174053

৩৫-৪০ হাজার রুপিতে শিশু বিক্রি করতো ওরা

নূরসরাত জাহান: বছর সাতেক আগেও কোনো রকমে সংসার চলতো শ্যামল বৈদ্য ও সাবিত্রির। ভাঙাড়ির ব্যবসা করতেন শ্যামল। আর নার্সিংহোমে আয়ার কাজ করতেন সাবিত্রি। দুজনের আয়ে টেনেটুনে সংসার চলতো। হঠাৎ করেই তাদের অবস্থা ফেরে। কিন্তু কেউ জানতো কিভাবে শ্যামল-সাবিত্রির দিন ফিরলো। সম্প্রতি পুলিশের হাতে ধরা পড়েনে এই দম্পতি। জানা গেলে শিশু পাচার চক্রের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছিলেন তারা। এ কাজ করেই তারা দিন ফিরিয়েছিলেন। তবে শুধু এই দুজনিই নয়, এ কাজের সঙ্গে জড়িয়ে আছে বেশ কিছু নার্সিং হোমও।
পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা পুলিশের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, শ্যামল-সাবিত্রি গত ৬-৭ বছর ধরে ওড়িশা, ঝাড়খণ্ডের মতো বিভিন্ন রাজ্য থেকে অন্তত ১৫টি শিশু পাচার করেছে। দেখতে ‘সুন্দর’ শিশু বিক্রি করতে তারা ৩৫-৪০ হাজার রুপি পর্যন্ত নিয়েছেন। নার্সিংহোমে আয়ার কাজ করার সময়ই সাবিত্রি শিশু পাচার চক্রের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন।
তারা জানিয়েছেন, ২০১১ সালের পর থেকেই শ্যামল-সাবিত্রি শিশু পাচারে জড়িয়ে পড়ে। তাদের সঙ্গে কলকাতার বিভিন্ন জেলায় কয়েকটি নার্সিংহোম এবং হোমের যোগাযোগ ছিল। সেখান থেকেই তারা সদ্য জন্ম নেওয়া শিশু সংগ্রহ করত। এরপর সেসব শিশুগুলোকে পরিচিত নার্সিংহোমে রেখে দিত। পরে সুযোগ-সুবিধা মতো দরদাম ঠিক করে বিক্রি করে দিত। তারা সবনিনম্ন ১০ হাজার রুপিতে বাচ্চা করত।
শিশু পাচারের সঙ্গে জড়িত অভিযোগে দক্ষিণ ২৪ পরগনার জীবনদীপ নার্সিংহোমের মালিক হরিসাধন ও তার ছেলে প্রবীরকে গ্রেফতার করেছিল পুলিশ। তাদের কাছ থেকেই শ্যামল-সাবিত্রির খবর পাওয়া যায়।
শ্যামল-সাবিত্রি কাছ থেকে তথ্য নিয়ে শিশু পাচার চক্রের জাল কতদূর পর্যন্ত বিস্তৃত তা জানা চেষ্টা করছে পুলিশ। তাদের ধারণা, প্রবীর ও শ্যামলকে মুখোমুখি করে জিজ্ঞাসাবাদ করলেই গুরুত্বপূর্ণ আরো কিছু তথ্য পাওয়া যাবে।
পুলিশের দাবি, শ্যামল-সাবিত্রির বাড়ি বাংলাদেশে। বেশ কয়েক বছর আগে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে তারা বনগাঁয় এসে আস্তানা গাড়ে। শিশু পাচার চক্রে জড়িয়ে পড়ার পর তারা ধীরে ধীরে বনগাঁ থেকে কলকাতার বেহালা ও ফলতার ফতেপুর বাস মোড়ে তিনটি বাড়ি করে। এছাড়াও তাদের আরও কয়েকটি বাড়ি রয়েছে। তারা বেশিদিন এক জায়গায় থাকতো না। দ্রুত জায়গা বদল করত। এমনকি প্রতিবেশীদের সঙ্গে সেভাবে কথাও বলতো না। তাই তাদের ব্যাপারে প্রতিবেশীরা খুব বেশি তথ্য দিতে পারেনি।
গত বছরের শেষ দিকে উত্তর ২৪ পরগনার তিনটি শিশু উদ্ধার করে পুলিশ। এরপরই পুলিশ তদন্ত শুরু করে জীবনদীপ নার্সিংহোমের সন্ধান পায়। সেখান থেকেই শ্যামল-সাবিত্রির নাম জানা যায়। এ কাজে আর কোন কোন নার্সিংহোমের সঙ্গে ওই দম্পতির যোগ রয়েছে তা খতিয়ে দেখছে পুলিশ। সূত্র: হিন্দুস্তান টাইমস।

পাঠকের মতামত

Comments are closed.