180817

আসছে মৃত্যু নিশ্চিত ব্যক্তি থেকে কিডনি সংগ্রহ-প্রতিস্থাপনের আইন

হাসপাতালে চিকিৎসাধীন, মৃত্যু নিশ্চিত (ব্রেন ডেথ) এমন ব্যক্তির কাছ থেকে সংগৃহিত কিডনি প্রতিস্থাপনের আইন আসছে।
জাতীয় কিডনি ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের ইউরোলজি বিভাগের সহযোগি অধ্যাপক ডা. ওয়ালিউল ইসলাম মারুফ এ প্রতিবেদককে বলেন, আইসিইউতে (নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র) লাইফ সাপোর্টে আছেন, এমন ব্যক্তি, লাইফ সাপোর্ট খুলে নিলেই মৃত্যু নিশ্চিত- এমন ব্যক্তির কাছ থেকে কিডনি সংগ্রহ করা হবে। তবে জটিল রোগ ব্যধিতে আক্রান্ত, যেমন- ক্যান্সার, উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিকস, হেপাটাইটিসসহ আরও কিছু রোগে আক্রান্তদের কাছ থেকে কিডনি সংগ্রহ করা হবে না। এই কিডনি অন্যের দেহে প্রতিস্থাপন হলে সেই রোগ-ব্যাধিতে আক্রান্ত হবার জোর আশঙ্কা থাকবে।

 

 

 
বর্তমানে দেশে মানবদেহে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সংযোজন আইন- ১৯৯৯ প্রচলিত। এ আইনের কিছু ধারা সংশোধনের কাজ চলছে। এ আইন অনুযায়ী- স্বামী-স্ত্রী, বাবা-মা, ভাই-বোন, চাচা-ফুপু, পরষ্পর পরষ্পরকে কিডনি দিতে পারবেন। তবে দেখা যায়, এর মধ্য থেকে কিডনি দাতা পাওয়া যায় না। রক্তের গ্রুপ মিলে গেলেও কেউ কিডনি দিতে আগ্রহ দেখান না বা রক্তের গ্রুপ মিলে না। আইনে দাতা সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট নিয়ম থাকায় অন্য কারও কাছ থেকে কিডনি নিয়ে প্রতিস্থাপনে সামান্যতম আগ্রহ নেই চিকিৎসকদের। এক্ষেত্রে চিকিৎসকরা রোগীকে বিদেশে গিয়ে কিডনি প্রতিস্থাপনের পরামর্শ দেন। এক্ষেত্রে চিকিৎসা ব্যয় বৃদ্ধি পায়, বেশকিছু পরিবার এই অর্থ যোগাড় করতে করতেই রোগী শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।

 

 

 
সম্প্রতি এ প্রতিবেদক চারজন কিডনি রোগীর সন্ধান পায়। যাদের কিডনি প্রতিস্থাপন বাধ্যতামূলক। ঢাকার একটি হাসপাতালে চিকিৎসকধীন একজন কিডনি রোগীর স্বজন গত বৃহস্পতিবার সকালে এ প্রতিবেদককে বলেন, দেশের আইন অনুযায়ী দাতা পাইনি। যাকে পেয়েছি- সে অনেক অনেক দূরের মানুষ। আত্মীয়তার ছিঁটেফোঁটাও নেই। তাকে ১০ লাখ টাকার বিনিময়ে ঠিক করা হয়েছে। চিকিৎসক বলেই দিয়েছেন- আইনি বাধা থাকায় এই কিডনি সংগ্রহ-প্রতিস্থাপন করা অসম্ভব।

 

 

 
বাকি তিনজনের অবস্থা একই। আরেকজন রোগীর স্কুল শিক্ষক বাবা শুক্রবার রাতে এ প্রতিবেদককে বলেন, দেশের আইন মানতে গেলে ছেলেকে বাঁচাতে পারব না। ডোনার পেয়েছি, টাকা অ্যারেঞ্জ প্রায় শেষের পথে। এরপরই ভারত যাচ্ছি। একটি প্রশ্নে তিনি বলেন, দেশে যে চেষ্টা করিনি তা নয়। দেশে করতে পারলে তো অনেক টাকা বেঁচে যেত। ছেলের কিডনি প্রতিস্থাপনে প্রায় ৩৫ লাখ টাকা যোগাতে হচ্ছে স্কুল শিক্ষক বাবাকে।
এসব ঘটনা শুনে সহযোগি অধ্যাপক ডা. ওয়ালিউল ইসলাম মারুফ এ প্রতিবেদককে বলেন, ব্রেন ডেথ রোগীর কাছ থেকে কিডনি সংগ্রহ করা গেলে এই ধরণের সমস্যা কিছু হলেও কমে আসবে। যে ব্রেন ডেথ রোগীর কাছ থেকে কিডনি সংগ্রহ করা হবে, তার স্বজনদের অনুমতি স্বাপেক্ষেই কিডনি সংগ্রহ করা হবে নতুন আইনটি পাশ হলে। মরোণত্তর চক্ষুদান, দেহদান যেমন ব্রেন ডেথ রোগী থেকে কিডনি সংগ্রহও তেমনই হবে। এটাকে খুব জটিলভাবে ভাবার-দেখার কিছু নেই।

 

 

 

 
আইনটি কবে পাশ হবে বলা যাচ্ছে না। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, আইনের খসড়া প্রস্তুতকারী কমিটি প্রায় দেড় বছর আগে আইনটি জমা দেয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে। এরপর তা এটর্নি জেনারেল হয়ে আবার এসেছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে। এখান থেকে যাবে মন্ত্রী পরিষদ বৈঠকে। এখানে অনুমোদন পেয়ে জাতীয় সংসদের মাধ্যমে আইনটি পাশ হবে। সব মিলিয়ে আরও কমপক্ষে এক-দেড় বছরের মতন সময় লেগে যেতে পারে বলে এ প্রতিবেদককে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা। এতো সময় কেন- প্রশ্নে তিনি এক কথায় বলেন, আমলাতান্ত্রিক জটিলতা।

পাঠকের মতামত

Comments are closed.