সেই ব্যক্তিই ২০১২ সালে ভারতীয়দের গুগল সার্চে উঠে আসেন এক নম্বরে। তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে তার পর থেকে গুগলের সার্চে করণজিৎকে টপকাতে পারেননি কোনও ক্রিকেটার, রাজনীতিক বা বলিউডি অভিনেতা। ২০১২ থেকে ২০১৭, টানা ছয় বছর ধরে গুগলের হিসেবে এক নম্বরেই আছেন করণজিৎ কউর ভোরা ওরফে সানি লিওন। ২০১১ সালে একটি টেলিভিশন শোয়ের মাধ্যমে ভারতের বিনোদন দুনিয়ায় আবির্ভাব হয় সানি লিওনের। তার পর থেকেই ইন্টারনেট দুনিয়া তাঁর বিজয়রথ অব্যাহত।

ভারতে ইন্টারনেটের ব্যবহার কী হারে বাড়ছে এবং তাতে ভারতীয়দের মানসিকতা কী ভাবে বদলাচ্ছে, এই হল ‘ইন্ডিয়া কানেক্টেড’ বইটির বিষয়। ২০০০ সালে ২ কোটি মানুষের কাছে ইন্টারনেট সংযোগ ছিল। সেখানে ২০১৭ সালে সেই সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ৪৬ কোটি। প্রতি সেকেন্ডে তিন জন ভারতীয় ইন্টারনেট সংযোগ ব্যবস্থায় যুক্ত হচ্ছেন।

সারা পৃথিবীতে অনেক ক্ষেত্রেই ভারতীয়দের পরিচিতি রক্ষণশীল, ধর্মভীরু, পর্দানসীন, পারিবারিক মূল্যবোধে বিশ্বাসী জনগোষ্ঠী হিসেবে। পর্নহাব প্রকাশিত রিপোর্ট, গুগলের বিশ্লেষণ আর রবি আগরওয়ালের বই অবশ্য বলছে অন্য কথা। তা হলে কি ইন্টারনেট যোগাযোগের কারণেই বদলাচ্ছে মানসিকতা? নাকি ইন্টারনেট আসায় বেরিয়ে আসছে চিরকালীন মানসিকতা? সেই প্রশ্নটা থেকেই যাচ্ছে। 
আনন্দবাজার

পাঠকের মতামত

Comments are closed.