আফগান নারী সাঁতারু এলেনার গল্প
নূসরাত জাহান: আফগানিস্তানে ৩০টির মতো সুইমিং পুল রয়েছে। এর মধ্যে মাত্র একটিতে মেয়েরা যাওয়ার সুযোগ পায়। তারও আবার জঙ্গিদের হুমকির কারণে সেখানে যাওয়াই দায় হয়ে যায়। খুব কম মেয়েই আছের যারা ভয়কে জয় করে সাঁতার শিখতে যায়। এদেরই একজন ২৫ বছর বয়সী সাঁতারের প্রশিক্ষক ও ওমেনস সুইমিং কমিটির প্রধান এলেনা সাবোরি। তার নেতৃত্বেই আফগান নারী সাঁতারুদের একটি টিম টোকিওতে অনুষ্ঠেয় অলিম্পিকে দেশের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করবে বলে আশা করা হচ্ছে।]
রক্ষণশীল ও যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশে থেকেই এলেনা সাঁতারের জন্য লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন। এমন একটি দেশে থেকে যেখানে মেয়েদের খেলাধুলায় অংশগ্রহণ করাটা ততটা সহজ নয়, সেখানে সাঁতার শেখা তো আরো কঠিন। তার লড়াইয়ের পথটা ততটা সহজ ছিল না। এলেনার এক বন্ধু প্রথম তাকে সাঁতার শেখানোর জন্য সুইমিং পুলে নিয়ে যায়। এরপর তিনি ইন্টারনেট থেকে ভিডিও ডাউনলোড করে এবং কাবুলের একটি সুইমিং পুলে গিয়ে নিজে নিজে সাঁতারের চর্চা চালিয়ে গেছে।
এলেনা বলেন, ‘প্রথম প্রথম আমি সাঁতার কাটতে ভয় পেতাম। মনে হতো আমি ডুবে যাবো। তবে আমি একদিন অন্যদের সাঁতার শেখাবো এটা ভেবেই সাহস সঞ্চয় করতাম। কারণ ভাবতাম আমি না শিখরে অন্য মেয়েদের কিভাবে শিখাবো।’ অর্থনীতির শিক্ষার্থী এলেনাকে অনেকবারই সুইমিং পুল থেকে দূরে থাকতে বলা জয়েছে। এমনকি তিনি যখন তার দল নিয়ে পুলে সাতার কাটতো তখনও তাদের হুমকি দেওয়া হয়েছে।
তালেবানের প্রতিনিয়ত এলনাকে হত্যার হুমকি দিত। তার মধ্যে থেকেই সাঁতার শেখা এবং শেখানোর কাজ চালিয়ে গেছেন। তিনি বলেন, ‘আমি জানি আমি একটি ট্যাবু ভেঙেই কাজটি করেছি। অনেক বড় ঝুঁকি নিয়েই আমি সাঁতারের দলটি তৈরি করেছি।’ আফগানিস্তানের মতো রক্ষণশীল দেশের বেশিরভাগ নারীরা বোকরা পরে। তাদের মুখ তো দূরের কথা চোখও দেখা যায় না। সেখানে আত্মবিশ্বাস ধরে রেখে এমন একটি কাজ করা সত্যিই ঝুঁকির ও সাহসের । আফগান নারী সাঁতারু টিমের সদস্যদের পোশাক তৈরি করে দিয়েছে ব্রাজিলের একটি কোম্পানি। এর আগ পর্যন্ত সাঁতারের সময় মেয়েরা টাইটস ও লম্বা হাতার কালো লিক্রা। আর মাথায় থাকতো সুইমিং ক্যাপ।
আফগান সুইমিং ফেডারেশনের প্রেসিডেন্ট সৈয়ত ইহসান তাহেরি বলেন, ‘সাঁতারের ক্ষেত্রৈ সবচেয়ে বড় প্রতিবন্ধকতা হলো নিরাপত্তা দেওয়া। ২০২০ সালে টোকিওতে অনুষ্ঠেয় অলিম্পিক গেমে দুজন পুরুষ ও একজন নারী সাঁতারুর একটি দল পাঠানোই আমাদের লক্ষ্য। আর এ নারীই হবে আফনিস্তানের প্রথম নারী সাঁতারু।’
সূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া।