195129

স্বাস্থ্য সুরক্ষা ও পরিচ্ছন্নতায় রাসূল (সা.) এর দশটি হাদীস

ডেস্ক রিপোর্ট : পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতা ও স্বাস্থ্য সুরক্ষা ইসলামী বিধিবিধানের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। পবিত্রতা অর্জন এবং আধ্যাত্মিক উন্নতির নামে যে যুগে বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠী ও ধর্মবিশ্বাসের পাদ্রি-পুরোহিতরা নিজের স্বাস্থ্যের যত্ন নেওয়ার প্রতি অবজ্ঞা প্রদর্শন এবং অপরিচ্ছন্ন থাকাকে অপরিহার্য অংশ বলে মনে করতো, ইসলাম সেই যুগেই নামাজ আদায়ের মত মৌলিক ইবাদত পালনের জন্য ওযু করাকে ফরয করেছে। পাশাপাশি বিভিন্ন পরিস্থিতিতে বাধ্যতামূলকভাবে গোসল করে নেওয়ার বিধানও ইসলামে প্রদান করা হয়েছে।

এছাড়াও দাঁত পরিস্কার রাখার উপর রাসূল (সা.) এর হাদীস থেকে আমরা জানতে পারি, ইসলাম ব্যক্তিগত স্বাস্থ্য সুরক্ষায় কতটা গুরুত্ব প্রদান করে।

ইসলাম মানুষের ইহকালীন ও পরকালীন উভয় জগতের কল্যাণের প্রতিই মনোযোগী। ইসলামের দৃষ্টিতে একজন স্বাস্থ্যবান মুমিন অপর একজন অসুস্থ মুমিন থেকে অধিক উত্তম। কেননা শারীরিকভাবে সুস্থ মুমিন ব্যক্তি ইসলামের যাবতীয় বাধ্যবাধকতা পালন এবং মানবতাকে সাহায্য করতে অসুস্থ মুমিন ব্যক্তির তুলনায় অধিক সক্ষম।

স্বাস্থ্য সুরক্ষা ও পরিচ্ছন্নতার উপর রাসূল (সা.) এর কতগুলো হাদীস নিম্নে বর্ণনা করা হল,

ঈমানের অঙ্গ

১. হযরত আবু মালিক আল-আশয়ারী (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূল (সা.) বলেছেন, “পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতা ঈমানের অর্ধেক।” (মুসলিম)

দাঁত মাজার গুরুত্ব

২. হযরত আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূল (সা.) বলেছেন, “মিসওয়াক মুখকে পরিস্কার ও পবিত্র করে এবং এর মাধ্যমে বান্দার প্রতি তার প্রভু সন্তুষ্ট হন।” (নাসায়ী)

৩. হযরত আবু হুরাইরা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূল (সা.) বলেছেন, “আমার অনুসারীদের যদি কষ্ট না হতো, তবে আমি তাদের প্রতি ওয়াক্ত নামাজের পূর্বে মিসওয়াক করার জন্য আদেশ করতাম।” (বুখারী ও মুসলিম)

ব্যক্তিগত পরিচ্ছন্নতা মানুষের স্বাভাবিকতা

৪. হযরত আবু হুরাইরা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূল (সা.) বলেছেন, “পাঁচটি কাজের অনুশীলন মানুষের স্বাভাবিকতা; খৎনা করা, বাহুর সন্ধিস্থল ও নাভীর নিচের লোম পরিস্কার করা, নখ কাটা এবং গোঁফ ছোট করা।” (বুখারী ও মুসলিম)

পরিচ্ছন্নতার আচার

৫. হযরত আবু যর আল-গিফারী (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূল (সা.) বলেছেন,

“জুমার দিনে যে ব্যক্তি যথাযথভাবে গোসল করে নিজেকে পবিত্র করে তৈরি হয় এবং তার সামর্থ্য অনুযায়ী উত্তম পোশাক ও সুগন্ধি দ্বারা সজ্জ্বিত হয়ে মসজিদে নামাজ আদায়ের জন্য যায় এবং মসজিদে কোন প্রকার অসাড় কথায় লিপ্ত হয়না বা মসজিদে থাকা লোকদের ডিঙ্গিয়ে না গিয়ে নিজের জন্য জায়গা করে নেয়, তার পূর্ববর্তী জুমা থেকে সেইদিন পর্যন্ত সকল গুনাহ ক্ষমা করা হয়।” (ইবনে মাজাহ)

