188863

পাকিস্তান সন্ত্রাস না দমন করতে পারলে আমরাই করব : আমেরিকা

পাকিস্তান যদি নিজেদের মাটিতে সন্ত্রাস ও সন্ত্রাসবাদী দমন করতে না পারে তাহলে আমরাই দায়িত্ব নিয়ে সেটা করতে বাধ্য হব। কী করে তা করতে হয় সেটা আমেরিকা খুব ভাল করেই জানে। শুক্রবার এই ভাষায় পাকিস্তানকে চরম হুঁশিয়ারি দিল আমেরিকা।

মার্কিন বিদেশসচিব রেক্স টিলারসনের সদ্য সমাপ্ত ভারত সফরের এক দিন পরে এভাবেই নিজেদের কড়া প্রতিক্রিয়া জানালেন মার্কিন বিদেশ দপ্তরের মুখপাত্র হিদার নার্ত। সংবাদসংস্থা পিটিআই-এর এক প্রশ্নের উত্তরে নার্ত এদিন স্পষ্ট জানান, ট্রাম্প প্রশাসন এর আগে পাকিস্তানের কাছে বার বার অনুরোধ জানিয়েছে যাতে ইসলামাবাদ জঙ্গি সংগঠনগুলির বিরুদ্ধে বিশ্বাসযোগ্য এবং উপযুক্ত পদক্ষেপ করে। পদক্ষেপ হতে হবে কার্যকরী। কিন্তু এ ব্যাপারে বেশিদিন অপেক্ষা করতে পারবে না আমেরিকা। জঙ্গি দমনে পাকিস্তান যদি সন্তোষজনক ও কার্যকরী ব্যবস্থা নিতে ব্যর্থ হয় তাহলে আমেরিকা নিজের মতো করে ব্যবস্থা নিতে বাধ্য হবে। সেক্ষেত্রে ‘অন্য পথ’ অবলম্বন করে ‘চূড়ান্ত বা নির্ণায়ক ব্যবস্থা’ নেবে ওয়াশিংটন। তাই ওরা না পারলে বলুক, কী করে সন্ত্রাস দমন করতে হয় আমরা তা ভালই জানি।’

নার্ত-এর আরও দাবি, সদ্য আফগানিস্তান, পাকিস্তান এবং ভারত সফর সেরে দেশে ফিরেছেন মার্কিন বিদেশসচিব রেক্স টিলারসন। সেই সফরেই পাকিস্তানকে এই কঠোরতম বার্তাটা শুনিয়ে দিয়ে এসেছেন তিনি। নার্ত-এর মতে, পাকিস্তান কী করছে তার উপর কঠোর নজর রাখছে ট্রাম্প প্রশাসন। পাকিস্তানের নিজের ভৌগোলিক সীমানার মধ্যে যে জঙ্গি গোষ্ঠীগুলি সক্রিয়, সেগুলির বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা না নিলে নিরুপায় হয়ে নির্ণায়ক পদক্ষেপ করতে বাধ্য হবে আমেরিকা। ‘বিশ্বাসঘাতক’ পাকিস্তানের উপর এই মুহূর্তে চটে রয়েছে আমেরিকা। আমেরিকা-ভারত সামরিক বোঝাপড়া যতটা শক্তিশালী, ততটাই শক্তিশালী আফগানিস্তানে ভারতের উপস্থিতি। আমেরিকার মদতেই আফগানিস্তানে ভারতের পায়ের তলায় জমি এখন আরও শক্ত। ফলে ভারত চারদিক থেকে ঘাড়ের উপর নিঃশ্বাস ফেলায় সামরিক ও কূটনৈতিক দিক থেকে সঙ্কটে পড়েছে পাকিস্তান। এদিকে, আফগানিস্তানের মতোই পাকিস্তানেও আমেরিকার আগ্রাসন বা সামরিক অভিযানের সম্ভাবনা দিন দিন বাড়ছে।

