মজুরি চাওয়াই কাল হলো হাসিনা বেগমের
নূসরাত জাহান: একটু ভালো থাকবেন, পরিবারের সবাইকে আরাম-আয়েশে রাখতে পারবেন এই আশায় সৌদি আরবে পাড়ি জমিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু সেই স্বপ্ন যে দুঃস্বপ্নে পরিণত হবে তা তিনি ভাবতেই পারেননি। কাজের জন্য মজুরির চাওয়ায় নিয়োগকর্তা তাকে চারতলা থেকে ফেলে পা ভেঙে দিয়েছে। পা ভাঙার সেই যন্ত্রণা নিয়ে হাসপাতালের বিছানায় কাতরাচ্ছেন ভারতের হায়দরাবাদের হাসিনা বেগম।
সৌদি আরবে কাজ করতে গিয়ে এমনই দুঃসহ অভিজ্ঞতা হয়েছে হাসিনার। কাজের বদলে মাস মাইনে চাওয়ায় গৃহকর্তা তাকে চারতলা থেকে ধাক্কা মেরে ফেলে দেয়। এতে তার দুই পা-ই ভেঙে যায়। এখন তার সৌদির একটি হাসপাতালে দিন কাটছে। নিজের অসহায়তার কথা জানিয়ে ভারত সরকারের কাছে সাহায্যের আবেদনও করেছেন হাসিনা।
গত বছর অক্টোবরে কাজ নিয়ে সৌদি আরব গিয়েছিলেন হাসিনা। মাস দু’য়েক সৌদির দাম্মামে কাজ করলেও জোটেনি কোনও মজুরি। এর বদলে দিনের পর দিন হেনস্থা হতে হয়েছে তাকে।
হাসিনার ছেলে ওয়াজিদ জানিয়েছেন, ‘সংসারে একটু গতি ফিরিয়ে আনতে সৌদি গিয়েছিল মা। গৃহকর্মীর কাজের মাসে ১৬০০ রিয়াল দেওয়ার কথা ছির। তবে নিয়োগকর্তা তাকে এক রিয়ালও দেননি। বরং মাইনে চাওয়ায় মাকে ধাকা মেরে ফেলে দেওয়া হয়েছে।’
মাইনে ছাড়া মাস দুয়েক কাটানোর পর পুরো বিষয়টি জানিয়ে স্থানীয় প্রশাসনের কাছে অভিযোগ করেছেন হাসিনা। এরপর তার নিয়োগকর্তাকে ডেকে পাঠায় কর্মকর্তারা। এরপর কিছু সই রেখে তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়। বাড়ি ফিরতেই অন্যরূপ নিয়োগকর্তার।
হাসিনার বলেন, ‘মাইনে চাওয়াতে চারতলা থেকে আমাকে ধাক্কা মেরে ফেলে দেন নিয়োগকর্তা। খুন করতেই আমাকে ধাক্কা দেওয়া হয়েছিল।’
দুই পা ভাঙা ৪৬ বছরের হাসিনা সৌদির হাসপাতালে বসেই একই ভিডিও সোস্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করেন। এরপরই তা ভাইরাল হয়ে যায়।
ভিডিওটা ভারতের তেলঙ্গানার রাজনৈতিক নেতা আমজাদউল্লা খানের নজরে আসে। হাসিনার পরিবারও তার ওই নেতার সঙ্গে যোগাযোগ করেন। পুরো বিষয় জানার পর পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজকে লক্ষ্য করে আমজাদউল্লা টুইট করেন। তিনি অনুরোধ করেন, সৌদিতে ভারতীয় দূতাবাসের মাধ্যমে এই ঘটনার তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় যেন হাসিনাকে দেশে ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা করে। এছাড়া হত্যার চেষ্টার অভিযোগও যাতে ওই নিয়োগকর্তার বিরুদ্ধে সৌদি সরকার ব্যবস্থা নেয় তার দাবিও করেন।
সুষমা স্বরাজ বিষয়টি জানা পর রিয়াদে অবস্থিত ভারতীয় দূতাবাসকে এ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেয়। এ নির্দেশের পর দাম্মামের প্রোটেক্টর জেনারেল অব ইমিগ্রান্টস অবশ্য জানিয়েছেন, অভিবাসন দফতরের বৈধ অনুমতি ছাড়াই সম্ভবত সৌদিতে কাজ করা শুরু করেছিলেন হাসিনা। তবে তাকে দেশে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করছে ভারত। সূত্র: সিয়াসাত ডেইলি।