195183

যুক্তরাষ্ট্রে মুসলিমবিদ্বেষে লাভবান হচ্ছে মুসলিমরাই!

যুক্তরাষ্ট্রের অন্য যেকোনো ধর্মের চেয়ে মুসলিম ধর্মাবলম্বীরা গত এক বছরে বেশি বিদ্বেষমূলক বৈষম্যের শিকার হয়েছে। কিন্তু আদতে এর ফল হিতে বিপরীত হয়েছে। কারণ এর ফলে সেখানকার মুসলিমরা বেশি করে দেশটির গণতান্ত্রিক রাজনীতিতে জড়িত হচ্ছেন। ওয়াশিংটন ডিসি ও মিশিগানভিত্তিক থিংকট্যাংক ইনস্টিটিউট ফর সোস্যাল পলিসি অ্যান্ড আন্ডারস্ট্যান্ডিং (আইএসপিইউ) গত সপ্তাহে তাদের প্রকাশিত তৃতীয় বার্ষিক জরিপে এ তথ্য জানায়।

জরিপে বলা হয়, ২০১৬ সালের শেষের দিকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্বাচনী প্রচারণার সময় এবং নির্বাচন পরবর্তী সময়ে মুসলিম জাতিবিদ্বেষী অপরাধের মাত্রা পূর্বের চেয়ে বহুগুণে বেড়ে যায়। প্রাইড অ্যান্ড প্রেজুডিস শিরোনামের ওই জরিপে বলা হয়, দেশটিতে মাত্র এক শতাংশ মুসলমান থাকলেও তারা জনপ্রিয়তায় নিজেদের সংখ্যা অনুপাতের চেয়ে অনেক বেশি স্থান দখলে নিতে সমর্থ হয়েছে।

উল্লেখ্য, যুক্তরাষ্ট্রে মুসলিমবিরোধী অনুভূতি পরিমাপের জন্য প্রথমবারের মতো এ জরিপটি পরিচালিত হয়। এতে যুক্তরাষ্ট্রের আড়াই হাজার নাগরিকের মতামত নেয়া হয়। এই ইসলামভীতি বিষয়টিকে কাটিয়ে উঠতে এবং মার্কিন নাগরিকদের পক্ষপাতিত্বমূলক দৃষ্টিভঙ্গি পাল্টে দিতে যুক্তরাষ্ট্রের মুসলমানরা আরো অধিকহারে রাজনীতিতে সক্রিয় হচ্ছেন এবং নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করছেন। আইএসপিইউর গবেষণা বিভাগের পরিচালক, যিনি বারাক ওবামার প্রশাসনে মুসলিমবিষয়ক উপদেষ্টা ছিলেন তিনি বলেন, এর সবচেয়ে উজ্জ্বল দিক হচ্ছে, কয়েক বছর ধরে মুসলমান ভোটারদের রেজিস্ট্রেশনের হার বাড়ছে। অবস্থা যখন কঠিনতর হচ্ছে, তখন তারা বিচ্ছিন্ন না হয়ে বরং রাজনীতিতে আরো বেশি করে সংযুক্ত হচ্ছেন। যদিও দেশের শাসনব্যবস্থা নিয়ে মুসলমানদের সন্তুষ্টির অবস্থা নি¤œপর্যায়ের, তবুও তারা বেশি করে রাজনীতিতে জড়াচ্ছেন।

জরিপে বলা হয়, বর্তমানে ৭৫ শতাংশ মুসলিম জানিয়েছে, তারা ভোটার হয়েছেন। এক বছর আগের তুলনায় হারটি সাত শতাংশ বেশি। এতেই বোঝা যাচ্ছে যে, ধীরে হলেও তারা রাজনীতির ব্যাপারে সচেতন হচ্ছেন এবং এগিয়ে যাচ্ছেন। জরিপে আরো বলা হয়, ৯০ জনের বেশি মুসলিম, যাদের বেশির ভাগই ডেমোক্র্যাট পার্টির সমর্থক তারা দেশের বিভিন্ন প্রান্তে সরকারি অফিস পরিচালনা করছেন। দেশটিতে মুসলমানদের মতো ুদ্র একটি গ্রুপের জন্য এটি সত্যিই ব্যতিক্রমী।

