177646

যৌথ বাহিনীর নেতৃত্বে পাকিস্তানের সাবেক সেনাপ্রধান, শিয়া-সুন্নি সংঘাতের আশঙ্কা

নূসরাত জাহান: সৌদি আরব নেতৃত্বাধীন ৩৯ মুসলিম দেশের সেনাবাহিনীর জোটের প্রধান হিসেবে পাকিস্তানের সাবেক সেনাপ্রধান রাহিল শরীফকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। পাকিস্তানসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে জঙ্গি বিরোধী অভিযান চালাবে এ যৌথ বাহিনী। পর্যবেক্ষকদের মতে, শিয়া মুসলিমরাই এ জোট তৈরি করছে। কারণ সিরিয়া, ইরাক ও ইয়েমেনে ইরান সমর্থিত সুন্নি বিদ্রোহীরা লড়াই করছে। মূলত তাদের বিরুদ্ধে লড়াই করেই সৌদি এ সামরিক জোট তৈরি করেছে।

যৌথ বাহিনীর প্রধান হিসেবে রাহিল শরিফকে বেশ আগেই নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এ নিয়ে এতদিন পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয় মুখ খোলেনি। এতদিন পরে তারা জানিয়েছে, পাকিস্তান ও সৌদি আরব জেনারেল রাহিল শরীফের নিয়োগের ব্যাপারে সম্মত হয়েছে।

তবে এ নিয়ে পাকিস্তানে শিয়া-সুন্নি সংঘাত বাড়তে পারে। কারণ পাকিস্তানের মোট মুসলিম জনগোষ্ঠীর ২০ শতাংশ শিয়া সম্প্রদায়ের। কাজেই সেনবাহিনীতে উল্লেযোগ্য সংখ্যক শিয়া সেনা কর্মকর্তা রয়েছে। শিয়া-সুন্নি সেনাদের মধ্যে লড়াইয়ের ইতিহাসও আছে। ১৯৮০ দশকে পাকিস্তানের মাটিতে সৌদি আরব ও ইরানের সেনারা এমনই এক সাম্প্রদায়িক লড়াই করেছিল। এবারও সেই আশঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না।

এ দুই দেশের বিরুদ্ধেই সুন্নি ও শিয়া মিলিশিয়াদের সমর্থন এবং আর্থিক সাহায্য দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। এখনও পাকিস্তান জুড়ে সুন্নি উগ্রপন্থীরা শিয়া সম্প্রদায়ের লোকজনের ওপর হামলা অব্যাহত রেখেছে। দীর্ঘদিন ধরে চলা এ সাম্প্রদায়িক সংঘাত কোনোভাবেই নিয়ন্ত্রনে আনতে পারছে না পাকিস্তান সরকার। সুন্নি হামলার ভয়ে অনেক শিয়া সম্প্রদায়ের লোকজন দেশ ছেড়েছে।
যৌথ বাহিনীতে পাকিস্তানের সাবেক সেনাপ্রধানকে নিয়োগ দেওয়া নিয়ে দেশজুড়ে ব্যাপক সমালোচনাও চলছে। ইমরান খানের তেহরিক-ই-ইনসাফ পার্টি আশঙ্কা প্রকাশ করে জানিয়েছে, এ চুক্তি শিয়া-সুন্নি সম্প্রদায়ের মধ্যে সংঘাত বাড়িয়ে দিতে পারে।

ধারণা করা হচ্ছে, পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরীফ এই পুরো বিষয়টির পরিকল্পনা করেছেন। সৌদি আরবের সঙ্গে নওয়াজের বিশেষ সম্পর্ক রয়েছে। কারণ তিনি সৌদিতে অনেক বছর নির্বাসিত জীবন কাটিয়েছেন। এছাড়া পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর সঙ্গে সৌদি সম্পর্কও খুব ভালো। ১৯৮০ দশক থেকেই পাকিস্তানি সেনাবাহিনী সৌদির সামরিক বাহিনীর প্রশিক্ষণ দিত। এছাড়া সামরিক সরঞ্জামাদি কিনতে সৌদি আরবের কাছ থেকে আর্থিক সহায়তা নিয়েছে। এছাড়া মধ্যপ্রাচ্যে সমস্যা জিইয়ে রাখার জন্য পাকিস্তানের অবদানও কম নয়।
সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাত যৌথভাবে ইয়েমেনে শিয়া বিদ্রোহী হুথিদের দমনে অভিযান চালাচ্ছে। এছাড়া সৌদি সরকার নিজে দেশের সুন্নি বিদ্রোহীদের মদদ দিচ্ছে বলেও অভিযোগ আছে। এছাড়া সিরিয়ার সুন্নি বিদ্রোহীদেরও তারা সমর্থন করছে। ফলে ৩৯ দেশের এ জোট যদি কাজ শুরু করে তবে শিয়া-সুন্নি সংঘাত আসন্ন বলেই মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

সূত্র: বিবিসি।

পাঠকের মতামত

Comments are closed.