182077

আবার ডানা মেলবে এনটোনোভ এন-২২৫!

মোহতামীম নাঈম : নব্বই দশকের আগ পর্যন্ত বিশ্ব রাজনীতিতে সোভিয়েত ইউনিয়নের বেশ আধিপত্য ছিল। আমেরিকার সাথে স্নায়ুযুদ্ধে নিজেদের শক্তিমত্তার প্রমাণ দিতে এসময় তারা বিভিন্ন উচ্চাভিলাসী পরিকল্পনা হাতে নেয়। মহাকাশ গবেষণায়ও এ সময় সোভিয়েত ইউনিয়ন অভাবনীয় সাফল্য অর্জন করে। আশির দশকে সোভিয়েত বোরান স্পেস শাটল পরিবহনের জন্য ইউক্রেনে নির্মিত হয় এনটোনোভ এন-২২৫ নামের এক দৈত্যাকার বিমান। ইউক্রেনে এটি ম্রিয়া নামে পরিচিত যার অর্থ স্বপ্ন।

ওই সময়ে সোভিয়েত ইউনিয়নের মহাকাশ গবেষণা পরিচালিত হতো দক্ষিণ কাজাখস্তান থেকে। এজন্য মস্কো থেকে বোস্টার রকেট আনার প্রয়োজন পড়ে। স্বল্প খরচে বোস্টার রকেট পরিবহনের জন্যই নির্মাণ করা হয় এন-২২৫। এটি ছিলো সোভিয়েত ইউনিয়নের সামরিক কাজে ব্যবহৃত এন-১২৪ এর বৃহৎ সংস্করণ। এনটোনোভ এন-২২৫ এতো বিশাল আকারের বিমান যে এর দৈর্ঘ্য রাইট ব্রাদারদের আবিষ্কৃত প্লেনের প্রথম উড্ডয়ন এবং অবতরণের মধ্যবর্তী দুরত্বের চেয়েও বেশি।

সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙ্গে যাবার পর দেশটি আর্থিক সংকটে পড়ে যার ফলে মহাকাশ গবেষণায়ও ভাটা পড়ে। বোরান স্পেস শাটল পরিবহনের জন্য নির্মিত হলেও, প্রয়োজন ফুরিয়ে আসায় এনটোনোভ এন-২২৫ কে পরবর্তীতে মালামাল পরিবহনের কাজে লাগানো হয়।

তবে শিগগিরই এন-২২৫ কে দেখা যাবে নতুন রূপে। ২০১৬ সালে চীনের এয়ারস্পেস ইন্ডাস্ট্রি কো-অপারেশন অব চায়না (এআইসিসি) নামের একটি প্রাইভেট প্রতিষ্ঠান এন্টোনোভ এর সাথে এন-২২৫ এর উন্নয়নে একটি সহযোগিতামূলক চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। পরিকল্পনা মতো সব কাজ হলে বিশ্ব শিগগিরই চীনের তৈরি এন-২২৫ আকাশে উড়তে দেখবে। এ নিয়ে প্রাথমিক কাজ ও গবেষণা শুরু হয়েছে ২০০৯ সাল থেকে। গত কয়েক বছর ধরেই চীনা এই কোম্পানিটি এন-২২৫ এর আধুনিকায়নে কাজ করে যাচ্ছে।

এন-২২৫ প্রজেক্টের প্রধান প্রকৌশলী নিকলে কালাশনিকোভ জানান, তার কর্মজীবনের পুরটা সময় ব্যায় করেছেন এটি নির্মাণে। এটি তার কাছে একটি স্বপ্নের প্রজেক্ট ছিল যা তাকে সাফল্যের চূড়ায় নিয়ে গিয়েছে । ৮০ এর দশকে এতো বড় একটি বিমান আকাশে উড়তে পারে তা মানুষের কল্পনাতীত ছিল বলেও জানান কালাশনিকোভ ।

এন্টোনোভ এর প্রধান মিখাইল খারচেনকো মনে করেন, পুরনো হলেও ম্রিয়ার এখনো যথেষ্ঠ সক্ষমতা রয়েছে। কেবল মালামাল পরিবহনে নয়, একে সংস্কার ও আধুনিকায়ন করলে মহাকাশ গবেষনায় আবারো কাজে লাগানো যাবে। সাধারাণত যে কোন মহাকাশযানের ভূমি থেকে প্রথম ১০ কিলোমিটার উড্ডয়নের জন্য জ্বালানীর ৯০% খরচ হয়ে থাকে। এক্ষেত্রে যদি প্রথম ১০ কিলোমিটার এন-২২৫ এর ভেতরে করে মহাকাশযান নেয়া হয় এবং সেখান থেকে উড্ডয়নের ব্যবস্থা করা হয় তাহলে খরচ অনেক কমে আসবে বলেও জানান তিনি।

পাঠকের মতামত

Comments are closed.