195333

ফোর-জি পাল্টে দিচ্ছে জীবনবোধ

সাধারণ মোবাইল ফোনকে প্রযুক্তিবিদরা অনেক আগেই ‘ব্যক্তিগত সচিব’ এর মর্যাদা দিয়েছেন। তাহলে ফোর-জিকে কি বলা যায়? মোবাইল প্রযুক্তির আধুনিক সংস্করণ ফোর-জি সম্পর্কে চোখ বুজে বলে ফেলা যায়, এ প্রযুক্তি অর্থনৈতিক সম্ভাবনার দ্বার খুলে দিয়ে আমাদের জীবনবোধ পাল্টে দিচ্ছে।

আচ্ছা, ওই ডিভাইসটিকে আপনি কী বলবেন, যাতে রয়েছে একটি সুদৃশ্য স্ক্রিন, একটি পরিমিত কীবোর্ড, কন্টাক্ট, ইমেইল আর ডকুমেন্টের মতো ব্যক্তিগত তথ্য সংরক্ষণের জম্পেশ স্টোরেজ, আঙ্গুলের আলতো ছোঁয়ায় অডিও-ভিডিও ফাইল খোলার চৌকস সামর্থ্য, গেমস আর স্প্রেডশিট প্রোগ্রাম, রয়েছে যোগাযোগের অনন্য উপাদান। উত্তরটা অনেকের জিভের ডগায় লাফাবে। এক নিঃশ্বাসে হয়তো কেউ কেউ বলবেন, কেন কম্পিউটার! জনাব, হিসাবে ভুল হচ্ছে। কারণ ওটা যে ফোরজি মোবাইল ফোন।

আমেরিকার মতো উন্নত দেশে এখন ৬০ শতাংশের বেশি ইন্টারনেটের কাজ ফোরজি বা ফোরজি মোবাইলের মাধ্যমে চলছে। অর্থনৈতিক দিক ও বাস্তবতার দিক থেকে বাংলাদেশের মতো একটি উন্নয়নশীল দেশে ইন্টারনেট আরও ছড়িয়ে দিতে ফোরজিই হবে সবচেয়ে বেশি কার্যকর প্রযুক্তি।

দেশের যে কোনো প্রাস্ত থেকে, যে কোনো সময় যে কোনো ধরনের টিকিট, টাকার লেনদেন, উকিল নোটিশ ফোরজির বাটনে টিপেই সারতে পারছে বলেই ডিজুস প্রজন্ম ফোরজি প্রযুক্তিকে রাতদিন পেন্নাম জানাচ্ছে।

টেক বিশেষজ্ঞদের ধারণা, জটিল ও অত্যাধুনিক বেশ কিছু কাজে পিসি আর ল্যাপটপ থেকেই যাবে। কারণ একজন আর্কিটেক্ট যদি ডিজাইন প্রোগ্রাম চালাতে চান, তাহলে পিসিই হবে তার শ্রেষ্ঠ অবলম্বন। ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার যদি নতুন ধরনের সার্কিটের ডিজাইন তৈরি করতে চান, তাহলে তিনি পিসিকেই প্রাধান্য দেবেন। ফিল্ম মেকার যদি ভিডিও এডিট করতে চান, তাহলে পিসিই গ্রেট! কিন্তু বর্তমানে হাতের তালুতে ঠাঁই পাওয়া ফোরজি ফোনকে চোখ রাঙানোর ক্ষমতা কম্পিউটার দিন দিন হারিয়ে ফেলছে।

মোবাইল ফোনের বিবর্তন কল্পনাকেও হার মানাচ্ছে। সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে, ফোরজি নিজেই এখন কম্পিউটার হয়ে উঠছে। কারণ ইন্টারনেটভিত্তিক ব্যাক-আপ সার্ভিস এখন ফোরজিতো দূরের কথা, থ্রি-জিতেও পাওয়া যায়।

আসলে প্রযুক্তির সুপার-সড়কে মেধা ও মননের জম্পেশ মিলনে গড়ে উঠছে যোগাযোগের নন্দিত জীবনবোধ। ফোরজি ফোনের জীবন-ঘনিষ্ঠতা এখানেই। কারণ প্রযুক্তির অফুরান সম্ভাবনার সব কটি দরজা খুলে দিয়েছে এটি। প্রযুক্তিবিদরা এই গ্রহবাসীর সামনে প্রমাণ করতে পেরেছেন, আঙুলের আলতো ছোঁয়ায় নিমেষেই সজীব হয়ে ওঠা একটি ক্ষুদে ডিভাইসও জীবনবোধের প্রতীক হয়ে উঠতে পারে।

