175604

বিপদজনক ভাই, মুহূর্তেই সর্বশান্ত

সৌদি আরব প্রবাসী রুবিনা। দেশে রেখে যাওয়া অসুস্থ বাচ্চার অপারেশন করাতে বৃহস্পতিবার সকাল ঢাকায় আসেন। শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে বের হয়ে পার্কিং এরিয়ায় ঢুকতেই দেখা পেলেন তথাকথিত এক ভাইয়ের। অনেকদিন পর দেশে ফিরে এমন ভাই তথা মানুষের দেখে পেয়ে স্বস্তিবোধ করেন রুবিনা। তবে তার সেই স্বস্তি বেশিক্ষণ থাকেনি!
রুবিনার সঙ্গে সাক্ষাত হওয়ার পর কুশল বিনিময় করে তাজুল নামে ওই প্রতারক বলে-
‘‘-বইন কই যাবা?
– জয়পুরহাট।
– আরে কও কী বইন! আমার বাড়ি দিনাজপুরের হিলি! আমিও ওই দিক যামু।
– এয়ারপোর্টে কেন আসছেন?
– একমাত্র বইনকে এট্টু আগে দুবাইতে পাঠাইয়া দিলাম। পরানডা ছিঁড়া যাইতাছে বইন।’’
কাছাকাছি এলাকার অপরিচিত তাজুলকে পেয়ে রুবিনা মনে জোর পেলেন। একসঙ্গে বাসে উঠে গাবতলীর উদ্দেশ্যে রওয়ানা হলেন। পথিমধ্যে ভাই-বোন অনেক সুখ-দুঃখের গল্পও করলেন। স্বামীর সাথে ডিভোর্স, একমাত্র বাচ্চার মায়া ছেড়ে বাচ্চার ভবিষ্যত গড়তেই বিদেশ গমন, আরও কতকি!
ফার্মগেটে বাস পরিবর্তন। রুবিনার ক্ষুধা পেয়েছে। ভাই তাজুল চট করে পাউরুটি আর পানি কিনে নিয়ে আসলেন। রুবিনা টাকা দিতে চাইলে তাজুল দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললেন, তুমি সত্যই আমার বোন হলে আজ এমন করে টাকা দিতে চাইতে না। আসলে পর কখনো আপন হয় না
বাস গাবতলীর পথে। রুবিনা পাউরুটি খেয়ে বোতলের মুখে পানি খেতে গিয়ে একটু পানি মুখ বেয়ে পড়ছিল। ভাই তাজুল নিজের রুমাল বের করে সযত্নে পানি মুছে দিলেন।
রুবিনা বুঝতে পারছে, রুমালের ছোঁয়ায় তার সেন্স কমে আসছে, চোখ বন্ধ হয়ে আসছে। ভাই সাহেব রুবিনার ভ্যানিটি ব্যাগ খুলে সবগুলো টাকা পকেটে ঢুকাচ্ছেন। রুবিনা চেয়ে চেয়ে দেখছেন, কিন্তু কিছুই বলতে পারছেন না। রুমালের জাদুতে হ্যাং হয়ে স্ট্যাচু বনে গেছেন।
তাজুল টাকা মোবাইলসহ দামী জিনিষপত্র নিয়ে ভাইয়ের আদরে রুবিনার মাথায় হাত বুলিয়ে নেমে পড়লেন। মিনিট পাঁচেক পর রুবিনার হাতমুখ সচল হলেও কান্না ছাড়া কোনও গতি নেই।
বাচ্চার হার্নিয়ার অপারেশন করতে আনা সবগুলো টাকা উধাও। বাস ভাড়া দেয়ার টাকাও নেই। পাশের এক ভদ্রলোক এক`শ টাকা দিয়ে সাহায্য করলেন।
রুবিনা ঘুরে দাঁড়ালেন। বাস থেকে নেমে ভ্যানিটি ব্যাগ ঘেটে ঢাকায় শম্পার বাসার ঠিকানা লেখা কাগজটা বের করলেন। শম্পা তার সাথে সৌদিতে কাজ করে। সাত আট দিন আগে দেশে আসছে।
শম্পার বাসা থেকে রুবিনা পরপর তিনদিন এয়ারপোর্ট এলাকায় চিরুনি অভিযানে আসেন। চতুর্থ দিন তিনি সফল, ভাই তাজুল তার চোখ এড়াতে পারেননি।
ঠিক একই জায়গায় তাজুল আরেক বিদেশ ফেরত পুরুষ যাত্রীকে বলছিলেন, একটু আগে ছোট ভাইটারে বিদেশ পাঠাইলাম 🙁 পরানডা..”
`পরানডা ছিঁড়ার` আগেই বাঘিনীর মতো ক্ষীপ্র বেগে রুবিনা তার কলার ধরে উত্তম মধ্যম দেয়া শুরু করেন এবং এপিবিএনে সোপর্দ করেন।

পাঠকের মতামত

Comments are closed.