১১ বছর পর বাবার পরিচয় পেল ধর্ষণে জন্ম শিশু
বিয়ের প্রলোভনে কিশোরী বয়সে ধর্ষণের শিকার হন সুলতানা খাতুন (২৬)। এরপর অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়েন। স্ত্রী ও সন্তানের স্বীকৃতির দাবিতে শেষ পর্যন্ত আইনের দ্বারস্ত হন। দীর্ঘ ১১ বছর পর অবশেষে সন্তানের পিতৃস্বীকৃতি ও সেইসঙ্গে ধর্ষকের যাবজ্জীবন কারাদণ্ডাদেশ দিয়েছেন রংপুর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-১ এর বিচারক যাবিদ হোসেন।
সোমবার বেলা ১২টায় অভিযুক্ত আসাদুল ইসলামের (৪০) উপস্থিতিতে বিচারক এ রায় ঘোষণা করেন।
মামলা ও আদালত সূত্রে জানা যায়, রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলার শাল্টিগোপালপুর ইউনিয়নের বান্দারপাড়া গ্রামের রিকশাচালক সুলতান হোসেনের মেয়ে সুলতানা খাতুন ঘটনার দুই বছর আগে থেকে দূর্গামতি গ্রামের আলেফ উদ্দিনের বাড়িতে মাঝেমধ্যে গৃহস্থালীর কাজ করতেন। এর সুবাদে আলেফ উদ্দিনের ছেলে আসাদুল ইসলাম বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে একাধিকবার ধর্ষণ করে সুলতানাকে। একপর্যায়ে সুলতানা অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়লে তার পরিবার থেকে বিয়ের জন্য চাপ প্রয়োগ করা হয়।
কিন্তু আসাদুলের পরিবার এতে রাজি না হলে আসাদুল ও তার বাবা আলেফ উদ্দিনকে আসামি করে ২০০৭ সালের ৩ জুন মিঠাপুকুর থানায় ধর্ষণ মামলা করেন সুলতানা। পরবর্তীতে মামলার তদন্তে আলেফ উদ্দিনের সম্পৃক্ততা না পাওয়ায় তাকে বাদ দিয়ে আসাদুলের নামে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন তদন্ত কর্মকর্তা।
এদিকে মামলা দায়েরের পর দুই বছর কারাগারে বন্দি থেকে জামিনে বেরিয়ে দিনাজপুরের স্বপ্নপুরী এলাকায় বিয়ে করেন আসাদুল। বর্তমানে এক ছেলে ও এক মেয়ে সন্তান রয়েছে তার।
দীর্ঘ ১১ বছর মামলাটি আদালতে বিচারাধীন থাকার পর সোমবার এই মামলার রায়ে অভিযুক্ত আসাদুলের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ও দুইলাখ টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরও এক বছর কারাদণ্ড এবং ছেলে সিয়াম বাবুর পিতৃস্বীকৃতির রায় দেন বিচারক। সেইসঙ্গে সিয়াম বাবু প্রাপ্ত বয়স্ক না হওয়া পর্যন্ত রাষ্ট্র তার যাবতীয় ব্যয় বহন করবেন বলেও জানান বিচারক। সিয়াম পার্শ্ববর্তী বালুয়া ইউনিয়নের একটি হাফেজিয়া মাদরাসায় পড়াশোনা করছে।
বাদী পক্ষে মামলা পরিচালনা করেন নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-১ এর পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) রফিক হাসনাঈন। এবং আসামি পক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট ইমদাদুল হক।
এ মামলায় বাদীপক্ষকে সহায়তা করেন বেসরকারী উন্নয়ন সংস্থা আরডিআরএস বাংলাদেশে’র ‘নারী অধিকার ইউনিট।’
রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করে আরডিআরএস এর সিনিয়র নারী অধিকার কর্মকর্তা শামসেয়ারা বিলকিছ বলেন, এই মামলায় বাদী পক্ষকে সহায়তা করতে গিয়ে তাকেসহ তার মেয়েকে অপহরণ করার ও নানাভাবে হুমকি প্রদান করা হয়েছিল। ১১ বছর পর ধর্ষকের যাবজ্জীবন ও সন্তানের পিতৃস্বীকৃতি পাওয়ায় তিনি আদালতের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) রফিক হাসনাঈন বলেন, এ রায়ের মধ্যে তার মক্কেল ন্যায়বিচার পেয়েছেন।
অপরদিকে আসামি পক্ষের আইনজীবী ইমদাদুল হক এ মামলার রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আপিল করার কথা জানান।
উৎসঃ jagonews24