‘পারলে রিপোর্ট লেখেন, কে কি করতে পারে দেখব’
ছেলের কাছ থেকে খাবার, চিকিৎসাসেবা তো পাননি, উল্টো তার দ্বারা মানসিক ও শারীরিক নির্যাতনের স্বীকার হচ্ছেন দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী এবং বধির বৃদ্ধ পিতা হাজি মিয়া চাঁন্দ প্রামাণিক (১১৫)।
গত তিন মাস ধরে অত্যাচার ও জমি হাতিয়ে নেওয়ার ভয়ে ঘরবাড়ি ছেড়ে মেয়েদের বাড়িতে আশ্রয়ে নিয়েছেন তিনি।
পিতার সব জমি (মূল্য প্রায় ২ কোটি টাকা) দলিল নেওয়ার চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে উশৃঙ্খল ছেলে দেলোয়ার হোসেন (৪৫)।
ঘটনাটি ঘটেছে লক্ষ্মীপুরের রায়পুর উপজেলার উত্তর চরবংশী ইউপির ৪নং ওয়ার্ড উদমারা ও বংশী গ্রামের সীমান্তবর্তী এলাকায়। এ ঘটনা নিয়ে এলাকাবাসী ও স্বজনদের মাঝে চরম ক্ষোভ ও উত্তেজনা বিরাজ করছে।
অভিযুক্ত দেলোয়ার তার ৫ বোনের জমি দখল ও পিতার নগদ টাকা ছিনতাইসহ ফসলগুলো লাঠিয়ালদের দিয়ে ভোগদখল করছেন। বাধ্য হয়ে আদালতে ছেলের বিরুদ্ধে ওই বৃদ্ধ পিতা মামলা করায় সন্ত্রাসী দিয়ে স্বজনদের পিটিয়ে আহত করেন দেলোয়ার।
অসহায় নিরীহ দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী বৃদ্ধ সাংবাদিকদের মাধ্যমে সরকারের সহযোগিতা কামনা করেছেন।
মঙ্গলবার বিকালে সহকারী কমিশনার ভূমি (এসিল্যান্ড) কার্যালয়ে উভয়পক্ষকে নিয়ে বসলেও উশৃঙ্খল দেলোয়ার কোনো উত্তর দিতে পারেননি।
এ বিষয়ে অসহায় বৃদ্ধ হাজি মিয়া চাঁন্দ প্রামাণিক জানান- স্ত্রী, ৫ মেয়ে ও দুই ছেলে নিয়ে তার সুখের সংসার চলছিল। ১৯৭৪ সালে তিনি হজ করেছেন। সৃজন ব্যবসা করে তিনি দুই কোটি টাকার সম্পদ গড়েছেন। প্রায় চার মাস আগে তার স্ত্রী মারা যাওয়ার পর শারীরিকভাবে অসুস্থতার পাশাপাশি তার দুচোখও নষ্ট হয়ে যায়। বড় ছেলে দিন মজুর ও ছোট ছেলে বখাটেপনাসহ আওয়ামী লীগের একজন সক্রিয় কর্মী হিসেবে পরিচিত। দুই ছেলে বিবাহিত ও স্ত্রী-সন্তান নিয়ে ভালোভাবে দিন কাটছিল।
তিনি বলেন, তিন মাস আগে তার অন্ধত্ব ও বধির অবস্থায় নিজ ঘরে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। যে ঘরে বাস করেন সেখানে বিদ্যুতের আলো, খাবার, সুচিকিৎসা ও সেবা তো পাই-ই না, উল্টো এ অসহায়ত্বের সুযোগ নিয়ে চোখের চিকিৎসার কথা বলে সাদা কাগজে দস্তখত নিয়ে প্রতারণা করে সব জমির দলিল ছোট ছেলে দেলোয়ার হোসেন তার কাছে নিয়ে যায়। পরক্ষণই দলিল চাইতে গেলে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী বধির বৃদ্ধের ওপর নেমে আসে মানসিক ও শারীরিক অত্যাচার। এসব ঘটনায় স্থানীয় চেয়ারম্যান, মেম্বার ও সমাজের গণ্যমান্য ব্যক্তিদের কাছে বিচার চেয়ে না পেয়ে বৃদ্ধ বাদী হয়ে স্থানীয় প্রভাবশালী মোছলেহ উদ্দিন ও দেলোয়ার হোসেনের নামে ২৬ মার্চ অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ১৪৪ ধারায় মামলা করি (মিছ মামলা নং -২৯২/২০১৮)।
গত ২৯ মার্চ আদালতের নির্দেশে সহকারী কমিশনার ভূমি গত ২৪ এপ্রিল তার সার্ভেয়ারকে দিয়ে ঘটনাস্থল তদন্ত করেন। ওই দিনেই তদন্ত দল ঘটনাস্থল থেকে ফিরে আসার পরই হাজি মিয়া চাঁন্দ ও তার নাতিকে পিটিয়ে আহত করে দেলোয়ার হোসেনসহ তার লোকজন।
গত সোমবার দুপুরে ২০-৩০ জনের লাঠিয়াল বাহিনী নিয়ে ওই বৃদ্ধের ৪ শতাংশ জমির পাকা ধান লুট করে নিয়ে যায় দুলাল। এসব ঘটনায় দিনমজুর বড় ছেলেমেয়ে ও জামাতারা প্রতিবাদ করতে গেলেই তাদের ওপর নেমে আসে অত্যাচার। তারা দেলোয়ারসহ স্থানীয় কয়েক সন্ত্রাসীর অত্যাচার ও হত্যার হুমকির ভয়ে কারও কাছে বিচার চাইতে পারছে না। প্রতিদিন রাতে তাদের বসত ঘরের পাশে গিয়ে ঘরের চালে ঢিল ছুড়ছে ও অসভ্য ভাষায় গালাগাল দিয়ে হত্যার হুমকি দেওয়া হচ্ছে।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত দেলোয়ার হোসেন বলেন, এসব ঘটনা আমাদের নিজস্ব পারিবারিক ব্যাপার। আপনারা (সাংবাদিক) বেশি নাক গলাবেন না। পারলে রিপোর্ট লেখেন, কে কি করতে পারে দেখব।
উপজেলা সহকারী কমিশনার ভূমি মোহ্তাসিম বিল্লাহ্ বলেন, অসহায় হাজি মিয়া চাঁন্দের প্রতি নিজ ছেলের অত্যাচার ও জমিদখলের চেষ্টা মামলার বিষয়ে গুরুত্বসহকারে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। যুগান্তর