181869

জলবায়ু পরিবর্তনে ফিরে আসবে অতীতের রোগ-বালাই!

অনির্বাণ বড়ুয়া: ২০১৬ সালের আগস্ট মাসে সাইবেরিয়ার ইয়ামাল পেনিনসুলায় একজন মারা যায়। কয়েক দিনের মধ্যে আরও ২০ জনকে হাসপাতালে ভর্তি করতে হয়। ডাক্তারদের পরীক্ষা নিরীক্ষার পর দেখা যায় সবাই এনথ্রাক্সে আক্রান্ত। জীবানুর সূত্র খুঁজতে গিয়ে আবিষ্কার হয়, প্রায় ৭৫ বছর আগে এনথ্রাক্সে আক্রান্ত একটি বলগা হরিণ মারা যায়। তার মৃতদেহ পারমাফ্রস্ট (আদিকাল থেকে বরফ হয়ে আছে এমন স্থান) এর মধ্যে আটকে যায়। সম্প্রতি একটি হিটওয়েভ এই এলাকার ওপর দিয়ে বয়ে গেলে পারমাফ্রস্টটি গলে পানিতে মেশে যায়। সেই পানি থেকে দুই হাজারের মতো বলগা হরিণ এনথ্রাক্সে আক্রান্ত হয়। যাদের মাংস খেয়ে ছোটখাটো এই মহামারি ছড়িয়ে পড়ে।

এটি কেবলি একটি উদাহরণ। যদি এমন হয় যে বরফ গলে এমন কোনও ব্যাকটেরিয়া ছড়িয়ে পড়ে যার চিকিৎসা করার মতো কোনও এন্টিবায়োটিক আমাদের কাছে নেই? কারণ জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে হাজার হাজার বছরের পুরোনো ফারমাফ্রস্ট গলে যেতে পারে। যেখানে ধাবিত থাকতে পারে জাতিঘাতী সব মহামারি ব্যাকটেরিয়া ও ভাইরাস। বিষয়টি ভাবিয়ে তুলছে বৈজ্ঞানিকদের।

চলতি শতাব্দীতে চালানো বিভিন্ন গবেষণায় প্রমাণ মিলেছে যে মহামারি ছড়াতে পারে এমন ক্ষতিকারক ব্যাকটেরিয়া শায়িত আছে মেরু অঞ্চলের বরফের নিচে। বৈজ্ঞানিকদের কাছে প্রমাণ আছে যে মানুষের পূর্বপ্রজাতি নিয়েনডারথলের মৃত্যুর কারণ ছিলো যেসব ব্যাকটেরিয়া সেগুলো রাশিয়ার বরফের নিচে লুকায়িত আছে। প্রশ্ন আসতে পারে এতো বছরের পুরোনো ব্যাকটেরিয়া জৈব ডিগ্রেডেশনের শিকার হয়ে গেছে নিশ্চই। তবে নাসা সম্প্রতি প্রমাণ করেছে যে প্রায় এক লাখ বছরের পুরোনো ব্যাকটেরিয়াও জীবিত হতে পারে।

আপাতত অজানা কোনও অসুখ নিয়ে না ভাবলেও এনথ্রাক্স নিয়ে ভাবতেই হচ্ছে বিজ্ঞানিদের। কারণ গত শতাব্দীতে উত্তর রাশিয়াতে প্রায় ১০ লাখ বলগা হরিণ মারা যায় এই ব্যাকটেরিয়ায় সংক্রামিত হয়ে। আর ওই অঞ্চলে খুব দ্রুত বরফ গলছে।

সেই সঙ্গে খুব দ্রুতই ফিরে আসতে পারে ১৭-১৮ শতকের মহামারিগুলোও। কারও সাইবেরিয়ায় ওই সময়ে চিকেন পক্সের মহামারিতে প্রায় ৪০ শতাংশ জনসংখ্যা মারা যায়। তাদের যেখানে দাফন করা হয়েছিলো সেখানে বরফ গলে একটি নদীর সৃষ্টি হয়েছে ইতিমধ্যেই। আর বৈশ্বিক উষ্ণায়নের ফলে পানির পরিমাণও বাড়ছে নদীতে যা ক্ষতিকারক ব্যাকটেরিয়াগুলোকে সাগরের দিকে নিয়ে যেতে পারে।

পাঠকের মতামত

Comments are closed.