174470

কিম জং উনের জীবনের না জানা কাহানী!

কিম জং উন

ডেস্ক রিপোর্ট : এইতো ক’দিন আগেও বিশ্বের কাছে অনেকটা অচেনাই ছিলেন মাত্র ২৭ বছর বয়সে দায়িত্ব নেয়া উত্তর কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট কিম জং উন। কিন্তু উত্তর কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট হিসেবে শাসনভার হাতে নেয়ার পরই তিনি পুরো বিশ্বের কাছে হয়ে উঠেন অসীম আগ্রহের অন্যতম কারণ। বলা বাহুল্য, চুলের বিচিত্র ধরনের স্টাইলের প্রচলনসহ পোশাকে নিরবচ্ছিন্ন ভিন্নতা ও অদ্ভুত সব নিয়মকানুনের প্রচলনকারী, শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে শুদ্ধি অভিযান, আর কথায় কথায় মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করে উত্তর কোরিয়ার কিম জং উন বিশ্ব গণমাধ্যমে হয়ে উঠেছেন এক অদ্ভুত চরিত্রের নেতা।

 

বিলাসিতার ব্যাপারে কিম জং উন একেবারেই সিদ্ধহস্ত, বাহারী সিগারেট, প্রাইভেট জেট এবং সুস্বাদু ক্যাভিয়ার – উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উনের অভাব নেই কিছুরই। আর তিনি যখন এই বিলাসবহুল জীবন উপভোগ করছেন তখন শুধু ধড়ে প্রাণ পাখিটাকে আটকে রাখতে নজিরবিহীন সংগ্রাম করতে হচ্ছে উত্তর কোরীয়দের। অদ্ভুত এ শাসকের অদ্ভুত বিলাসীতা নিয়েই আমাদের আজকের এ সংকলন।

 

বিদেশ থেকে নিয়ে আসা দামি মদ

 

 

 

 

দেশে তৈরি মদ একাধারে সস্তা এবং সুলভ হলেও তা মুখে রোচে না উনের। নেতা এবং তার অভিজাত নিকটজনদের জন্য মদ আমদানি করতে বছরে ৩০ মিলিয়ন ডলারের বেশি ব্যয় হয় উত্তর কোরিয়ার কোষাগার থেকে। উনের পছন্দের অ্যালকোহল হুইস্কি এবং কোগন্যাক, তবে তা যেনতেন ব্র্যান্ডের হলে চলবে না। হেনেসির মতো দামী ব্র্যান্ডই চাই তার যেগুলোর প্রতি বোতলের দাম ২ হাজার ডলারেরও বেশি।

 

 


বিদেশ থেকে নিয়ে আসা খাবার-দাবার

 

খাবার-দাবারের বেলায় কোরীয় নেতা কিমের যেন মোঘলাই রুচি। ডেনমার্কের থেকে মানসম্মত পোর্ক, ইরান থেকে ক্যাভিয়ার, চীনা তরমুজ, আর গোমাংস থেকে তৈরি জাপানের অত্যন্ত সুস্বাদু ‘কোবে’ না হলে তার চলে না। কিম এবং তার কাছের লোকদের খাবার-দাবারে বছরে কত খরচ হয়, তা নির্দিষ্ট করে না জানা গেলেও অঙ্কটা মিলিয়নের ঘর ছাড়াবে নিঃসন্দেহে।

 

উত্তর কোরিয়ার সাধারণ জনগণের পরিস্থিতি কিন্তু পুরো উলটো। সরকারের পক্ষ থেকে আসা নামমাত্র রেশনের ওপর নির্ভরশীল বেশিরভাগ মানুষ। ২০১৫ সালের আগস্টের এক হিসাব অনুযায়ী, খাদ্য হিসাবে প্রতি সাধারণ উত্তর কোরীয় নাগরিকের জন্য দৈনিক বরাদ্দ ২৫০ গ্রাম শস্যদানা মাত্র। প্রোটিন এবং শুকনো মাছ বা স্কুইডের মতো খাবার অত্যন্ত দুর্লভ। জনগণের প্রায় অধিকাংশই ভয়ানক অপুষ্টির শিকার।

 

বাহারি সিগারেট

 