যুক্তরাষ্ট্রে ২০১৭ সালে মুসলিম এবং অন্য প্রগতিশীল প্রার্থীদের সমর্থন দেয়ার জন্য প্লুরালিজম প্রজেক্ট নামের একটি পলিটিক্যাল অ্যাকশন কমিটি গঠিত হয়। এর পরিচালক হামজা খান বলেন, এ দেশের গণতন্ত্রের সাথে যুক্ত না হওয়ার পরিণাম আমরা ভোগ করেছি। জনগণ এখন উপলব্ধি করে নিজেদের রক্ষা করার একমাত্র রাস্তা হচ্ছে এ গণতন্ত্রের সাথেই যুক্ত হওয়া।

প্লুরালিজম প্রজেক্ট সে লক্ষ্যে দেশের বিভিন্ন স্থানে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে প্রার্থীদের সমর্থন করে আসছে। ২০০৮ সালে তাদের সমর্থনেই রাশিদা তালাইব প্রথম মুসলিম নারী হিসেবে মিশিগানের প্রতিনিধি নির্বাচিত হন। এখন তিনি মিশিগানের কংগ্রেসম্যানের সিটের জন্য লড়াই করতে যাচ্ছেন। যদি তিনি নির্বাচিত হন তাহলে তিনি হবেন কংগ্রেসের প্রথম মুসলিম মহিলা। রাশিদা ছাড়াও দেশের বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন পদের জন্য মুসলিমদের সমর্থন জানিয়ে যাচ্ছে এ সংস্থাটি। তবে এখনো মুসলিম প্রার্থীদের নির্বাচনী প্রচারণার সময় বাধার মুখে পড়তে হচ্ছে। এমনকি সরাসরি হামলা, হত্যার হুমকির মুখেও পড়ছেন প্রার্থীরা।

আইএসপিইউর জরিপে আরো বলা হয়, মুসলিমরা সাধারণত সব ধরনের সহিংসতা এড়িয়ে চলতে চায়। তারা মূলত অনুগত নাগরিক। তারা দেশকে নিয়ে গর্বিত ও খুশি। এতে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্রের গণমাধ্যমে মুসলমানদের ধারাবাহিকভাবে সহিংস প্রবণ বলে প্রচার করা হচ্ছে। মুসলমানদের যেকোনো অপরাধের ঘটনাকে অন্য অপরাধের তুলনায় অনেক বেশি করে প্রচার করা হয়।

জর্জটাউন ইউনিভার্সিটির ধর্ম, আন্তর্জাতিক সম্পর্কবিষয়ক এবং ইসলামিক স্ট্যাডিজের অধ্যাপক জন এসপোসিতো বলেন, বর্তমানে ট্রাম্প যাদের দ্বারা ঘেরাও হয়ে আছেন, তাদের দিকে নজর দেন, দেখতে পাবেন তাদের সবাই মুসলিমবিদ্বেষী। তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকজন হলেন মাইকেল ফিন, জন বোল্টন ও মাইক পম্পেও। ফিন একসময় বলেছিলেন, ইসলাম হচ্ছে দূষিত ক্যানসার।

বোল্টন একটি মুসলিমবিরোধী থিংকট্যাংকের প্রধান। আর পম্পেও একটি জিহাদবিরোধী মার্কিন সংস্থার কাছ থেকে সম্প্রতি পুরস্কৃত হয়েছেন। কিন্তু তাদের এই মুসলিমবিদ্বেষ বুমেরাং হয়েছে। এতে মুসলিমরা আগের চেয়ে বেশি হারে রাজনীতির সাথে যুক্ত হয়ে সক্রিয় ভূমিকা পালন করছেন।

সূত্র : আলজাজিরা

পাঠকের মতামত

Comments are closed.