নেটওয়ার্কিংয়ের পারসেপশনটাকে বিবেচনায় আনা হলে দেখা যাবে, নতুন মিলেনিয়ামের প্রথম দশকের শেষ ভাগে মোবাইল ফোন সেট হয়ে ওঠে ‘ইন্টারনেট’। কয়েক বছর না গড়াতেই সেই সেটই বনে যায় ‘মিনি কম্পিউটার’। আর প্রযুক্তির চোখ ধাঁধানো উৎকর্ষের প্রেক্ষাপটে সেই মিনি কম্পিউটারই এখন ভুবনগাঁয়ে (গ্লোবাল ভিলেজ) নতুন এক জীবনবোধের সবক দিচ্ছে। এই সবক এতটাই জীবনমুখী যে, হাঁসের বাচ্চাকে যেমন করে সাঁতার শেখানো লাগে না, তেমন করে একজন মানব সন্তানকে আজ ফোরজি ফোন কী, তা শেখানো লাগে না। এটা এখন রীতিমতো ব্যক্তিগত সচিবের মর্যাদা ভোগ করছে।

প্রযুক্তিবিদরা ধারণা দিয়েছেন, আগামীতে হ্যান্ডসেটগুলো হবে অত্যন্ত পাতলা প্রায় এক ইঞ্চির চার ভাগের এক ভাগ সমান। কোনো কি প্যাড থাকবে না। থাকবে না এলসিডি ডিসপ্লে। পুরো হ্যান্ডসেটটি একটি ডিসপ্লে স্ক্রিন হিসেবে থাকবে। সেখানে টাচ সেনসেটিভ কী ও আইকনের মাধ্যমে কল করা, মিউজিক শোনা, ভিডিও দেখা, গেমস খেলা ও অন্যান্য কাজ করা যাবে। হ্যান্ডসেটগুলোর স্ক্রিনটি হবে ব্যাকেলাইটমুক্ত ও ফ্লেক্সিবল। যার ফলে পুরো সেটটিকে ভাঁজ করে রাখা যাবে এবং তখন তার আয়তন হবে একটি ছোট কসমেটিকস প্যাক বাক্সের সমান।

হ্যান্ডসেটগুলো বিভিন্ন প্রযুক্তি দ্বারা সমৃদ্ধ হবে। থাকবে উচ্চ গতির ইন্টারনেট কানেকটিভিটি। প্রতি সেকেন্ডে কয়েক মেগাবিট ড্যাটা আদান-প্রদানে সক্ষম হ্যান্ডসেটগুলো দিয়ে স্ট্রিমিং ভিডিও, টিভি এবং গান সরাসরি দেখা ও শোনা যাবে। এসবই ব্যবহার করা যাবে যদি জিএসএম, সিডিএমএ, ওয়াই-ফাই এবং ওয়াইম্যাক্স নেটওয়ার্ক টেকনোলজি টপকে আসে নতুন প্রযুক্তির নেটওয়ার্ক টেকনোলজি আইএমএস (আইপি-মাল্টিমিডিয়া সাবসিস্টেম)। উচ্চগতির এই নেটওয়ার্ক প্রযুক্তি বিস্তার হতে বেশ কয়েক বছর সময় লাগতে পারে। যার মাধ্যমে আপনি ভিডিও কলিং, ভিওআইপি চালানো, পে টিভি চ্যানেল দেখতে পারবেন হ্যান্ডসেটের মাধ্যমে বিশাল স্ক্রিন জুড়ে।

হাই ডেফিনিশন ভিডিও এবং ফোরডি গেমিংয়ের জন্য থাকবে এক্সট্রা চিপ। থাকবে উচ্চ রেজুলেশন অথবা তারও বেশি মেগাপিক্সেল সমৃদ্ধ ক্যামেরা, যা দিয়ে স্থিরচিত্রের পাশাপাশি প্রফেশনাল মানের ভিডিও রেকর্ডিং করা যাবে। মোবাইলগুলোতে গতানুগতিক মেমোরি কার্ডের পরিবর্তে ব্যবহৃত হবে উচ্চ গতির ফ্ল্যাশ হার্ডড্রাইভ যা হ্যান্ডসেটকে সমৃদ্ধ করবে অফুরন্ত ধারণ ক্ষমতা দিয়ে।

ব্রেকিংনিউজ/

পাঠকের মতামত

Comments are closed.