হাতে বিলিয়ন ডলার থাকলে নিশ্চয়ই রাস্তার পাশের সস্তা সিগারেট ফুঁকতে মন চাইবে না আপনার। কিমেরও তাই। বাহারি ফ্রেঞ্চ সিগারেটের পেছনে বিস্তর খরচ করেন তিনি। ফরাসি কোম্পানি দ্য ইয়েভস সেইন্ট লরেন্ট এর বানানো সিগারেটই তার পছন্দ, যার প্রতি পিসের দাম ৪৪ ডলার করে। আর এই সিগারেট বহনের জন্য যেই চামড়ায় তৈরি ব্যাগ, তার দাম ১৪৪ ডলার।

 

পছন্দসই বানানো ইয়াট

 

 

 

সমুদ্রের বুকে উদ্দাম গতিতে ঘুরে বেড়ানোর জন্য একটা ইয়াট থাকা আমাদের অনেকের কাছে ঘোড়ারোগ বৈ আর কিছু নয়। কিন্তু কিম কি আর আমাদের দলে পড়েন! প্রায় ৮ মিলিয়ন ডলার মূল্যের নিজস্ব ইয়াট নিয়ে সমুদ্রে দাপিয়ে বেড়ান তিনি। ডেনিস রডহ্যাম নামের আমেরিকান যে বাস্কেটবল খেলোয়াড়ের সাথে তিনি বন্ধুত্ব পাতিয়েছেন তিনি, তার বর্ণনামতে, ডিজনি বোট আর ফেরির একটি মিশেল এই ইয়াট।

 

নেতার যখন এই বিলাসব্যসন, তখন সাধারণ নাগরিকদের নেই একটি ব্যক্তিগত মুঠোফোন ব্যবহারের অধিকার নেই। পাবলিক ল্যান্ডফোনের মাধ্যমে যোগাযোগের সামান্য সুযোগ থাকলেও বেশিরিভাগ সময়েই সেই ফোনালাপে কঠোরভাবে নজরদারি করে প্রশাসন।

 

 

 

স্ত্রীর জন্য দামি সব উপহার

 

 

২০০৯ সালে রি সোন-জুনকে বিয়ে করেন উন। এরপর থেকেই রাষ্ট্রীয় কোষাগারের অর্থে একের পর এক উপহার কিনে দিয়ে যাচ্ছেন তিনি। ক্রিশ্চিয়ান ডিওরের যে হাতব্যাগ মিসেস উন ব্যবহার করছেন, তার মূল্য স্থানীয় শপিং সেন্টারে ১ হাজার ৪৫৭ ডলার। এই দাম একজন উত্তর কোরীয়র বাৎসরিক আয়ের সমান, যা ১৮০০ ডলারের বেশি না।

 

নিজস্ব সিনেমা

 

 

 

 

সোফা আর টিভি স্ক্রিন নয়, কিম জং উনের সিনেমা দেখার জন্য আছে ১ হাজার আসন বিশিষ্ট আলাদা একটা বিলাসবহুল সিনেমা হলই। আর এর পেছনে ব্যয় হয় কয়েক হাজার ডলার। একদিকে প্রেসিডেন্টের বিলাসবহুল সিনেমা, অন্যদিকে কেবল বেঁচে থাকার জন্য উত্তর কোরীয়দের প্রাণান্ত চেষ্টা। প্রতিদিনকার পেশার বাইরে কারখানায় বা কোনো বিক্রয় কেন্দ্রে কাজ করার জন্য সরকারি অফিসারদের দিতে হয় ঘুষ। এতো পরিশ্রম আর ঘুষ দেয়ার পরেও মাসে আয় ১০ থেকে সর্বোচ্চ ৪০ ডলারের বেশি ওঠে না।

 

স্কি রিসোর্ট

 

 

 

 

৩৫ মিলিয়ন ডলার খরচ করে মাসিক ক্রিয়ং স্কি রিসোর্ট তৈরি করা হয়। প্রাথমিকভাবে এর উদ্দেশ্য ছিলো, উত্তর কোরিয়ার পর্যটনে নতুন হাওয়া আনা। তবে স্কি করাটা যে কিমের প্রিয় খেলার একটা সেটাও বেশ বড় ভূমিকা রেখেছে। ডেইলি মেইলের তথ্যমতে, কিম নিজেও এই স্কি রিসোর্টকে নিখুঁত বলে গর্ব করেন। এই স্কি রিসোর্ট খোলা রাখার জন্য উত্তর কোরিয়া নির্ভর করে নিষ্ঠুর শিশু শ্রমের ওপর, প্রচণ্ড ঠাণ্ডায় কাজ করা এই শিশুদের মধ্যে ১১ থেকে ১২ বছরের অনেকেই রয়েছে।

