182103

যেভাবে বদলে গেল খাবার সংরক্ষণের ধারণা

মোহতামীম নাঈম : সৈনিকরা যখন যুদ্ধে যায় তখন সাথে তাদের অনেক কিছু বহন করতে হয়। অস্ত্রের পাশাপাশি পর্যাপ্ত পরিমাণে খাবার থাকে তাদের সাথে। কিন্তু খাবার নষ্ট হওয়ার শঙ্কাও থেকে যায়। তাই তারা সহজে বহনযোগ্য অধিক ক্যালোরি সমৃদ্ধ খাবার সাথে রাখেন যা অনেক দিন পর্যন্ত ভালো থাকে। বর্তমানে খাবার সংরক্ষণে যে সকল পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়, তার বেশিরভাগই মূলত সামরিক রসদ সংরক্ষনের ধারণা থেকে এসেছে।

সামরিক বাহিনী নিয়ে কাজ করা ‘কম্বেট রেডি কিচেন’ বইয়ের লেখক আনাস্তাসিয়া মার্ক্স ডি সালসেদো বলেন, “সৈনিকদের খাদ্য তালিকায় সবার উপরে থাকে রুটি জাতীয় খাবার। তবে রুটি সেকার পর এমাইলোজের আক্রমণে ধীরে ধীরে তা নষ্ট হতে শুরু করে। এমাইলোজের আক্রমণকে প্রতিরোধ করতে পারে এমাইলেজ নামক এক ধরণের এনজাইম যা খাবারকে দীর্ঘ দিন ভালো রাখতে পারে। বিংশ শতাব্দীতে এসে কানসাসা স্টেট কলেজের বিজ্ঞানীরা সামরিক বাহিনীর সাথে যৌথ গবেষণায় লক্ষ্য করলেন, রুটি সেকার সময় তাতে এমাইলেজ নামক এনজাইম যুক্ত করলে সমীকরণ পাল্টে যায়। এই এনজাইমগুলো তাপ সহ্যকারী ব্যাকটেরিয়া থেকে আসে এবং রুটি সেকার পর তা অনেকদিন নরম ও খাবার উপযোগি করে রাখতে সাহয্য করে। এ রকম রুটি এখন সুপার মার্কেটেও পাওয়া যাচ্ছে। বাজারের অধিকাংশ রুটিতেই এখন এই পদ্ধতি ব্যবহার করা হচ্ছে। খাবারে ব্যবহৃত প্যাকেটজাত শুষ্ক ইস্টের ব্যবহারও এই মিলিটারি গবেষণা থেকেই এসেছে”।

মিলিটারি রসদের আরও একটি যুগান্তকারি আবিষ্কার হচ্ছে ওয়াটার এক্টিভিটি। ওয়াটার এক্টিভিটি পদ্ধতিতে খাবারে নির্দিষ্ট পরিমাণ লবন ও চিনি মেশালে, তা আর্দ্র খাবারে উপস্থিত পানির অণুগুলো ধরে রাখে। ফলে তা শুষ্ক খাবারের মতোই দীর্ঘ দিন ভাল থাকে। শুষ্ক খাবারের চেয়ে আদ্র খাবারে খুব সহজেই ব্যাকটেরিয়া আক্রমণ করতে পারে। আমেরিকার সামরিক বাহিনী বেশি সময় ধরে খাবার ভালো রাখার জন্য এই ওয়াটার এক্টিভিটি ব্যবহার করে আসছেন বিংশ শতাব্দীর শুরু থেকে। এক প্যাকেট কুড়মুড়ে ক্রিস্প ক্র্যাকার্স এবং আর্দ্র চিজ এক সাথে দীর্ঘ দিন রেখে দিলেও সমান ওয়াটার এক্টিভিটির কারণে তা অক্ষত থাকে এবং আগের মতোই স্বাদ ধরে রাখে। এই পদ্ধতি সামরিক রসদ থেকে শুরু করে ভোক্তাপণ্যেও এখন ব্যবহার হয়ে আসছে।

সামরিক রসদ বেশি দিন ভালো রাখার জন্য আরেকটি উন্নত পদ্ধতি আবিষ্কৃত হয়েছে। এই পদ্ধতিতে খাবার তৈরিতে তাপের পরিবর্তে উচ্চচাপ প্রয়োগ করা হয়। উচ্চচাপ প্রয়োগের ফলে ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস হয়, ফলে খাবার ভালো থাকে। এই পদ্ধতি বর্তমানে প্রিজারভেটিভ মুক্ত মাংস, প্যাকেটজাত বিভিন্ন পণ্য এবং কোল্ড পাস্তুরাইজেশন হিসেবে পরিচিত বোতলজাত জুসেও ব্যবহৃত হচ্ছে।

পাঠকের মতামত

Comments are closed.