195141

চমক দেশীয় হাইব্রিডে, প্রতি বিঘায় ৩২ মণ!

বাংলাদেশে বোরো মৌসুমে হাইব্রিড ধান চাষের যথেষ্ট সম্ভাবনা রয়েছে। সঠিক সময়ে বীজ বপন, চারা রোপণ এবং উন্নত পরিচর্যার মাধ্যমে এই মৌসুমে হাইব্রিড ধান চাষ করে দেশের খাদ্য উৎপাদন বাড়ানো সম্ভব।

তবে মাত্র ১১ শতাংশ জমিতে হাইব্রিড ধানের চাষ হয়। বোরো মৌসুমে ১০ লাখ হেক্টর জমিতে হাইব্রিড ধানের চাষ হয়। মোটা-আঠালো ভাত ও বীজের দাম বেশি হওয়াই দেশে হাইব্রিড ধান জনপ্রিয়তা পায়নি।

এরই পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট গত ২০১৬ সালে বোরো মৌসুমের জন্য স্বল্প মেয়াদি ও অধিক ফলনশীল একটি হাইব্রিড ধানের জাত উদ্ভাবন করেছে। এটা হাইব্রিড ধান-৫ নামে পরিচিত। জাতীয় বীজবোর্ড ২০১৬ সালের ৯ সেপ্টেম্বর ৯০তম সভায় সারা বাংলাদেশে চাষাবাদের জন্য চূড়ান্ত অনুমোদন দেয়।

এরপর থেকে বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট গাজীপুরে নানা গবেষণা পরিচালনা করে। পাইলট প্রকল্প হিসেবে হাইব্রিড রাইস বিভাগ সাতক্ষীরা, হবিগঞ্জ, বরিশাল, গোবিন্দগঞ্জ, গাজীপুর, ময়মনসিংহ, রংপুর এবং ফরিদপুরে সফলতা অর্জন করেছে। বোরো ধানের মতো খরচ করে প্রতি বিঘায় (৩৩ শতাংশ) ৩২ মণ ধান উৎপাদিত হয়েছে।

২০১৯ সালের বৌরো মৌসুম থেকে সারাদেশে এই ধান কৃষক পর্যায়ে পৌঁছে দেয়ার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। বোরো মৌসুমে হাইব্রিড ধান। ছবি: বাংলানিউজ

ফলে হাইব্রিড জাতের এই ধান প্রথম পর্যায়ে কৃষকের মাঠ ভরিয়ে দিতে আসছে। হাইব্রিড-০৫ সম্পূর্ণ দেশীয় প্রযুক্তিতে। হাইব্রিড ধানের বীজ মানেই বাংলাদেশের চীন-নির্ভরতা। তবে হাইব্রিড ০৫ বিস্তার লাভ করলে আর চীনের ‍ওপর নির্ভরতা থাকবে না। হাইব্রিড ধানের বীজের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ হবে স্বয়ংসম্পূর্ণ।

হাইব্রিড ধানের জাত উদ্ভাবনের জন্য চীন ও বাংলাদেশ যৌথভাবে কাজ করে আসছে। এর ফলে ২০০১ সালে হাইব্রিড- ০১, ২০০৮ সালে হাইব্রিড- ০২, ২০০৯ সালে হাইব্রিড- ০৩, ২০১০ সালে হাইব্রিড- ০৪ এবং ২০১৬ সালে হাইব্রিড- ০৫ অবমুক্তির বছর।

 

উদ্ভাবনের সফলতা দেখিয়েছে বাংলাদেশ। যা বাংলাদেশের মানুষের খাদ্যাভ্যাসের জন্য উপযুক্ত হবে।

২৩-২৪% অ্যামাইলোজযুক্ত হওয়ায় ভাত হবে ঝরঝরা। দেশে স্বল্প সময়ের জলবায়ু সহিষ্ণু হাইব্রিড ধানের জাত শুরু করা প্রয়োজন যার মাধ্যমে এদেশের কৃষক লাভবান হবে বলে জানায় হাইব্রিড রাইস বিভাগ।

হাইব্রিড রাইস বিভাগের প্রধান ড. মোহাম্মদ জামিল হাসান বাংলানিউজকে বলেন, ২০ থেকে ৩০ ডলার খরচা করে এক কেজি হাইব্রিড ধানবীজ চীন থেমে আমদানি করা হতো। এর পরে এই ক্রস ব্রিডিংয়ের মাধ্যমে কৃষকের কাছে এই ধানের বীজ সরবরাহ করা হতো। ফলে হাইব্রিড বীজ উৎপাদনে খরচ অধিক হতো। বীজ খরচা অধিক হওয়ায় কৃষকের মধ্যে হাইব্রিড ধানের চারা রোপনে অনীহাও লক্ষ্য করা গেছে।’