 

 

 

 

কিম জং উন কোথায় থাকেন এর কোনো সুনির্দিষ্ট জবাব দেয়াটা কষ্টকর। কারণ পুরো দেশজুড়ে তার ১৭টা প্রাসাদ তো আছেই, আছে একটা নিজস্ব দ্বীপও। আর বাদবাকি জনসংখ্যার প্রায় সবার বাস ভগ্নদশায় থাকা বাড়িতে, যেগুলোতে হিটিং ব্যবস্থা বা পানির সরবরাহই নেই। পানি সংগ্রহ করতে যেতে হয় অনেক দূরের জলাধারে, আর ঘর গরম করতে কাঠ কেটে আনা ছাড়া উপায় নাই।

 

 

 

 


মিলিয়ন ডলারের ঘড়ি

ব্রিটিশ দৈনিক দ্য টেলিগ্রাফের তথ্য অনুযায়ী, কিম জং উনের ব্যক্তিগত ঘড়ির সংগ্রহের যে মোট দাম, তা প্রায় ৮.২ মিলিয়ন ডলার।

 

উচ্চপদস্থদের জন্য দামী উপহার

 

 

 

 

শুধুমাত্র স্ত্রীই নয়, দেশের উচ্চপদস্থদের অনেকেই বেশ দামী উপহার পেয়ে থাকেন নেতার কাছ থেকে। ২০১০ সালে এমন ১৬০ জন কর্মকর্তা মার্সিডিজ বেন্‌জ গাড়ি উপহার পান, যার মূল্যমান ১১.৭ মিলিয়নের কাছাকাছি।

 

দেশের নাগরিকদের মধ্যে ‘বেসিক’, ‘কমপ্লেক্স’ এবং ‘হোসটাইল’ এই তিনটি স্তর রয়েছে, যাদের দেশের রাজধানীতে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। এই ‘অচ্ছ্যুৎ’ জনগণ পান না রাষ্ট্রীয় রেশনের কোনো বাড়তি সুবিধা অথবা মুঠোফোন ব্যবহারের অনুমতি।

 

সশস্ত্র মার্সিডিজ

 

 

 

দেশের জনরোষ থেকে বাঁচতেই হয়ত অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত মার্সিডিজে চড়ে রাষ্ট্রীয় সফরে যান কিম। এস৬০০ মডেলের এই গাড়ির মূল্যমান ১.৭ মিলিয়ন ডলার।

 

প্রাইভেট রানওয়ে

 

 

 

নিজস্ব জেট তো আছেই, আরো বিলাসের নির্দশন তৈরি করতে কিম বানিয়ে নিয়েছেন নিজের জন্য আলাদা রানওয়েই। তার প্রায় প্রতিটি প্রাসাদের পাশেই নিজস্ব রানওয়ের ব্যবস্থা আছে। অন্যদিকে রাজধানীর বাইরে যেসব উত্তর কোরীয়র বাস, তাদের অনেকেরই কোনো মোটরযানে চড়ার কোনো সুযোগ নেই। বাইসাইকেল এবং ঘোড়ায় টানা গাড়িই তাদের ভরসা।

 


নিজস্ব গলফ কোর্স

 

 

 

গলফ খেলার প্রতি তার পিতা কিম জং ইলের যে আকর্ষণ ছিলো, তা থেকে সরে আসেননি কিম জং উন। বর্তমানে নেতার এই শখ পূরণে উত্তর কোরিয়ার রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে বছরে ৫ লাখ ডলার ব্যয় হয়।

 

গলফের সাথে আরো যুক্ত আছে ঘোড়দৌড়ে কিম জং উনের দুর্দম আকর্ষণ। তাই রাষ্ট্রের কোষাগার থেকে উন্নত জাতের ঘোড়া উৎপাদন ও তত্ত্বাবধানের খরচ বহন করা হয়।

 

তবে বাস্তবতা হলো, এসব খেলা এবং অন্যান্য খেয়ালের মজার সময় নেই সাধারণ উত্তর কোরীয়দের। দু’বেলা খাবার আর শীত থেকে বাঁচার জ্বালানি কাঠ যোগানোই তাদের ব্যস্ত করে রাখে গোটা জীবন।

পাঠকের মতামত

Comments are closed.