পরিবেশকে দূষণমুক্ত রাখা

৬. হযরত মুয়ায (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূল (সা.) বলেছেন,

“তিনটি কাজ থেকে তোমরা সতর্ক হও কেননা তা তোমাদের অভিশপ্ত করবে; মানুষের বিশ্রামের প্রয়োজনে ছায়াচ্ছাদিত স্থান, লোকদের চলাচলের রাস্তা এবং লোকদের ব্যবহারের প্রয়োজনীয় পানি সরবরাহকারী জলাশয়ে মূত্র বিসর্জন।” (আল-আলবানী)

৭. হযরত আবু যর আল-গিফারী (রা.) বলেছেন, রাসূল (সা.) বলেন,

“চলাচলের রাস্তা থেকে মানুষের জন্য ক্ষতিকর বস্তু সরিয়ে নেওয়াও সাদকার অংশ।” (আল-আলবানী)

চিকিৎসা গ্রহণে উৎসাহ

৮. হযরত উসামা ইবনে শারিক (রা.) হতে বর্ণিত, ‘আমি একবার রাসূল (সা.) এর কাছে গমন করে তার দরবারে বসেছিলাম। এমন সময় কিছু বেদুইন আরব এসে রাসূল (সা.) কে জিজ্ঞেস করলো, “হে আল্লাহর রাসূল, আমরা কি রোগের চিকিৎসা গ্রহণ করতে পারবো? রাসূল (সা.) উত্তর দেন, “হ্যা, রোগের চিকিৎসা গ্রহণ কর। আল্লাহ সকল রোগেরই প্রতিষেধক তৈরি করে রেখেছেন শুধু বার্ধক্য ছাড়া।” (আবু দাউদ ও আল-আলবানী)

শক্তি ও স্বাস্থ্যের গুরুত্ব

৯. হযরত আবু হুরাইরা (রা.) হতে বর্ণিত, রাসূল (সা.) বলেছেন,

“একজন শক্তিশালী মুমিন ব্যক্তি একজন দুর্বল মুমিন ব্যক্তি হতে উত্তম ও আল্লাহর কাছে প্রিয় যদিও উভয়েই উত্তম। গভীরভাবে অনুসন্ধান কর কিসে তোমার কল্যাণ, একমাত্র আল্লাহর কাছেই সাহায্য প্রার্থনা কর এবং কখনোই হতাশ হয়োনা। যদি তোমার উপর কোন অকল্যাণ আসে, তবে কখনোই বলোনা, ‘যদি এরূপ না হত।’ এর পরিবর্তে বল, ‘এটি আল্লাহর পরিকল্পনা এবং তার ইচ্ছা অনুযায়ীই ঘটেছে।’ ‘যদি’র প্রসঙ্গ সবসময় শয়তানের ওয়াসওয়াসার জন্য রাস্তা করে দেয়।” (বুখারী)

অতিরিক্ত পানাহার পরিহার

১০. আল-মিকদাম (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূল (সা.) বলেছেন, “মানুষ তার পেটের চেয়ে নিকৃষ্ট আর কিছু্ই পরিপূর্ণ করেনা। মেরুদন্ডকে সোজা রাখার জন্য মানুষের অল্প কয়েক লোকমা খাবারই যথেষ্ট। এর অধিক প্রয়োজন হলে মানুষ তার পেটের একতৃতীয়াংশ খাবার, এক তৃতীয়াংশ পানি এবং এক তৃতীয়াংশ তার শ্বাস প্রশ্বাসের প্রয়োজন পূরণের জন্য রাখতে রাখতে পারে।” (আহমদ, তিরমিযী)

মুহাম্মদ ফাতহি

পাঠকের মতামত

Comments are closed.