175050

সাম্প্রদায়িক বিষবাষ্প ছড়াচ্ছে বাঁশেরকেল্লা ও শিবির

অনির্বাণ বড়ুয়া: দোল পূর্নিমা বা হলি উৎসবে রঙ খেলাকে কেন্ত্র করে এক ভয়াবহ সাম্প্রদায়িক উস্কানি চলছে অনলাইনে। এতে পূর্ন ক্ষমতা নিয়ে অপপ্রচার চালাচ্ছে বাঁশেরকেল্লা, শিবিরসহ ফেসবুকে সাম্প্রদায়িকতা ছড়ানো অনেক গ্রুপ ও পেইজ। বিতর্কে শুরু জামায়াতপন্থী বুদ্ধিজীবী অ্যাডভোকেট ড. তুহিন মালিকের একটি ফেসবুজ পোস্টকে কেন্ত্র করে। গতকাল তার দেওয়া একটি স্ট্যাটাসের স্ক্রিনশট ফেসবুকে ঘুরছে। যদিও তার ফেসবুক পাতায় গিয়ে সেটি দেখা যায়নি।

একটি টেলিভিশন চ্যানেলের করা হলি উৎসবে নারী লাঞ্ছনার ওপর একটি প্রতিবেদনের পর তুহিন মালিক সেই প্রতিবেদন থেকে কয়েকটি ছবি নিয়ে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেন, “মুসলিম হিজাবী মা-বোনদের উপর প্রকাশ্য রাজপথে জোরপূর্বক হোলির রঙ মাখানো কোন ধরনের অসাম্প্রদায়িক চেতনার বহিঃপ্রকাশ ?”

এরপরই লাখ লাখ ফলোয়ারের তুহিন মালিকের পাতা থেকে বিষয়টি ভাইরাল হয়ে যায় ফেসবুকে। ছাত্রশিবিরের গ্রুপগুলোতে ও ধর্মভিত্তিক পাতাগুলোতে চলছে এটি নিয়ে ব্যাপক অপপ্রচার। যার বেশিতভাগই সাম্প্রদায়িক উস্কারনিমূলক। তবে ওই ভিডিওর জের ধরে তিন তরুণকে গ্রেফতার করে পুলিশ। যাদের সবাই মুসলিম বলে প্রতীয়মান হলেও এসব গ্রুপ ও পেইযে অপপ্রচার সিকি ভাগও থামেনি। বরং বাঁশেরকেল্লায় এখন হলি উৎসব নিয়েই অপপ্রচার চালিয়ে যাচ্ছে।

এতে ক্ষুব্ধ হয়েছে সনাতন ধর্মাবলম্বীরা। তারা তুহিন মালিকের শাস্তির দাবি করেন।

তাপস সান্তাল নামে একজন লিখেছেন, “হোলি উতসবে ড.তুহিন মালিক নাকি কিছু জামাত আর বিএনপির ছেলেদেরকে হিন্দু সাজিয়ে পাঠিয়েছিল হিন্দু ছেলেমেয়েদের সাথে এক হয়ে মুসলিম ধর্মাম্বলিদের গায়ে রঙ ছিটিয়ে একটি সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা সৃষ্টি করার জন্য? ইতিমধ্যে ৩ জনকে নাকি পুলিশ গ্রেফতার করেছে? মিথ্যা নাটক সাজিয়ে সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা তৈরি করার জন্য ড.তুহিন মালিককে সরকার গ্রেফতার করে না কেন?”

কাজটি মুসিলিমদের দ্বারাই সংগঠিত জেনেও বাংলাদেশ ইসলামি ছাত্রশিবির নামে একুশ হাজারেরও বেশি ফেসবুকারের একটি গ্রুপে গতকাল থেকে একের পর এক পোস্ট যাচ্ছে এই গ্রুপে। যার প্রতিটির ভাষা পরিষ্কার সম্প্রদায়িক হামলায় উস্কানিমূলক।

এদিকে, কেউ কেউ বলছেন যদি কোনও ছেলে কোনও হিজাবি মেয়ের দিকে রঙ ছুঁড়েও মারে তাতে কী এমন অপরাধ হলো? কেন এটি নিছকই একটি টিজিং অপরাধ না থেকে ধর্মীয় অপরাধে পরিণত হয়েছে?

এদিকে দাবি উঠেছে যাদের গ্রেফতার করা হয়েছে তাদের যেন তুহিন মালিকের সঙ্গে সম্পর্ক তদন্ত করে দেখা হয়। আবদুল্লাহ হারুন জুয়েল নামে একজন লিখেছেন, “হোলির রঙ দেয়ার প্রকৃত ঘটনা জানা গেল – অভিযুক্ত তিনজন মুসলিম, তাদের নাম: মামুন, আকাশ এবং সিফাত। এদের সাথে তুহিন মালিকের প্রত‍্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে সম্পর্ক রয়েছে কিনা তা তদন্ত করে দেখা উচিত।”

তুহিন মালিক অতীতেও অনেক সাম্প্রদায়িক কথা বলেছেন বলে জানা গেছে ফেসবুকে। অভি সুব্রত নামে একজন ফেসবুকার তার বিষয়ে বিস্তারিত লিখেন, “তুহিন মালিক একসময় ঢাকা সিটির মেয়র হবার স্বপ্ন দেখতেন। উনার রাজনৈতিক উচ্চাভিলাষ বেড়ে যায় ১/১১ সরকারের সময়। ১/১১ সরকার চলে গেলে উনি দুই দলের সাথে ব্যালেন্স করে কথাবার্তা বলা শুরু করেন। ধারণা করা যায় উনি আওয়ামীলীগ থেকে সাড়া না পেয়ে একসময় বিএনপি-জামাতের দিকে ঝুকে পড়েন। চেষ্টা চালান বিএনপি-জামাতের পক্ষে দাঁড়িয়ে সরকার ফেলে দেয়ার। স্বপ্ন ছিলো এতে উনি বড় কোন পদ পাবেন। সাথে নগরপিতা হবার স্বপ্ন পূরণ। কিন্তু কোনকিছুতেই কিছু করতে না পেরে উনি এখন পুরোপুরি ধর্মের রক্ষক।”

তিনি আরও লিখেন, “বিশ্ব ইজতেমাকে পিকনিক বললেও সে ইসলামের খেদমতখারী! উনি ভালোই জানেন এবং বুঝেন এন্টি আওয়ামীলীগ রাজনীতিতে নিজে ধর্মকে কিভাবে ধর্ষণের হাতিয়ার করা যায়। সবচেয়ে কম মেধার এই ধর্ম রাজনীতি সামনে আরো মহামারী আকার ধারণ করবে বলে মনে হচ্ছে। যে আওয়ামীলীগকে মানুষ রাজনীতির দল হিসেবে জানতো তারাও আজ ধর্মীয় রাজনীতির প্রতিযোগিতায়।”

পাঠকের মতামত

Comments are closed.