194002

স্টিফেন হকিং মজার মানুষ : আনিসুল হক

জগৎ বিখ্যাত পদার্থবিদ ও বিশিষ্ট বিজ্ঞানী স্টিফেন হকিং চলে গেলেন। রেখে গেলেন বিশ্বের লক্ষ-কোটি মানুষের ভালবাসা। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৭৬ বছর। এদিকে তার মৃত্যুতে শোকের ছায়া নেমে এসেছে গোটা বিশ্বে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেখা যাচ্ছে শোক বার্তা দিচ্ছেন সবাই। এবার স্টিফেন হকিংয়ের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করলে প্রখ্যাত বাংলাদেশী লেখক আনিসুল হক।

তিনি নিজের ভেরিফাইড ফেসবুক পেইজে লিখেছেন, ‘ডাক্তার যখন আপনাকে বলে দেয়, আপনি আর বেশি দিন বাঁচবেন না, তখন কেমন লাগে! স্টিফেন হকিংয়ের কাছ থেকে সেই রকম অনুভূতি আমরা জানতে পারি। স্টিফেন হকিং পৃথিবীর সেরা মহাকাশবিজ্ঞানীদের একজন, যাঁর লেখা এ ব্রিফ হিস্ট্রি অব টাইম সর্বকালের সবচেয়ে বেশি বিক্রি হওয়া বইয়ের একটা।’

আনিসুল হক‘তিনি ব্ল্যাক হোলস অ্যান্ড বেবি ইউনিভার্স অ্যান্ড আদার স্টোরিজ বইয়ে তাঁর অসুস্থতার গল্প, শৈশবের গল্প আর ব্রিফ হিস্ট্রি অব টাইম লেখার গল্প আমাদের শুনিয়েছেন। ১৯৪২ সালে জন্মগ্রহণ করেছেন স্টিফেন হকিং। তিনি যখন ছাত্র, অক্সফোর্ডে পড়েন, তখন তিনি বুঝতে পারেন, তাঁর একটা রোগ আছে, তিনি ঝাপসা দেখেন কখনো কখনো।’

‘তাঁর ২১ বছর বয়সে, ১৯৬৩ সালে, তিনি হাসপাতালে যান টেস্ট করাতে। তখন জানা গেল, তাঁর মটর নিউরন ডিজিজ হয়েছে। এটা আর সারবে না। তিনি ধীরে ধীরে অচল হয়ে যাবেন এবং তিনি মারা যাবেন। সেটা কত তাড়াতাড়ি তা তিনি জানতেন না। হয়তো ছয় মাস, হয়তো কয়েক বছর। তখন তাঁর পাশের বিছানায় লিউকোমিয়া রোগে আক্রান্ত এক বালককে তিনি দেখেন। সেও মারা যাবে। স্টিফেন হকিং ভাবলেন, আমার অবস্থা ওর চেয়ে ভালো। আমি কবে মারা যাব, তা জানি না। আর এখন তো আমি রোগটাকে অনুভব করতে পারছি না।’

‘তিনি হাসপাতাল থেকে ফিরলেন। তাঁর মনে হলো, তিনি মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত এক আসামি। কিন্তু বিস্ময়কর হলো, তিনি জীবনকে আগের চেয়ে বেশি করে উপভোগ করতে শুরু করলেন এবং কাজ করাটাকে বেশি গুরুত্ব দিতে শুরু করলেন। তিনি বিয়ে করলেন। কাজ করে চললেন। তাঁর চলাচল সীমিত হয়ে আসতে লাগল। হুইলচেয়ার ছাড়া তিনি চলতে পারেন না। এভাবে চলল প্রায় এক যুগ। ১৯৮৫ সালে, তাঁর ৪৩ বছর বয়সে তিনি নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হলেন।’

‘এরপর তাঁর একটা অপারেশন হলো। এরপরে বন্ধ হয়ে গেল তাঁর কথাও। তখন তিনি মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করতেন চোখের পাতা ফেলে। কেউ একজন তাঁর সামনে একটা অক্ষর ধরত, আর তিনি চোখের পাতা ফেলে সেটাকে অনুমোদন করতেন। তারপর তাঁর জন্য একটা কম্পিউটার সফটওয়্যার এল, যেটা দিয়ে চোখের পাতা ফেলে লিখতে পারতেন। এখনো তিনি কথা বলতে পারেন না, কম্পিউটারের মাধ্যমে তাঁর চিন্তাগুলো লেখা হয়। এভাবে তিনি বই লেখেন। ব্রিফ হিস্ট্রি অব টাইমও লিখেছেন প্রতিবন্ধিতা সত্ত্বেও।’

‘পাতার পর পাতা সংশোধন করেছেন। এখন তিনি এভাবে বিভিন্ন সভা-সেমিনারে বক্তৃতাও দিচ্ছেন। ১৯৭০-এর দশকের শুরুর দিকেই যাঁর জীবনাবসান হওয়ার কথা, তিনি এই ২০১৬ সালেও আছেন, বিপুলভাবে। তিনি চলতে পারেন না, নড়তে পারেন না, চোখের পাতা ছাড়া কিছুই নড়াতে পারেন না, কথা বলতে পারেন না, কিন্তু তিনি লিখছেন, গবেষণা করছেন, লেকচার দিচ্ছেন। ভাবা যায়!’

‘স্টিফেন হকিং মজার মানুষ। কিছুদিন আগে ইংল্যান্ডে তাঁকে বাচ্চারা জিজ্ঞেস করেছিল, জায়ান মালিক (জনপ্রিয় ব্যান্ড তারকা) ওয়ান ডিরেকশন (গানের দল) ছেড়ে দিয়েছেন, অন্য কোনো জগতে কি জায়ান মালিক সেই ব্যান্ডে ফিরতে পারেন না? স্টিফেন হকিং বলেছেন, ‘আরেকটা গ্যালাক্সিতে হয়তো আরেকটা ওয়ান ডিরেকশন আছে, জায়ান মালিক সেখানে তার ব্যান্ড ছেড়ে দেয়নি।’

‘অন্য গ্রহ থেকে এলিয়েনরা এসে পৃথিবী ধ্বংস করবে কি না। স্টিফেন হকিং জবাব দেন, তার চেয়েও বড় শঙ্কা হলো পৃথিবীতে যে পরিমাণে আণবিক বোমা আছে, তা পৃথিবীর ধ্বংস হয়ে যাওয়ার জন্য যথেষ্ট। তিনি বলেন, ভুল করে কোনো দুর্বল দেশের পারমাণবিক বোমার সুইচে কোনো পাগল বা সন্ত্রাসী ঢুকে পড়ে সুইচ টিপে দিলেই পৃথিবী শেষ। কারণ, সেটাকে প্রতিরোধ করতে সব দেশই তার তার সুইচ টিপে দেবে। হকিং বলেন, তাই আমাদের উচিত সব সরকারকে চাপ দেওয়া অস্ত্র কমানোর জন্য।’

‘তিনি বলেন, একটা অসুস্থ কৌতুক আছে, পৃথিবীতে এলিয়েন আসে না। কারণ, কোনো এলিয়েন প্রজাতি যখন খুব উন্নতি করে, তখন তারা নিজেরাই নিজেকে ধ্বংস করে। তিনি বলেন, আমি আশা করি, পৃথিবীর ক্ষেত্রে তা ঘটবে না। স্টিফেন হকিং ৭৬ বছর বয়সে মারা গেলেন মৃত্যুর নোটিশ পাবার ৪৫/৪৭ বছর পর।

পাঠকের মতামত

Comments are closed.