তিনি আরও বলেন, চীনের সহয়তায় আমরা এর আগে চারটি হাইব্রিড জাত উদ্ভাবন করেছি। তবে এবারই প্রথম দেশীয় হাইব্রিড জাতের উদ্ভাবন করা হয়েছে। এই জাতের ধানের ভাত ঝরঝরা। উচ্ছ ফলনশীল। এটা কৃষক পর্যায়ে আগামী বছর থেকে ছড়িয়ে দেবো। এর ফলে কৃষক পর্যায়ে হাইব্রিড জাতের বীজ পৌঁছে দিতে আর বাইরের দেশে ধরনা দিতে হবে না। বাঁচবে দেশীয় অর্থ। আমাদের দেশীয় বিজ্ঞানিরা দারুন সফলতা দেখিয়েছেন এই জাতের ধানের বীজ উৎপাদনে।’

হাইব্রিড রাইস বিভাগ সূত্র জানায়, হাইব্রিড ধান -০৫ এর উচ্চতা হবে ১১০ সে.মি। প্রতিটা শীষে ধান থাকবে ১৮০টি। কান্ড শক্ত বিধায় ঢলে পড়ার সম্ভাবনা নেই। ধানের জীবনকাল ১৪৩ থেকে ১৪৫দিন। অক্টোবর থেকে জানুয়ারি মাস বীজ বপনের সময়। তবে ১৫ নভেম্বর থেকে ১৫ই ডিসেম্বর উৎকৃষ্ঠ সময়।

প্রতি বিঘা জমিতে দুই কেজি ধান লাগবে। চাষিরা নিজ উদ্যোগে এই ধানের চারা উৎপাদন করতে পারবেন। এই জাতের বীজ উৎপাদনে কৃষকদের সকল ধরণের প্রযুক্তিগত সুবিধা বিনামূল্যে সরবরাহ করবে হাইব্রিড রাইস বিভাগ।

বীজের অংকুরোদগম

হাইব্রিড ধানবীজ কিছুটা ফাঁকা থাকে। এজন্য কোনো শংকিত হওয়ার প্রয়োজন নেই। বীজ প্রথমে হালকা রোদে দেড় ঘণ্টা শুকিয়ে পরে ঠাণ্ডা করে কাপড় অথবা চটে ভরে ৮ থেকে ১০ ঘণ্টা পানিতে চুবিয়ে রাখতে হবে। পানি ঝরিয়ে আমাদের দেশীয় ধানের মতো জগ দিয়ে বীজ অংকুরিত করতে হবে। ২৪ থেকে ৩৬ ঘণ্টার মধ্যে বীজের অংকুরোদগম শুরু হওয়ার কথা।

বীজতলার পরিচর্যা

বীজতলার মাটির উর্বরতার জন্য করে সাড়ে চার মণ পচা গোবর, ৫০০ গ্রাম ইউরিয়া, ৮০০ গ্রাম টিএসপি এবং ৫০০ গ্রাম এমপি সার দিতে হবে। কুয়াশা ও অতিরিক্ত শীতে বীজতলা পলিথিন দিয়ে ঢেকে রাখা ভালো।

জমি তৈরি ও চারা রোপন

৩ থেকে ৪টি চাষ ও মই দিয়ে মাটি যথেষ্ট সমতল করে নিতে হবে। শেষ চাষে স্বল্প পরিমাণে সার দিতে হবে। বীজতলার চারার বয়স ৩০ থেকে ৩৫ দিন হলে বীজতলা থেকে চারা তুলে জমিতে রোপন করতে হবে। ৬ ইঞ্চি দূরে দূরে প্রতি গোছায় একটি চারা রোপন করতে হবে।

সেচ ব্যবস্থাপনা ও ফসল ঘরে তোলা

চারা রোপনের পর জমিতে সেচের ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। তবে চারা রোপনের তিন সপ্তাহ পর ৫ থেকে ৬ দিন সেচ বন্ধ রেখে জমি কিছুটা শুকানো ভালো। এর পরে ইউরিয়া সার ও সেচ দিতে হবে। জমিতে ধান পুষ্ট না হওয়া পর্যন্ত সেচ চালিয়ে যেতে হবে। ফুল আসার ৩০ থেকে ৩৫ দিন পর ধান হাল্কা হলুদ হয়। এর পরে শীষের অগ্রভাগের শতকরা ৮০ ভাগ চাল শক্ত হলেই ফসল কাটতে হবে।  বাংলানিউজ

পাঠকের মতামত

Comments are closed.