এই অবস্থায় আতঙ্কিত পাক নেতৃত্ব। ড্যামেজ কন্ট্রোল করতে টিলারসনের সঙ্গে মরিয়া হয়ে কথা বলার সুযোগ চায় পাক নেতৃত্ব। সেই সুযোগ দেয় ওয়াশিংটনও। উপমহাদেশ সফর সেরে আমেরিকা ফেরার পথে টিলারসন শেষ বার থেমেছিলেন সুইজারল্যান্ডের জেনিভায়। সেখানে টিলারসন জানান, পাকিস্তান সফরে গিয়ে পাক প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তাঁর বৈঠক হয়েছে। বৈঠক হয়েছে পাক সেনাপ্রধান জেনারেল কামার জাভেদ বাজওয়ার সঙ্গেও। খুব খোলাখুলি এবং আন্তরিক পরিবেশেই পাক নেতৃত্বের সঙ্গে তাঁর কথা হয়েছে বলে টিলারসন জানান। টিলারসন জানান, আমেরিকা পাকিস্তানের কাছ থেকে ঠিক কী চায়, সে কথা স্পষ্ট করে জানিয়ে দিয়ে আসতে তিনি একেবারেই দ্বিধা করেননি। কিছুদিনের মধ্যে সেটা না হলে আমেরিকা ‘অন্য পথ’ নেবে। বিবিসি ও রয়টার্স সংবাদসংস্থা জানিয়েছে, টিলারসন পাক নেতৃত্বকে বলেছেন, “আমরা মনে করি সন্ত্রাসবাদীদের নিশ্চিহ্ন করতে এই পদক্ষেপগুলি করা জরুরি। যদি আপনারা সেগুলো করতে না চান, তা হলে ভাববেন না যে তেমনটা সম্ভব হবে। অন্য উপায়ে লক্ষ্যে পৌঁছনোর জন্য নিজেদের কৌশল এবং নীতি আমরা বদলে ফেলব।’’

টিলারসন জানান, পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বা অন্য কর্তাব্যক্তিদের সঙ্গে বৈঠক চলাকালীন ৮০ শতাংশ সময়ই তিনি ব্যয় করেছেন পাকিস্তানের কথা শোনার জন্য। ২০ শতাংশ সময় তিনি কাজে লাগিয়েছেন আমেরিকার বক্তব্য পাকিস্তানকে জানানোর জন্য। কিন্তু সেই অল্প সময়েই পাকিস্তানকে বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে, পাক ভূখণ্ডে সন্ত্রাসের বাড়বাড়ন্ত সহ্য করবে না আমেরিকা। আফগানিস্তানে এবং ভারতে রক্তক্ষয় হয়ে চলেছে। এই সমস্যার উৎস পাকিস্তান। সমস্যাটি ইসালামাবাদ সমাধান করতে না পারলে ওয়াশিংটন তখন ব্যবস্থা নিতে বাধ্য হবে। ভারতীয় বিদেশমন্ত্রক অবশ্য হিদার নার্ত-এর প্রতিক্রিয়া ও টিলারসনের সঙ্গে পাক নেতৃত্বের বৈঠক নিয়ে কোনও মন্তব্য করেনি।

ভারতকে সশস্ত্র ড্রোন বিক্রির নিয়েও আমেরিকার কাছে তীব্র আপত্তি জানিয়েছে পাকিস্তান। পাক বিদেশমন্ত্রকের মুখপাত্র নাফিস জাকারিয়া শুক্রবার বলেন, আমেরিকা ড্রোন বিক্রি করলে দক্ষিণ এশিয়ায় অস্ত্র প্রতিযোগিতা এবং যুদ্ধের সম্ভাবনা বেড়ে যাবে। সশস্ত্র ড্রোন পেলে ভারত আরও আগ্রাসী হয়ে উঠবে। ফলে প্রতিবেশী দেশগুলির নিরাপত্তা বিঘ্নিত হবে। সামরিক ‘মিসঅ্যাডভেঞ্চার’ শুরু করবে নয়াদিল্লি। তাছাড়া ভারতকে সশস্ত্র ড্রোন বিক্রি করতে হলে এমটিসিআর (মিসাইল টেকনোলজি কন্ট্রোল রেজিম) নামে যে আন্তর্জাতিক সংস্থা আছে তাদের কাছ থেকে অনুমোদন নিতে হবে আমেরিকাকে।

পাঠকের মতামত

Comments are closed.