178810

চীন কি উত্তর কোরিয়ায় হস্তক্ষেপ করবে?

সুলতানা সাকি: আরেক দফায় পারমানবিক পরীক্ষার ঘোষণা দিয়ে ফের আলোচনায় চলে এসেছে উত্তর কোরিয়া। ২০০৬ সাল থেকে দেশটি পাঁচ দফায় এ ধরনের পরীক্ষা চালালেও ডোনাল্ড ট্রাম্পের নেতৃত্বাধীন যুক্তরাষ্ট্র এবার বাধ সাধবে বলে ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্র ইতোমধ্যে বিমানবাহী রণতরী এ অঞ্চলে পাঠানোর ঘোষণাও দিয়েছে। চীন উত্তর কোরিয়া ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্রের পাশে থাকবে কিনা তাও জানার চেষ্টা করেছেন ট্রাম্প। না হলে একাই ব্যবস্থা নেওয়ার ইঙ্গিতও করেছে। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কোরিয় উপদ্বীপে উত্তেজনা তৈরি হলে চীনও বসে থাকবে না। আর চীন যদি উত্তর কোরিয়ায় হস্তক্ষেপ করেও তবে তা কিম জং উন কে বাচানোর জন্যও হবে না।

উত্তর কোরিয়ার একমাত্র কূটনৈতিক মিত্র রাষ্ট্র হলো চীন। তবে এই মিত্রতার পেছনে তিক্ততা রয়েছে অনেক। ১৯৫০ সালে উত্তর কোরিয়া দক্ষিণ কোরিয়ার ওপর ঝাপিয়ে পড়লে চীনের নব্য কমিউনিস্টপন্থী শাসকরা উত্তরের পাশে দাড়ায়। কোরিয়ায় ৩০ লাখ সেনা পাঠায় এবং তিন বছরের যুুদ্ধে চীনের এক লাখ ৮০ হাজারের মতো সেনা মারা যায়। তবে চীন সেনা পাঠানোর এই সিদ্ধান্ত নিয়েছিল জাতিসংঘের বাহিনীর কাছে উত্তর কোরিয়ার নাস্তানাবুদ হওয়ার পর ও বহুজাতিক বাহিনী চীনের সীমানার কাছাকাছি চলে আসার পর। তবে এটাই কোরিয়ায় চীনা হস্তক্ষেপের প্রথম ঘটনা নয়।

১৫৫২ সালে জাপানের শাসকরা কোরিয়া দখল করে নেয় এবং আগাতে আগাতে চীনের সীমানা পর্যন্ত এগিয়ে আসে। চীনের সেনাবাহিনী সেই দখলদার বাহিনীকে দক্ষিণের দিকে ধাওয়া করে। সেবার পিয়ংইয়ংকে স্বাধীন করে ফেললেও সিউলের ঠিক উত্তরাঞ্চল পর্যন্ত গিয়ে আটকে যায় চীনা বাহিনী। আলোচনার পর জাপানি সেনাবাহিনীর ১৫৯৩ সালে কোরিয়া থেকে পিছু হটলে অচলাবস্থার অবসান ঘটে।

১৫৯৭ সালে জাপান ফের কোরিয়ায় আগ্রাসন চালায়। তবে চীনের সমর্থনে রক্ষা পেয়ে যায় কোরিয়া। পরবর্তী ৩০০ বছর চীনকে ’রক্ষাকর্তা’ ও ’বিশ্বস্ত বন্ধু’ হিসেবেই মর্যাদা দেয় কোরিয়া। পশ্চিমা ও জাপানি উপনিবেশিক শক্তির হাত থেকে বাচতে বারবারই চীনের স্মরণাপন্ন হয় তারা।
১৮৯৪ সালে জাপান ফের কোরিয়ায় হামলা চালালে প্রায় এক বছর চীনের সঙ্গে তাদের যুদ্ধ হয়। যুদ্ধে চীন হেরে যাওয়ায় কোরিয়া পুরোপুরি জাপানের হাতে চলে যায় প্রায় ২৫ বছর জাপানের নিয়ন্ত্রণে থাকে।

১৫৯৩, ১৮৯৪ ও ১৯৫১ সালে চীনের বদান্যতা উত্তর কোরিয়া এখনও মনে রেখেছে। দুই দেশেই কমিউনিস্টপন্থী সরকার থাকায় বন্ধন এতদিন অটুটই ছিল। তবে সম্প্রতি দুই দেশের সম্পর্কে কিছুটা শীতলতার আভাষ পাওয়া গেছে। গত ফেব্রুয়ারিতে চীন উত্তর কোরিয়া থেকে কয়লা আমদানি বন্ধ করে দিয়েছে। অসমর্থিত সূত্রে কয়েকটি আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যম খবর প্রকাশ করেছে, চীন উত্তর কোরিয়ার সীমান্তে প্রায় দেড় লাখ অতিরিক্ত সেনা মোতায়েন করেছে, যদিও চীন এই খবর পুরোপুরিই অস্বীকার করেছে। সম্প্রতি কোনো ব্যাখ্যা ছাড়াই বেইজিং-পিয়ংইয়ং সরাসরি ফ্লাইটও চীন বন্ধ ঘোষণা করেছে।

চীনের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে এরইমধ্যে প্রচুর উত্তর কোরিও অভিবানী রয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, উত্তর কোরিয়ায় পশ্চিমা শক্তির হস্তক্ষেপ ঘটলে চীনের ওই অঞ্চলে উত্তর কোরিও আশ্রয়প্রার্থীর সংখ্যা আরো বাড়বে এবং চীন সেটা স্বাভাবিক ভাবে মেনে নিতে পারবে না। তাই উত্তর কোরিয়া বিষয়ে চীন যদি হস্তক্ষেপ করে তবে তা দেশটির নেতা কিম জং উনকে বাচাতে নয়, বরং এই এলাকার শান্তি বজায় রাখতে এবং দুই কোরিয়ার শান্তিপূর্ণ অবস্থান সমুন্ন রাখতেই করবে বলে বিশেষজ্ঞরা ধারণা করছেন।

পাঠকের মতামত

Comments are closed.